‘এমন খামার করে যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারে’, সুমন

কেরানীগঞ্জের আলিয়া পাড়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ সুমন। পারিবারিক গরুর খামারেই সময় দিচ্ছেন সেই কৈশোর থেকে। পড়ালেখার পাশপাশি সময় দিতেন খামারে। তবে উচ্চমাধ্যমিকের পরে পুরোপুরি মন দেন খামারে। দুগ্ধ খামরটিকে সম্প্রসারণ করেছেন গত ৩০ বছর ধরে। কয়েক বছর ধরে শুরু করেছেন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণেরও উদ্যোগ।

আসন্ন কোরবানিকে সামনে রেখে উন্নত জাতের প্রায় ৫০টি গরু মোটাতাজাকরণের কাজ করছেন তিনি। আশা করছেন, প্রতিটি গরু তিন থেকে চার লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। সেই হিসেবে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আয় করবেন তিনি।

সুমন আশা করছেন, প্রতিটি গরুতে তিনি ৩০ থেকে ৭০ হাজার টাকার বেশি মুনাফা করবেন।

তবে এই মুনাফা এমনি এমনিতেই আসছে না ঘরে। তাকে দিতে হয়েছে প্রচুর পরিশ্রম। বিনিয়োগ করতে হয়েছে এককালীন বড় অংকের টাকা। এছাড়া গত সাত মাস ধরে গরুগুলোর পেছনে প্রতিদিন তার ব্যয় হচ্ছে গড়ে ২৫ হাজার টাকার বেশি।

সুমন জানান, এই মৌসুমে মোটাতাজাকরণের জন্য  প্রায় সাত মাস আগে থেকে গরু কিনতে শুরু করেন। এক একটি গরু তিনি কিনেছেন এক লাখ টাকা থেকে এক লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিটি গরুর খাওয়া, চিকিৎসা ও থাকার ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করতে গড়ে এক লাখ টাকা করে খরচ হয়েছে তার।

তিনি জানান, যে গরুগুলো এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকায় কিনেছিলেন সেগুলো তিনি চার লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছেন। আর এক লাখ টাকায় কেনা গরুগুলো ৩ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছেন তিনি।

সুমন জানান, ক্ষতিকর ইনজেকশন ও ট্যাবলেট ব্যবহার না করে ঘাস-খড়ের পাশাপাশি খৈল, ছোলা ও ভুষি খাওয়ানোর মাধ্যমে গরু মোটাতাজা করছেন তিনি। তবে রোগ প্রতিরোধের টিকা তিনি গরুকে দিয়েছেন।

এই খামরি বলেন, আগের বছরগুলোতে ততটা লাভ করতে পারেননি তিনি। তার মতে, আগের বছরগুলোতে বাজারে ভারতীয় গরু বেশি থাকায়, লোকসানের মুখে পড়েন তার মতো অনেক খামারি।

তবে এ বছর ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকলে লাভবান হবেন বলে আশা তার।

গতকাল রোববার সুমনের আলিয়া পাড়ের খামারে গিয়ে দেখা যায় গরুর যতেœ ব্যস্ত তার পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি কর্মচারিরাও। কেউ খড় কেটে দিচ্ছেন গরুর সামনে। কেউ গরুকে গোসল করাচ্ছেন কেউ বা তার দুগ্ধ খামারে দুধ দোহন করছেন।

মাংসের জন্য গরু পালনের পাশপাশি খামারে এখন আছে ৩২টি দুগ্ধবতী গাভী। সুমনের দেওয়া তথ্য মতে, সেখান থেকে প্রতিদিন গড়ে তিনি ৬০০ থেকে ৬৫০ কেজি দুধ সংগ্রহ করেন।

সুমন জানালেন, এই গরুর খামার করে তিনি পরিবার নিয়ে বেশ স্বচ্ছলভাবেই দিন কাটাচ্ছেন। বাড়তি মুনাফায় করেছেন তিন তলা বাড়ি। চিন্তা করছেন খামার আরও সম্প্রসারণের।

তার মতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে পারলে চাকরির পেছনে না ছুটে শিক্ষিত তরুণদের এমন উদ্যোগ নেওয়া উচিত।

আজকের বাজার: সালি / ১৫ আগস্ট ২০১৭