“এসডিজি: প্রাইভেট সেক্টর এর ভুমিকা ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) শনিবার, মার্চ ০২, ২০১৯ তারিখে “এসডিজি: প্রাইভেট সেক্টর এর ভুমিকা ও চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক  একটি পেশাগত উন্নয়ন (সিপিডি) প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে।

জনাব মো: আসাদ উল্লাহ এফসিএস, চেয়ারম্যান, প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটি এবং ইনস্টিটিউটের সদ্য প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সিপিডি সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন। তার স্বাগত বক্তব্যে, উপস্থিত সবাইকে সময়োপযোগী সেমিনারে অংশগ্রহন করার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে এসডিজিকে ৭ম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্ত করেছে যা কিনা ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয়েছে ।

এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের জন্য এখনি উপযুক্ত সময় সামনে এগিয়ে যাওয়ার। জনাব মো: আসাদ উল্লাহ আরও বিস্তারিতভাবে বলেন , যেহেতু আইসিএসবির সদস্যগন পেশাদারিত্বের দিক থেকে যোগ্য সেহেতু এসডিজির যেকোনো উদ্যোগে অন্তভূক্ত করে জাতীয় অর্থিনীতিতে অবদান রাখতে পারে। এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়নে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ৯২৮.৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবলিক সেক্টর ও বহি:স্থ উৎস হতে প্রাক্কলন করা হবে। এই পরিমান বিনিয়োগ এসডিজি বাস্তবায়নে অর্থবছর ২০১৭ থেকে ২০৩০ এর মধ্যে প্রয়োজন হবে। গবেষণায় সম্ভাব্য পাচটি উৎসের মধ্যে বেসরকারি খাতের অর্থয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

যেহেতু ৭০% রাজস্ব আয় বেসরকারি খাত থেকে আসে সেহেতু সঠিকভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য সরকার বেসরকারি খাতকে সংযুক্ত করার জন্য জোর দিয়েছে। যে কারনে আমাদের দেশের প্রাইভেট সেক্টর আমাদের বিশেষজ্ঞ পেপার প্রেজেন্টার এবং প্যানেলিস্টরা বেসরকারি সেক্টর গুরুত্ব অনুধাবন করে আজকের সেমিনারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর আলোচনা করেছেন।

জনাব আসাদ উল্লাহ এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করেছেনঃ
১) বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য – নির্দিষ্ট এসডিজি সূচকগুলি দেশের প্রেক্ষাপটের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত।
২) আমাদের উদ্ভাবনী হতে হবে এবং আমাদের নিজস্ব উন্নয়নমূলক চ্যালেঞ্জের সাথে আমাদের নিজস্ব দেশীয় সূচকগুলিকে কাজ করতে হবে।
৩) এসডিজি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোকে শক্তিশালী করা উচিত।
৪) উন্নয়নের পরবর্তী পর্যায়ে দক্ষ শ্রমিক ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান অর্জনের মাধ্যমে নিশ্চিত করা উচিত।
৫) বেসরকারি খাতকে এসডিজিগুলির সাথে সমন্বিত করা উচিত, যেহেতু এই সেক্টর থেকে ৭০% এর বেশি রাজস্ব আয় হয়।
৬) দেশের প্রফেশনাল ইন্সটিটিউট এর মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা উচিত এবং দেশের বিদ্যমান প্রফেশনাল ইন্সটিটিউটসমূহকে শক্তিশালী করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এই প্রসঙ্গে আমাদের ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) এর প্রফেশনাল সেক্রেটারিগণ এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন।

জনাব এম এ মান্নান, এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যারা তাদের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) লক্ষ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্জন করেছে এবং আরো চ্যালেঞ্জিং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের জিডিপি গত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ জিডিপি বৃদ্ধির হার ৭.৬৫ %। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য, আমরা জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ৭.৮% নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের দেশের সর্বোত্তম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে, কর্পোরেট গভর্নেন্স অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন। তিনি আশা করেন যে আইসিএসবি দক্ষ এবং যোগ্য প্রফেশনাল সেক্রেটারি তৈরি করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে, যারা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে শীর্ষস্থানীয় দেশগুলির মধ্যে একটি হওয়ায়, বাংলাদেশ নতুনভাবে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমানভাবে আত্মবিশ্বাসী। আমরা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ, যার নির্দেশনা ও আন্তরিক সমর্থনে ২০৩০ সালের আগে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গভীর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

বিশেষ অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মো: আবুল কালাম আজাদ, প্রিন্সিপাল কোর্ডিনেটর, এসডিজি অ্যাফের্য়্স, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর উপর একটি প্রবন্ধ উপন্থাপন করেন এবং বিএসি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান ড. এম. হারুনুর রশিদ “এসডিজি: বেসরকারি ক্ষেত্রের ভূমিকা এবং চ্যালেঞ্জ” এর উপর মূল প্রবন্ধ উপন্থাপন করেন। এই প্রবন্ধগুলো চার্টার্ড সেক্রেটারিগণদের নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে আরও উন্নতির জন্য সহায়তা করবে।

ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এফসিএস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তার ভাষণে, তিনি জোর দিয়েছিলেন যে ভাল কর্পোরেট গভর্নেন্স অনুশীলন করা সময়ের চাহিদা। কোম্পানির সুশাসন নিশ্চিত করা টেকসই উন্নয়ন সমর্থন করার মূল উপাদান। কর্পোরেট সেক্টর দেশের এসডিজি পূরণে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উত্তরন করতে চায়, তাই এটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উন্নতি করতে হবে, বিশেষ করে সুশাসন, আইনের শাসন এবং কার্যকর করতে হবে । চার্টার্ড সেক্রেটারি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাজ করতে সক্ষম। তিনি প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিকে অনুরোধ করেন যে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য / এসডিজি কর্মসূচির কার্যক্রমগুলিতে আইসিএসবি’র সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ।

জনাব মো: শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, প্রেসিডেন্ট, এফবিসিসিআই, নিশাদ কবির, প্রেসিডেন্ট, এমসিসিআই, জনাব শাহজাদ মুনিম, প্রেসিডেন্ট, এফআইসিসিআই, জনাব আসিফ ইব্রাহিম, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, ডিসিসিআই, শায়লা খান, এসিসটেন্ট কান্ট্রি ডিরেক্টর, ইউএনডিপি পেনেল আলোচনায় অংশগ্রহন করেন।

সিপিডি প্রোগ্রামের পরবর্তী অংশে একটি প্রানবন্ত প্রশ্নোত্তর অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে পেপার প্রেজেন্টারগণ অংশগ্রহনকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

সরকারী কর্মকর্তা ও ইন্সটিটিউটের বিপুল সংখ্যক সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যারা দেশের বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পনীগুলোতে কর্মরত আছেন ।