ইইউতে বাংলাদেশের জিএসপি পর্যালোচনায় তদন্ত দাবি

ইউরোপের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধার (জিএসপি) আওতায় পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পায় বাংলাদেশ। শ্রম অধিকার ইস্যুতে এ সুবিধা অব্যাহত রাখা বা বাতিলের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য তদন্তের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার সংগঠনগুলো।
ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন (সিসিসি), ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি), ইন্ডাস্ট্রিঅল গ্লোবাল ইউনিয়ন ও ইউরোপিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন বাংলাদেশের শ্রম অধিকারবিষয়ক একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন অ্যান্ড দ্য বাংলাদেশ গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি: দ্য ফেইলিউর অব সাসটেইনেবিলিটি কম্প্যাক্ট’ বিষয়ক ওই প্রতিবেদনে জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনায় তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পরবর্তী সময়ে কারখানার নিরাপত্তা ও স্বাধীন শ্রম অধিকার চর্চায় আইন অনুসরণে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিও চলছে। তবে শ্রমিক অসন্তোষ ইস্যুতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সে সময় জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনায় তদন্ত হতে পারে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এ তদন্ত শুরু করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম অধিকার সংগঠনগুলো।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শ্রম অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে মোট চারটি বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দেয় বাংলাদেশ। এগুলো হলো— শ্রম আইন সংশোধন, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার প্রদান, শ্রমিক সংগঠন নিবন্ধন এবং শ্রম সংগঠনসংক্রান্ত বৈষম্য নিরসন। এর মধ্যে কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি বলে দাবি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনগুলোর। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের জিএসপি পর্যালোচনার দাবি জানিয়েছে।

চলতি বছরের মার্চে ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসকে এক চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশের জিএসপি অস্থায়ীভাবে প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে তার আগে শ্রম অধিকার, কর্মপরিবেশ, দায়িত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক আচরণ ও শ্রমিকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি তদন্ত করবে ইউরোপিয়ান কমিশন (ইসি)।

চিঠিতে বলা হয়, জিএসপির নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের বাণিজ্য সুবিধাভোগীদের মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক চর্চার প্রতি সম্মান জানানো আবশ্যক। জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্যই এটি প্রয়োজন। কারণ শ্রম অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হলে সুনির্দিষ্ট পণ্যে জিএসপি সুবিধা অস্থায়ীভাবে প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে।

ব্রাসেলসে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো চিঠিতে ইসি জানায়, সংগঠনে যুক্ত হতে আগ্রহী শ্রমিকদের হয়রানির তথ্য নিয়মিত আসছে, যা শ্রমিকের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান না দেখানোর বহিঃপ্রকাশ। বিষয়গুলোয় আইএলও বিশেষজ্ঞ কমিটির দেয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ বাংলাদেশের জন্য এখন খুবই জরুরি বলে মনে করছে ইসি।

আজকের বাজার:জাকির/এলকে ১৯ অক্টোবর ২০১৭