ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার সার্কুলার নিয়ে হাইকোর্টের রুল

ঋণখেলাপিদের মোট ঋণের ২ শতাংশ এককালীন জমা করে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারকে কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট।

বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি করে মঙ্গলবার এ রুল দেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন মুনীরুজ্জামান।

পরে মনজিল মোরসেদ জানান, আদালত ৩১ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছে।

ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকঋণের ওপর সুদ মওকুফের বিষয়ে তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে হিউম্যান রাউটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইআরপিবি) গত জানুয়ারিতে রিট করে।

রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ঋণখেলাপির তালিকা দাখিলের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে।

এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণখেলাপির তালিকা দাখিল না করায় গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করার পাশাপাশি ১৫ দিনের মধ্যে তা দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছিল।

পরবর্তীতে গত ১৬ মে হাইকোর্ট গত ২০ বছরে কোটি টাকার উপরে ঋণখেলাপিদের তালিকা, কী পরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়েছে, ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে যে অনিয়ম চলছে তা বন্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তার তথ্য আগামী ২৪ জুনের মধ্যে দাখিল করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্দেশ দেয়।

এ অবস্থায় ওই দিনই (১৬ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে। এতে বলা হয়, ঋণখেলাপিরা মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। এ ক্ষেত্রে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না।

এ বিষয়ে এইচআরপিবির রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই সার্কুলারের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে। পরে হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রণালয় আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। গত ৮ জুলাই আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেয়া স্থিতাবস্থার আদেশ দুই মাসের জন্য স্থগিত করে।

একই সঙ্গে ওই নীতিমালার সুবিধাভোগীরা নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত দেয় দেশের সর্বোচ্চ আদালত। পাশাপাশি বিচারপতি জেবিএম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় রিট আবেদনকারী পক্ষ এ বেঞ্চে সম্পূরক আবেদন করে।

আজকের বাজার/এমএইচ