আম ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করাসহ নানান উদ্যোগ নেয়া হয়েছে : কৃষিমন্ত্রী

হাওর অঞ্চলে ধান কাটা শ্রমিকদের মতো আম ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
আজ শনিবার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে অনলাইনে (জুম প্ল্যাটফর্মে) মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা এবং পরিবহণের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী মাধ্যমে কোনরূপ হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা করা হবে।
আব্দুর রাজ্জক বলেন, করোনার কারণে তরমুজ চাষিরা উৎপাদিত তরমুজের অধিকাংশই বিক্রি করতে পারেনি। যা বিক্রি করেছে তার ভাল দামও পায়নি। ইতোমধ্যে আম, লিচু, আনারস ও কাঁঠালসহ মৌসুমি ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এসব মৌসুমি ফল সঠিকভাবে বাজারজাত না করা গেলে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হবে। অন্যদিকে, দেশের অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। অথচ এই সময়ে করোনা মোকাবেলায় দৈহিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে মৌসুমি পুষ্টিকর ফল গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহণের যাতায়াত নির্বিঘœ করার উদ্যোগ নিতে হবে। ট্রাকের জ্বালানির ক্ষেত্রে ভর্তুকি দেয়া যেতে পারে যাতে ট্রাকের ভাড়া কম হয়। পুলিশ ব্যারাক, সেনাবাহিনীর ব্যারাক, হাসপাতাল, জেলখানাসহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে কৃষকের কাছ থেকে আম কিনে সরবরাহ করা গেলে আমের বাজারজাতকরণে কোন সমস্যা হবে না।
খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে পরিচয় পত্র ইস্যু এবং ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়াতে হবে। এই মধু মাসে বিদেশি ফল যেমন আপেল, আঙ্গুর আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
করোনার সময়ে সকল ধরনের কার্গো লঞ্চ চালু আছে জানিয়ে নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বলেন, শুধু আম-লিচু নয়, সব মৌসুমি ফলের বাজারজাতকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে হবে, তা নাহলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহ্রিয়ার আলম বলেন, গত কয়েক বছরে আমের ভাল দাম না পাওয়ায় রাজশাহীতে আম চাষ কমে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের যাতায়াত নির্বিঘœ করতে পরিচয় পত্র ইস্যু, তাদের যাতায়াতে হয়রানির কমানো, ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানো বিশেষ করে আমে ফরমালিন বা ক্ষতিকর কিছু নেই মর্মে জনগণকে সচেতন ও আশ্বস্ত করতে হবে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক বলেন, আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর ‘এক শপ’ অ্যাপস চালু করা হবে যার মাধ্যমে সারা দেশের চাষিরা পণ্য বেচাকেনা করতে পারবে। এর মাধ্যমে চাষিদের পণ্য এনে মেগাশপের পাশাপাশি ডোর টু ডোর গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া যাবে।
এছাড়াও সভায় হাওরে ধান কাটা শ্রমিকদের যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠানো হয়েছে, তেমনি অন্যান্য জেলা হতে ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়ারাদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, প্রয়োজনে তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রত্যয়নপত্র প্রদান ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা নেয়া সুপারিশ করা হয়।
এছাড়াও ফিরতি ট্রাকের বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল হ্রাস এবং ত্রাণ হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীতে আম, লিচুসহ মৌসুমি ফল অন্তর্ভূক্ত করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিকট অনুরোধ জানানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়।
সভায় হুইপ ইকবালুর রহিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমান, সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ এবং জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন অনলাইনে সংযুক্ত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: নাসিরুজ্জামান।