ওমরানের সেই ভিডিও মিথ্যা

গত বছর সিরিয়ার শিশু  ওমরানের ধূলি-ধূসর মাথাভর্তি রক্তাক্ত মুখের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছিল তা মিথ্যে দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সম্প্রতি পরিবারের সঙ্গে ছবি প্রকাশ হবার পর ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পাঁচ বছরের এই শিশুর।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের আগস্টে ধ্বংসস্তূপ থেকে ওমরানকে উদ্ধারের দৃশ্য গণমাধ্যমে আসে। তখন বলা হয়, সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় ওমরানের এই দশা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ধ্বংসস্তূপ থেকে ওমরানকে উদ্ধারের পর তাকে এনে বসানো হয় কমলা রঙের অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি চেয়ারে। ওমরানের ছোট্ট শরীরের পুরোটা ধুলাবালুতে আচ্ছন্ন। ধূলি-ধূসর মাথাভর্তি চুলের মধ্য থেকে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। সেই রক্ত মুখের ওপর এসে ধুলার সঙ্গে মিশে পেস্ট হয়ে গেছে। রক্তের ছোপ ছোপ দাগ শরীরের অন্যান্য অংশেও।

ভিডিওটির বিষয়ে বলা হয়, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় আলেপ্পো শহরে সরকারি বাহিনীর বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে ওমরানকে উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ওমরানের ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। ওমরানের সেই ছবি ও ভিডিও বিশ্বজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল।

ওমরান এখন আলেপ্পোয় তাদের নতুন বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে আছে। আলেপ্পো শহর এখন পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে।

গত রোববার সরকার-সমর্থক সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওমরানের বাবা মোহাম্মদ দাকনিশ। সেই দিনের ঘটনা সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য, ওমরানকে প্রচারণায় ব্যবহার করা হয়েছে।

মোহাম্মদ দাকনিশ ইরানের আল-আলম টেলিভিশনের এক সাংবাদিককে বলেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ওপর হামলা চালাতে ওমরানকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠী ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

মোহাম্মদ দাকনিশ বলেন, তারা তার (ওমরান) রক্ত নিয়ে ব্যবসা করতে চেয়েছিল। এ কারণে তারা ওমরানের রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করেছিল।

মোহাম্মদ দাকনিশের ভাষ্য, গত বছরের ১৭ আগস্ট তাদের বাড়িতে হামলা হয়। হামলার সময় তাঁর সঙ্গেই বসেছিল ওমরান। হামলার আগে তিনি তাঁদের বাড়ির ওপর দিয়ে কোনো উড়োজাহাজ উড়ে যাওয়ার শব্দ পাননি।

হামলা বিধ্বস্ত ওমরানদের বাড়ি। ফাইল ছবি: রয়টার্সমোহাম্মদ দাকনিশ বলেন, হামলার ঘটনায় ওমরান সামান্য আহত হয়েছিল। আর ওমরানের মুখমণ্ডলে যে রক্ত ছিল, তা তাঁর (মোহাম্মদ দাকনিশ) নিজের রক্ত। তাঁর (মোহাম্মদ দাকনিশ) আঘাত থেকে বের হওয়া রক্ত ওমরানের মুখমণ্ডলে লেগেছিল।

ওমরানের বাবা বলেন, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তিনি তাঁর অন্য তিন সন্তানকে খুঁজছিলেন। এ সময় ‘বন্দুকধারী’ কয়েকজন ব্যক্তি ওমরানকে তুলে রাস্তার পাশে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যায়। তারা ভিডিও করতে থাকে। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও তারা ওমরানকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঘটনার সময় ওমরানকে যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানকার এক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। ওই চিকিৎসক বলেন, ওমরানের মাথায় আঘাত ছিল। এ কারণে কয়েকটা সেলাই দিতে হয়েছিল। এ ছাড়া ঘটনার আকস্মিকতায় সে প্রচণ্ড মানসিক আঘাত পেয়েছিল।

গত বছরের শেষ দিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে প্রবেশ করে। এ সময় মোহাম্মদ দাকনিশ তাঁর পরিবার নিয়ে সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় থাকার সিদ্ধান্ত নেন।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৭ জুন ২০১৭