উৎসে আয়কর ফাঁকি রোধে নজরদারি বাড়াবে এনবিআর

কর ফাঁকি রোধে উৎসে আয়করের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

সম্প্রতি রাজধানীর সেগুনবাগিচায় করাঞ্চল-১-এর সম্মেলন কক্ষে কর কর্মকর্তাদের জন্য ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রামে’র আওতায় উৎসে কর কর্তন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন,‘আমাদের মোট আয়কর রাজস্বের ৫০ শতাংশ উৎসে কর থেকে আসে। এজন্য উৎসে কর সঠিকভাবে কর্তন করা হচ্ছে কিনা কিংবা কর্তন হলেও সময়মত জমা দেওয়া হচ্ছে কিনা এসব বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানো জরুরী। পাশাপাশি কর কর্মকর্তারাও প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে উৎসে কর ঠিকমত আদায় করছে কিনা এ বিষয়টিও নজরে আনা দরকার। আমরা কর ফাঁকিরোধে এসব বিষয়ে মনিটারিং জোরদার করছি।’
করাঞ্চল-১ এর কমিশনার মো. আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনবিআরের সদস্য (অডিট ইন্টেলিজেন্স এন্ড ইনভেস্টিগেশন) মীর মুসতাক আলী, অতিরিক্ত কমিশনার লুৎফুল আজিম প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উৎসে করের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি কর জরিপ কার্যক্রমও জোরদার করা হচ্ছে উল্লেখ করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের করনেট সম্প্রসারণের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য জরিপের মাধ্যমে যারা করনেটের বাইরে রয়েছে তাদেরকে করনেটে আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেই সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।’
তিনি রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কর কর্মকর্তাদের নিজের দায়িত্বের প্রতি যতœশীল থেকে কর ফাঁকি রোধ করার আহবান জানান। তবে করদাতাদের সঙ্গে কর্মকর্তাদের ভয় দেখানো বা কোন ধরনের অসদাচরণ না করার নির্দেশ দেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান মনে করেন রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি বর্তমানে স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরই রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই রাজস্ব প্রবৃদ্ধির পেছনে কর কর্মকর্তাদের একাগ্রতা ও দেশপ্রেম এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার ফলে সম্ভব হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে করাঞ্চল-১ এর কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, উৎসে করের বিষয়ে পর্যায়ক্রমে স্টেকহোল্ডার বিশেষত উৎসে কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা বা সিএফও পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।এতে উৎসে কর আহরণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে।

উল্লেখ্য, আয়কর আহরণের অন্যতম স্বীকৃত ও সহজ পদ্ধতি হলো উৎসে আয়কর আহরণ। বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে কর অঞ্চল-১ উৎসে কর কর্তিত মোট আয়করের ৯৩ দশমিক ১৪ শতাংশ আহরণ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ ৫৩এফ ধারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতের উপর প্রদানকৃত সুদের বিপরীতে উৎসে কর কর্তন থেকে। বাকী ১০ শতাংশ এসেছে ৫৩এফ ধারায় ৮৬টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উৎসে কর এবং ৩০টি এয়ারলাইন্স হতে কর্তনকৃত ভ্রমণ কর আদায় করে থাকে।
বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে উৎসে কর কর্তন সংগ্রহের হার, কর জমার কোড,কর্তিত আয়কর জমা প্রদানের সময়সীমা বিষয়ে নানা প্রশ্ন এবং অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব বিষয়ে তদারকিতে করাঞ্চল-১ এর ১১টি টিম কাজ করছে। উৎসে কর বিষয়ে এ টিমের দক্ষতা,সক্ষমতা ও কৌশলগত জ্ঞান অর্জনের জন্য কর্মকর্তাদের ক্যাপাসিটি ব্লিডিং প্রোগ্রামের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।