আমাদের চার্টার্ড একাউন্টেন্টরা বিশ্বমানের

 চার্টার্ড একাউন্টেন্সি
দেওয়ান নুরুল ইসলাম: আইসিএবি’র সার্বিক কার্যক্রম এবং আমাদের সার্বিক পরিকল্পনা সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, দুই তিনটা প্রধান উদ্দেশ্য আছে আমাদের। এর মধ্যে মেজর হলো, সিএ প্রফেশনকে রেগুলেট করা। আমাদের দুটো প্রধান কাজ করতে হয়, একটা হলো প্র্যাকটিস, মানে সিএ ফার্মের মাধ্যমে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টকে অডিট করে সার্টিফাই করা। আরেকটা হলো, সিএ ইন সার্ভিস। যারা দেশে বিদেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদের নিয়ে। আমাদের ১৮০০ সদস্যের মধ্যে ৩০০ জন প্র্যাকটিসে আছেন। আর বাকি তিন ভাগের মধ্যে দুই ভাগ আছেন সার্ভিসে। বর্তমানে যারা আমাদের সদস্য, তারা ভবিষ্যতের সিএ’দের প্রশিক্ষিত করে তুলছেন। সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংগঠনের একজন যোগ্য সদস্য হিসেবে নিয়ে আসছেন। নতুন সদস্যদের ধারাবাহিক উন্নতিতে সহায়তা প্রদান করাই হলো এ সংগঠনের কাজ। সার্ভিসে থাকে বা প্র্যাকটিসে থাকা সদস্যদের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, গোলটেবিল, ট্রেনিং প্রোগ্রাম নিয়মিতভাবে করে যাচ্ছি। এই পরিবর্তনশীল সময়ে এটা আমাদের প্রত্যেক সদস্যের জন্য খুবই প্রয়োজন। আমাদের নীতি ও স্বাধীনতা বজায় রেখে আমাদের আসল লক্ষ্য, এজেন্ডাকে ধারণ করি এটাই আমাদের মূল ফোকাস। আমরা একাউন্টিং পজিশনকে রেগুলেট করি, আমরা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখি, সরকারের বিভিন্ন এজেন্ডাকে আমরা সহায়ক হিসেবে বাস্তবায়নে সহায়তা করি।

সংগঠনের সদস্য হতে গেলে কী কী যোগ্যতা থাকতে হয়?
আমরা যেভাবে একজন চার্টার্ড একাউন্টেন্টকে প্রস্তত করি তারা হন সত্যিকার অর্থেই বিশ্বমানের। এর সঠিক মাধ্যম হলো শিক্ষা ও পরীক্ষা প্রক্রিয়া। জেনে খুশি কথা, আমাদের এখান থেকে একজন সিএ পাশ করে কিছুদিন প্র্যাকটিস করার পর কোনও ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ইন ইংল্যান্ডের মেম্বার হয়ে যাবে সরাসরি। আমাদের এখানে যে সিলেবাস পড়ানো হয়, যে পরীক্ষা হয় এর সবগুলোই বিশ^মানের। এজন্য বিশে^র সবগুলো প্রতিষ্ঠান একে রিকগনাইজ করছে। বিশে^র অন্য জায়গায় যে বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে, আমরা সেটাই পড়াচ্ছি। আমাদের প্রত্যেক বিভাগেই নীতি ও স্বাধীনতা বজায় থাকে। পড়াশুনা শেষ হওয়া পরও এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। এখানেই শেষ হয়ে যায় না। এর পরেও আমরা কিন্ত মনিটর করি। আমাদের ফার্মগুলোকে দুই বছর পর পর শতভাগ রিভিউ করা হয়। এবং দেশে যেসব রেগুলেটরি বডি আছে যেমন, বাংলাদেশ ব্যাংক, ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ, বিএসিসি, কমার্স মিনিস্ট্রি, রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ, তারা যখনই আমাদের কোন অবজারভেশন জানায়, কোন রকম ব্যত্যয় দেখে, আমরা তখনই খুব সিরিয়াসলি এ ব্যপারটা দেখি। স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য আরএনডিসি’তে যিনি থাকেন তিনি কোন সার্ভিসেও নেই বা কোন প্রঅকটিসেও থাকেন না। তিনি একজন রিনাউন্ড সিএ। তাকেই আমরা সে কমিটির প্রধান হিসেবে নির্বাচন করি। তার সম্পর্কে কারো কোনো অভিযোগ থাকে না। তারা একেবারে সততার সাথে শেকড়ে গিয়ে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন। ঐ কমিটি যখন একটা সিদ্ধান্ত দেবে তখন হেয়ারিং হয়, আ্যপিল হয়, কাউন্সিল তখন এনশিওর করে। ফলে আইসিএবি যেটা করে সেটা কোনো বড় কারণ না থাকলে গ্রহণযোগ্য হয়। এভাবেই আমরা আমাদের কাজ করছি।

আমরা ন্যাশনাল ট্যাক্সেশন কমিটির সাথে ক্লোজলি কাজ করি। বোর্ড অব রেভিনিউয়ের সাথে ধারাবাহিকভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া দেশের সব ব্যাংক আমরা অডিট করি। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথেও আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক থাকে। ঠিক একইভাবে বিএসইসি’র সাথেও আমাদের কাজ করতে হয়। সমস্ত লিস্টেড কোম্পানির বিস্তারিত আমাদের দেখতে হয়। আমরা আমাদের মেম্বার, রেগুলেটর, সার্ভিসে হোক,প্র্যাকটিসে হোক সবার সাথে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। এবং আমরা নিশ্চিত করি যাতে কাজের ক্ষেত্রে তাদের নীতি ও স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারে।
সিএ পড়তে হলে একজন ছাত্রের যোগ্যতা কী থাকতে হয়?

চাইলেই একজন সিএ হতে পারে না। কারণ সবার ধারণা যে, চার্টার্ড একাউটেন্ট পাশ করা কঠিন একটা কাজ। । এর সঠিক প্রক্রিয়া জানার জন্য, ছাত্রদের ধারণা দেয়ার জন্য বিভিন্ন সরকারি,বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে স্টুডেন্ট সামিট করেছি। আমরা দেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে যাচ্ছি। আমরা কোয়ালিটিফুল মেধা চাই। কারণ যারা সিএ পড়তে আসতে চায় তারা যদি কোয়ালিটি সম্পন্ন না হয় তাহলে সামনে যে পরিবর্তনগুলো আসছে তারা তা কী করে বুঝবে? সে চ্যালেঞ্জগুলো তো তাদের নিতে হবে। না হলে প্রত্যেকের জন্য ব্যপারটা আরো ডিফিকাল্ট হবে। আমাদের এতোসব কার্যক্রমের একটাই উদ্দেশ্য, আর তা হলো, সত্যিকারের ট্যালেন্টদের নিয়ে আসা। এর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমরা সিরিয়াসলি কাজ করে যাচ্ছি। যাতে করে ভালো মেধাবী ছাত্র ছাত্রী আসে। তাদের স্কলারশীপ দেয়া, তাদের সঠিক ভাবে পরিচর্যা করা আমাদের লক্ষ্য। এটি হলো একটি বিষয়।

যারা ভবিষ্যতের সিএ হতে যাচ্ছে, তাদের আমরা ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণের মধ্যে রাখছি। দ’ুএকটা বিষয় ছাড়া আমাদের সম্পূর্ণ সিলেবাসই আন্তর্জাতিক মানের। যার মাধ্যমে একজন পাশ করা সিএ বিশে^র যে কোন জায়গায় কাজ করতে পারে। আমাদের অনেক মেম্বার আছেন যারা সুনামের সাথে বিশে^র বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। দেশে কাজ শুরু করে বিদেশে তাদের পোস্টিং হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমাদের ২০০ সদস্য দেশের বাইরে উচ্চ পদে কাজ করছে। আমরা প্রত্যেক স্টুডেন্টকে সেভাবে তৈরি করছি। ট্যালেন্ট হান্ট করে নিয়ে আসা, তাদের সেভাবে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে প্রপারলি তৈরি করা, একটা প্রপার এক্সাম সিস্টেম করা, মেম্বার হবার পরে তাদের ধারাবাহিক উন্নয়নের জন্য মনিটরিংয়ের আওতায় আনছি। সাহায্য করছি যাতে করে তারা নিজেদের এগিয়ে নিতে পারে।

প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে আইসিএবি’র উন্নয়নে আমাদের পরিকল্পনা :
আমাদের প্রধান কাজই হবে, একজন সিএ’র মেজর যে রোল ইন্ডিপেন্ডেন্সি, ফাইন্যান্সিয়াল অডিটের ক্রেডিবিলিটি, সেটা এনশিওর করা। আমরা কেবলই কাজ শেষ করেছি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রেভিনিউ ও জয়েন্ট স্টকের সাথে। তাদের অনেক ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট আছে যা অডিট হয়নি। এর জন্য আমরা তাদের অডিট সফ্টওয়ার ডেভেলপ করার জন্য বলেছি। এবং তারা তা করবেন বলেছেন। এটা হলে ডিজিটাল আইডেন্টিফিকেশন অব অডিট রিপোর্টস কাজকে সঠিকভাবে সমাধান করে দেবে। সম্প্রতি তারা এর উদ্বোধন করেছেন। আপনি সেখানে কোন প্রতিষ্ঠানের নাম ইনস্টল করার সাথে সাথে অডিটকৃত প্রতিষ্ঠানের নাম চলে আসবে। সুতরাং আমাদের উদ্যেশ্য হলো, যারা অডিট করবেন তাদের একটা নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসা। ফলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অডিট ফার্মেরও দায়ভার চলে আসবে। তখন এনবিআর বা জয়েন্ট স্টককে দেখাতে পারব কোথায় গলদ। আরেকটা হলো অডিট স্ট্যার্ন্ডাড এনশিওর করা। কোন কারণে কোথাও কাজের ব্যত্যয় হলে আমরা স্ট্রিক্টলি সেটা নিরুপণ করব। আমাদের আসল উদ্দেশ্য হলো, ক্রেডিবিলিটি বাড়ানো। যাতে করে কোনও প্রতিষ্ঠান যখন তার বার্ষিক অর্থনৈতিক রিপোর্ট পেশ করবে, তখন যাতে বোঝা যায়, এটা আইসিএবি’র মাধ্যমে গিয়েছে এবং সেটা যাতে সবার কাছেই গ্রহনযোগ্য হয়। এর জন্য যা যা করা দরকার আমরা সেটা করব।

দেওয়ান নুরুল ইসলাম, এফ সি এ
সভাপতি, আইসিএবি