ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক ব্যবহারের তাগিদ

জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ফলে কংক্রিটের তৈরি ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। এমন অবস্থায় কৃষিজমি রক্ষা করে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইটের ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প হিসেবে কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সম্প্রতি রাজধানীর পান্থপথে এসইএল সেন্টারে নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘ইটের বিকল্প কংক্রিট ব্লক’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। তারা বলেন, পোড়ামাটির ইটের ব্যবহার পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভার ফেলছে। অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে ভবিষ্যতে বিপুল পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। এজন্য পরিবেশের ক্ষতিকর প্রচলিত ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
এতে প্রধান বক্তা দেশের প্রতিতযশা আবাসন কোম্পানি দ্য স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (এসইএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে ইটের ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদেরও সেদিকে এগুতে হবে, তা না হলে আমরা ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ে পড়বো। তিনি বলেন, ইটের চাইতে বহুগুণেই এই কংক্রিট ব্লক ব্যবহার উপযোগী। দেওয়ালে ড্যাম্প ধরে না, রুমের তাপ কম হয়, তুলনামূলক খরচও কম, রুমের জায়গাও বৃদ্ধি পায়। কংক্রিট ব্লকের স্থাপনা হালকা হওয়ায় লোহার রড ও প্লাস্টার-গাঁথুনিতে সিমেন্ট-বালু কম লাগে। ইলেক্ট্রিক লাইন স্থাপন সহজ হয়। তাপ ও শব্দ প্রতিরোধক হওয়ায় ঘর তুলনামূলক শীতে গরম ও গরমে ঠা-া লাগে। অল্প সময়ে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়। কংক্রিটের ব্লক বিভিন্ন আকৃতির করা যায়। কংক্রিট ব্লকের অন্যতম কাঁচামাল নুড়িপাথর, বালু ও সিমেন্ট। অন্যদিকে ইটের কাঁচামাল কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর ফসলি মাটি। কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়লে পোড়ামাটির ইটের চাহিদা কমে আসবে। পরিবেশ-গাছপালা নিরাপদ থাকবে। আবাদি জমি বিনষ্ট হবে না।
অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠশিল্পী মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, বর্তমানে আমরা পরিবেশ ও এর দূষণ, সমুদ্র সম্পদ ইত্যাদি নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করি। সেইসঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সামান্য আলোচনা হয়ে থাকে। ভবিষ্যতে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব মোকাবেলার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, স্থাপনা নির্মাণ বেড়ে যাবে। এজন্য পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তির নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে। গাছ, মাটি ও পরিবেশ রক্ষায় কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তিনি বলে, আমরা বীরের জাতি, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও কৃষি জমি রক্ষায় পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারে আমাদের আরেকবার যুদ্ধ করতে হবে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিমবিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আনোয়ার হোসেন ও স্বাগত বক্তব্য দেন নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা। অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব মো. আলা উদ্দিন, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী আমিনুর রসুল বাবুল, সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রুবেল, এশিয়ান প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যোবায়ের হোসেন প্রমুখ।
আজকের বাজার: সালি / ১৫ নভেম্বর ২০১৭