এন৯৫ মানের মাস্ক এদেশেই তৈরি করছে জেএমআই

করোনাভাইরাসের মতো সূক্ষ্ম জীবাণু প্রতিরোধে বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে কেএন৯৫ মাস্ক। চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠান জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড এই কেএন৯৫ মাস্ক তৈরি করেছে। চীনের সাথে যৌথ বিনিয়োগ ও উদ্যোগে আর্ন্তজাতিক মানের এই মাস্ক বানাচ্ছে জেএমআই।

এরইমধ্যে চীনের প্রতিষ্ঠান লিজ ফ্যাশন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান জেএমআই-এর সঙ্গে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, দেশে উৎপাদিত হলে পণ্যটি আমদানির চেয়ে অর্ধেক দামে ক্রেতাদের দেয়া যাবে। তবে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর বলছে, মান যাচাইয়ের সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল অনুমোদন মিলবে।

লিজ ফ্যাশনের কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ম্যানেজার শার্লি ইউয়ান সাংবাদিকদের বলেন, মানের বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দিচ্ছি না। পাঁচ স্তরের সুরক্ষা থাকা এই মাস্কে থাকছে, তিন স্তরের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ফিল্টার পেপার। জেএমআইয়ের এই কারখানায় দিনে অন্তত ৪০ হাজার পিস মাস্ক উৎপাদন সম্ভব। তবে আমরা অপেক্ষা করছি, টেস্ট রিপোর্টের জন্য। এবিষয়ে জেএমআই হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রাজ্জাক জানান, জিবি২৬২৬-২০০৬ একটি গাইড মেনে আমরা কাজ করছি। যখন রেজাল্ট পাওয়া যাবে তখনই আমরা বৃহৎভাবে উৎপাদনের ঘোষণা দেব।

চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী ও ব্যবহারকারীরা বলছেন, যে ধরণের মাস্ক দিয়ে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষুদ্র জীবাণু প্রতিরোধ করা যায়, সেটাই হলো এন৯৫ মাস্ক। মূলত ভাইরাস নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা এই মাস্কের মূল ব্যবহারকারী। সাধারণত উৎপাদনকারী দেশের গাইডলাইন অনুযায়ী উৎপাদিত পণ্যের নামকরণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে যেই মানের মাস্কের নাম এন৯৫, চীনে তার নাম কেএন৯৫, ইউরোপেএফএফপি-২, জাপানে এর নাম ডিএস৯৫ এবং কোরিয়াতে পরিচিত কে৯৫ নামে। বিশ্বে খুবই স্বল্প পরিচিতি থাকা এই পণ্য করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে রাতারাতি চলে এসেছে মানুষের মুখে মুখে।

সরকারের অনুমতি পাওয়ার পরই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ২১ বছর ধরে চিকিৎসা সরঞ্জাম উৎপাদনের ব্যবসায় যুক্ত। আমরাই প্রথম এদেশে এই খাতে, ট্রেডিং-এর বাইরে এসে ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করি । ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আদলে এদেশের চিকিৎসকদের জন্য বহু চিকিৎসা সরঞ্জাম উন্নয়ন ও গবেষণার মাধ্যমে তৈরি করেছি। এগুলো পরে আন্তর্জাতিকভাবে পরীক্ষার মাধ্যমে মানসম্মত প্রমাণ হওয়ার পর বিদেশে রফতানি করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা চীনের গাইডলাইন মেনে দেশে কেএন৯৫ মানের মাস্ক বানানো শুরু করেছি। আমাদের পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষ। আমাদের উৎপদিত পণ্য ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদিত ল্যাবে পরীক্ষার জন্য জমা দেয়া হয়েছে। এরপর আরও কিছু পরীক্ষা লাগবে। এরপরই আমরা গর্বের সঙ্গে ঘোষণা দিতে পারবো, বাংলাদেশ কেএন৯৫ মাস্ক বানিয়েছে।’

বর্তমানে চীনে তৈরি এই কেএন৯৫ মাস্কটি এই মুহূর্তে দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৩০০ টাকা। একই মানের মাস্ক উৎপাদনের দাবি করছে জেএমআই। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, একটি মাস্ক বানাতে তাদের খরচ হবে প্রায় ১৫০ টাকা। দেশে উৎপাদিত মাস্ক ও পিপিইর মান পরীক্ষার জন্য পাঁচটি বেসরকারি পরীক্ষাগারকে দায়িত্ব দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মুখপাত্র রুহুল আমিন সাংবাদিকদেরকে জানান, যতগুলো টেস্ট দরকার, তার সবই সার্টিফাইড ল্যাব অথবা আর্ন্তজাতিকভাবে টেস্ট করিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, এটা ওই স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করছে। এরপর আমরা তাদের টেস্ট রিপোর্টগুলো যাচাই ও প্রয়োজনে কারখানা পরিদর্শন করে সত্যতা পেলে, তবেই বাণিজ্যিক উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া হবে।