একই যন্ত্রে রোপণ ও সার প্রয়োগ

????????????????????????????????????????????????????????

যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষ ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ যন্ত্রের মাঠ পরীক্ষণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)’র উদ্যোগে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় বাহিরবাগ এলাকায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের আওতায় মাঠ প্রদশর্নী এবং যন্ত্রের মাঠ পরীক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের মাঠ প্রদশর্নী এবং মাঠ পরীক্ষণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রি’র ফার্ম মেশিনারি এন্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.আনোয়ার হোসেন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও মুকসুদপুর সংবাদ সম্পাদক হায়দার হোসেন।

রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের কার্যকারিতা সম্পর্কে যন্ত্রের উদ্ভাবক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে একই যন্ত্রে একসাথে ধানের চারা রোপন ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায় বিধায় কৃষকের অর্থ ও সময় সাশ্রয় করা সম্ভব। মাটির গভীরে সার প্রয়োগ করা যায় বিধায় প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় শতকারা ৩০ ভাগ ইউরিয়া সার কম লাগে। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে রোপন উপযোগী ট্রে’র মাধ্যমে ধানের চারা উৎপাদন করার কলা-কৌশল সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিত আলোচনা করেন। অত্যন্ত কম খরচ ও কম সময়ে অধিক জমিতে চারা রোপন করা যায় এবং বীজতলা তৈরীর জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন নেই। কৃষক বাড়ির আঙ্গিনায়ও বীজতলা তৈরী করতে পারে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে বোরো মৌসুমে ট্রেতে উৎপাদিত মাত্র ২৫ দিন বয়েসী চারা রোপন করা যায়। চারার উচ্চতা সাধারণত ১২-১৫ সে.মি. হলেই তা মেশিনে রোপনের উপযুক্ত হয়। উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে ঘন্টায় প্রায় ১.৫-২.০ বিঘা জমিতে চারা রোপন ও দানাদার ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় উদ্ভাবিত এই যন্ত্র ব্যবহার করে ধানের চারা রোপন ও ইউরিয়া সার বাবদ বিঘা প্রতি কৃষকের সাশ্রয় হবে প্রায় ১৫০০ টাকা।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বোরো মৌসুমে কৃষক সাধারণত জমিতে বিঘা প্রতি ৩৮ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে থাকে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের সাহায্যে প্রতি বিঘায় ২৮ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেও প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ১০ ভাগ বেশী ধান উৎপাদন করা যায়। এতে জ্বালানি খরচ হয় প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১ লিটার।

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান, ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয়, ভাঙ্গা, ফরিদপুর ড. আমির হোসেন বলেন “রাইস ট্রান্সপ্লান্টের ব্যবহারে একদিকে যেমন কৃষি শ্রমিকের অভাব দূর হবে অন্যদিকে শস্য উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, এতে কৃষকরা উপকৃত হবে। বর্তমান সময়ে যান্ত্রিকীকরণ আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশের চিরাচরিত কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিক তথা যান্ত্রিক কৃষি ব্যবস্থায় রূপান্তরের বিকল্প নেই।

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, কৃষির মানোন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংস্পম্পূর্ণতা অর্জন, পুষ্টি এবং নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে ফসল উৎপাদনে কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার তথা কৃষি যান্ত্রীকায়ণ এখন খুবই জরুরী। বর্তমানে দেশের কৃষির বিভিন্ন স্তরে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগলেও কৃষি উন্নয়নে খামার যান্ত্রিকীকরণে আমরা এখনও কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমির ক্রমহ্রাস, কম উৎপাদন এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি কৃষির অগ্রগতিকে বর্তমানে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রকৃতি নির্ভর কৃষিকে প্রযুক্তি নির্ভর অর্থাৎ যান্ত্রিকীকরণে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি ও শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং টেকসই করতে হবে।

সূত্র:বাসস
আজকের বাজার: সালি / ৩০ জানুয়ারি ২০১৮