এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চলছেই

এ বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং সমমানের পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কোচিং সেন্টার বন্ধ, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীর হলে প্রবেশ, পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা অন্যতম। এতোসব পরিকল্পনার পরও প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে পারছেনা সরকার। পূর্বের মতোই চলছে প্রশ্ন ফাঁসের মহোৎসব।
সর্বশেষ আজ ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। এ দিন পরীক্ষা শুরুর প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে থেকেই বাংলা দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক (বহুনির্বাচনি) অভীক্ষার ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পাওয়া যায়। যার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল পাওয়া গেছে। এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলা প্রথমপত্রের প্রশ্নপত্রও পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেসবুকে পাওয়া যায়।
শনিবার সকাল থেকে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ নজরদারিতে রাখার পরও শনিবার সকাল ৯টার পর দ্বিতীয়পত্রের নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার ‘খ’ সেটের প্রশ্নপত্রটি ফেসবুকে একটি গ্রুপে পাওয়া যায়। প্রশ্নপত্রটি ওই গ্রুপে আপলোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা অন্যান্য গ্রুপে ও পেজে ছড়িয়ে পড়ে। পরীক্ষা শেষ হলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে ওই প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়।
এ দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রশ্নপত্র দেওয়ার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত এসব গ্রুপ ও পেজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হয়নি। এতে একদিকে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন হতাশা বাড়ছে, তেমনি ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে অভিভাবকদের মেেধ্য।

আব্দুল আলিম নামের এক অভিভাবক আজকের বাজারকে বলেন, আমিতো ছেলের পরীক্ষা নিয়ে খুবই চিন্তিত। আমি আমার ছেলেকে বলেছি, পরীক্ষা যেমনই হোক অনৈতিক সুযোগ নেওয়া যাবেনা। কিন্তু যে হারে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে তাতে শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি শঙ্কিত। দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি করছে, তা ভাববার বিষয়।
আসাদুজ্জামান নামের এক পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জানান, প্রথমপত্র থেকে দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা ভালো হয়েছে। পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্ন পেয়েছিলে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান বলেন, না প্রশ্ন পাইনি। তবে শুনেছি প্রথমপত্রের প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিলো। এভাবে প্রশ্ন ফাঁস হলেতো আমরা যারা প্রশ্ন না পেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছি তাদের ফল খারাপ হবে।
ঢাকা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহেদুল খবীর চৌধুরী বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ব্যাপারে এখনো বিছু জানিনা। বিষয়টি আমরাও নজরদারিতে রেখেছি। চেষ্টা করছি, মিলিয়ে দেখবো। তারপর করণীয় ঠিক করা যাবে।
প্রথম পরীক্ষার দিন (১ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতেদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে পরীক্ষা বাতিল করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
তবে দু’টি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও পরীক্ষা বাতিলের কোন ঘোষণা এখন পর্যন্ত দেননি শিক্ষামন্ত্রী।
আজকের বাজার : আরএম/সালি, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮