ঈদের ছুটিতেও ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রস্তুত সকল হাসপাতাল : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ডেঙ্গু মোকাবেলায় ঈদের ছুটিতে দেশের প্রতিটি হাসপাতাল ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা সচল থাকবে এবং কোন ডাক্তার বা নার্স ছুটি কাটাবেন না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। সারা দেশে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটস থেকে সব কিছু পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সকলে নিজ উপজেলায় ডেঙ্গুর সঠিক চিকিৎসা পাবেন।
তিনি বলেন, ঈদের দিন আমরাও অফিস করব। যে কোন সমস্যা হলে জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঈদের ছুটিতেও সারা দেশের সকল হাসপাতালে যেন ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করা হয় সে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছে সরকার। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রতিটি জেলায় ১০ লাখ ও উপজেলা পর্যায়ে ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।’
ডেঙ্গু রোগীদের সেবা প্রদানে সরকার কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা ২ হাজার ডাক্তারকে এ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। আমাদের মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সাহায্য করছে। আমরা একটি প্রটোকল তৈরি করেছি। তা সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডাক্তারদের আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে দিয়েছি।বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে এক সাক্ষাৎকারে বাসসকে একথা বলেন।
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে সরাসরি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। ঈদের দিনও আমরা অফিসে থাকব।’
ঈদের ছুটি প্রিয়জনদের সাথে উপভোগ করতে অধিকাংশ লোক রাজধানী ছেড়ে গ্রামে গিয়েছে । আর সে কারণেই জেলা-উপজেলা পর্যায়ে মশাবাহিত এ রোগ ছড়িয়ে পরার শঙ্কা রয়েছে। আর সে কারণেই উপজেলাগুলোতে পৃথক ‘ডেঙ্গু কর্নার’ চালুর নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি জেলা পর্যায়ের বেশ কিছু হাসপাতালে গিয়েছি। সেখানে থাকা ৯০ ভাগ রোগী ঢাকা থেকে এসেছেন।’
তিনি বলেন, বড় কোন ঘটনার ক্ষেত্রে ঢাকাতেও ডেঙ্গু মোকাবিলায় চারটি বিশেষ স্থানকে সচল রাখা হচ্ছে। এগুলো হলো- শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল ডাইজেস্টিভ ইউনিট, এনআইটিওআর-এর নতুন বর্ধিত অংশ এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল। এগুলোর মধ্যে শুক্রবার থেকে বার্ন ইউনিট সক্রিয় হবে। বাকি তিনটি স্থান শনিবার থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। আশা করছি এর প্রয়োজন হবে না। কিন্তু তারপরও আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে হট লাইন নম্বর চালু করা হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে কেউ এ বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হলে সরাসরি ‘১৬২৬৩’ নম্বরে কল করে জানাতে পারবেন।
চলতি বছরে যে কোন বছরের তুলনায় মশা ১২ গুণ বেশি প্রজনন করেছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। আমাদের সকল হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি রোগী রয়েছে। তারপরও বাড়তি এই রোগীর চাপ নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালগুলো। আমাদের ডাক্তার, নার্স এবং হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীরা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। ঈদে কেউই ছুটি পাচ্ছে না।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোন সংকট তৈরি হয়নি, যার মূল কারণ সরকার এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলো।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের সকল ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘টেস্টিং কিটস থেকে শুরু করে পুশ করার স্যালাইন সরবরাহের জন্য যথেষ্ট মজুদ রয়েছে আমাদের কাছে। এমনকি সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালে এই পরীক্ষার খরচ ৫০০ টাকায় কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা ৮ লাখ নতুন ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট ক্রয় করেছি। সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার পর আরো ২ লাখ আমাদের মজুদে রয়েছে। প্রতিদিন নতুন করে কিট ক্রয় করা হচ্ছে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, লন্ডনে থাকাকালীন সময়েও তিনি সব সময় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির খোঁজ নিয়েছেন। তিনি আমাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তিনি বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তার নির্দেশনা অনুসরণ করেছি।
সরকারি হিসেবে চলতি বছর ৩৫ হাজার ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএইচও) ভাষ্যমতে, ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ কোন চিকিৎসা নেই। তবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে মৃত্যুহার ১ শতাংশেরও নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না একজনও মারা যাক। কিন্তু অনেক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য দেরিতে আসেন। কিন্তু যারা আগেই পরীক্ষা করিয়ে নেন এবং হাসপাতালে বা ডাক্তারের দেয়া সেবা শুরু থেকে গ্রহণ করেন, তারা দ্রত সুস্থ হয়ে যান।
ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবচাইতে কার্যকর হলো এর বাহক এডিস মশার বংশ বিস্তার প্রতিহত করা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সকলের মশারি ব্যবহার করা উচিত। সেই সাথে মশা যেন আপনার ভুলের কারণে বংশ বিস্তার না করে সে দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত।
ডব্লিউএইচও-এর দক্ষিণ এশিয়ার মশা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ জানান, এডিস মশা কখনো দেয়ালে বসে না। তারা মূলত অন্ধকার স্থানে থাকতে পছন্দ করে। যেমন- খাটের নিচে, আসবাবপত্রের নিচে বা ফাঁকায় এবং ঝুলিয়ে রাখা কাপড়ের আড়ালে। তারা আরো জানান, এডিস মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে পট, টায়ার বা অন্য যে কোন স্থানে স্বচ্ছ পানি জমতে দেয়া যাবে না।