ওষুধ রপ্তানি করে বাংলাদেশ এগোতে পারে

ফার্মাসিউটিক্যালস
জালাল উদ্দিন আহমেদ: আমি বলব,ওষুধ শিল্পে বাংলাদেশের স্পষ্ট অগ্রগতি যেকোনো অনুন্নত দেশের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে। এ দেশের ওষুধ শিল্পের অভ্যন্তরীণ বাজারের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আর রপ্তানির বাজারও হাজার কোটি টাকার কম নয়। ওষুধ শিল্পের প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশ। সরকারি তালিকাভুক্ত ২৬৯ টির বেশি ছোট-বড় ওষুধ কারখানায়, প্রায় ৫হাজারের বেশি ব্র্যান্ডের অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানা দেশের ওষুধের চাহিদার প্রায় ৯৮ ভাগ ওষুধ সরবরাহ করছে। পাশাপাশি বিশ্বের ১৬০টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছ্ ে। আমাদের ওষুধ শিল্পে কর্মসংস্থান হচ্ছে দুই লাখেরও বেশি মানুষের । পোশাক শিল্পের পর ওষুধ অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত হিসেবে অবস্থান নিচ্ছে বাংলদেশে।

আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানির একটা সুদূরপ্রসারি জায়গা রয়েছে। জনসংখ্যা অনুপাতে ইতিমধ্যেই আমরা পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করতে পারছি অর্থাৎ আমরা এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের বহু দেশে ওষুধ রপ্তানি শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে আমাদের মানে টেকনো ড্রাগসেরও ওষুধ ব্যবসা আরও বাড়বে। এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।
আমরা এবং ওষুধের প্যাটেন্ট রাইট

সব ধরনের ওষুধের জন্য একটা প্যাটেন্ট রাইট বা আইন রয়েছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই প্যাটেন্ট রাইটের সময়সীমা নির্ধারণ করা থাকে। কেউ যদি এই প্যাটেন্ট রাইট নিয়ে ওষুধ তৈরি করে, তাহলে অন্য কেউ এই প্রোডাক্টগুলো অনুকরণ করে তৈরি করতে পারবে না। আমরা উন্নত দেশগুলোর মধ্যে পড়ি না বলে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত আমাদের প্যাটেন্ট ছাড় দেয়া হয়েছে। এখন, আমরা যদি র’ ম্যাটেরিয়াল বা কাঁচামাল নিজেরা করতে পারি, টেস্টিং প্রসিডিউর যদি ঠিক থাকে, তাহলে এসব প্রোডাক্ট উৎপাদন করতে আমাদের কোনো বাঁধা নেই। চীন বা জার্মানরা কিন্তু ইচ্ছা করলেও এসব প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারবে ন। এ কারণে ওরা আমাদের দেশে চলে আসে, আমাদের জন্য টেকনোলজি সাপোর্ট দেয়। আমরা প্রোডাক্ট তৈরি করি। আমাদের রপ্তানির সুযোগ আছে যা অন্যদের নেই। সেই হিসেবে আমরা কিন্তু ভাগ্যবান। এটা অনেক বড় একটা সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা ওষুধ রপ্তানি করে,দেশের জন্য বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারি। এটা যেমন আমার দেশের জন্য সুনাম, আমার কোম্পানির জন্যও সুনাম, আমার ব্যক্তিগত সুনাম । এসবই পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এই সুযোগে আমি, মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের ওষুধ শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগের জন্য বর্তমান সরকারকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

আমাদের টেকনো ড্রাগস একটা পুরষ্কার পেয়েছে। ‘আর্ক অব ইউরোপ’। আমাদের নাম তারা কিভাবে পেয়েছে? নিশ্চয়ই তারা বিচণতার বিচক্ষণতার সঙ্গে খোঁজ করেছে, কোন্ কোম্পানি, কোন্ দেশে কিভাবে ওষুধ বিক্রি করে? কারা কতটুকু ভালো, কতটুকু সুন্দর এবং কতটুকু সহজ উপায়ে কোম্পানি প্রোডাক্টগুলো জায়গামতো পৌঁছে দিতে পারছে? আমরা এর ব্যতিক্রম নই বলেই তাদের চোখে এই অ্যাওয়ার্ডটা পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছি। সেজন্য ‘বাইডস’ কে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
একজন সৃষ্টিশীল মানুষ আমি

আমি একজন ইনোভেটিভ মানুষ। টেকনো ড্রাগস যে প্রোডাক্টগুলো তৈরি করে, একটু ইনোভেটিভ চিন্তা থেকেই তা করা হয়। বিজনেসের চেয়ে বেশি চিন্তা করি যে, আমাদের দেশে কোন্ প্রোডাক্টগুলো ইমপোর্ট হয়? সেই ইমপোর্টেড প্রোডাক্টগুলেই যদি আমরা বানাতে পারি, তাতে কী হয়? একদিকে যেমন আর্থিকভাবে দেশের পক্ষে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে পারি। দ্বিতীয় আমার নিজের কোম্পানি উন্নতি করছে। তৃতীয়ত আমি হয়তো বড় বিজনেস করতে পারলাম না, আমাকে ফলো-আপ করে অন্য বড় একটা কোম্পানি এসে এই প্রোডাক্ট দিয়ে বড় ব্যবসা করছে। আমার গর্ব হয় ও ভালো লাগে এজন্যই যে, আমার এই সৃজনশীল প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ অনেক বড় বড় ব্যবসা করছে। আমাদের দেশে নতুন ও ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট বাজারে আনা সুযোগ রয়েছে। তবে প্রথম কেউ আনতে চায় না, তাদের মনে হয় এটা ছোট বিজনেস। কিন্তু যখনই সৃষ্টিশীল কোনো প্রোডাক্ট বাজারে এসেই পড়ে , তখন তারা দেখে যে, না এটার মার্কেট ব্যাপকভাবে বাড়ানো যায়,। আর তখনই বড় কোম্পানিগুলো আসে। বাজারে এসে কিন্তু ওরা বড় বিজনেস ঠিকই করছে। অথচ আমাদের মতো কোম্পানিগুলো পড়ে থাকে, কারণ আমরা মার্কেটিংটা সেভাবে করতে পারি না। কিন্তু আমাদের প্রোডাক্ট, ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট। দেশে এসব প্রোডাক্টের ভালো ভবিষ্যত আছে। এসব প্রোডাক্ট দিয়ে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা আয় করতে পারব। আমরা এ দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারব, শুধু ফরেন কারেন্সি দিয়ে। এ ব্যাপারে সরকার থেকে আমাদের কিছু কিছু জায়গা ছাড় দেওয়া হয় তাহলে এটা খুবই সম্ভব। যেমন, এখন অ্যান্টি-ক্যান্সারের কিছু কিছু প্রোডাক্টে আমরা ভ্যাট এবং ডিউটি ফ্রি পাচ্ছি। কিছু কিছু প্রোডাক্ট যেগুলো ইমপোর্ট হয়ে আসছে সেগুলোতে ভ্যাট নাই, কিন্তু আমরা তৈরি করতে গেলে সেগুলোতে ভ্যাট দেওয়া লাগে, ট্যাক্স দেওয়া লাগে, ডিউটি দেওয়া লাগে। তাই আমি বলব যে, অ্যান্টি-ক্যানসার ড্রাগস, হরমোন ড্রাগস, যা কিছু আছে -এগুলোর প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা বুঝে ভ্যাট ফ্রি করে দেওয়া, ট্যাক্স ফ্রি করে দেওয়া এবং পারলে এসব ওষুধ এক্সপোর্টের জন্য যদি গার্মেন্টসের মতো কিছু সাবসিডি দেয়া সম্ভব হয়, তা করা উচিত। এতে এই খাতের উদ্যোক্তারা উৎসাহিত হবেন । তাহলে আমাদের দেশে বিদেশি কোম্পানিও ডেভেলপ করবে, দেশ উন্নতি করবে। আমাদের কোম্পানিগুলো ক্রমেই উন্নত হবে। সরকারের এদিকে একটু দৃষ্টি দরকার। তো এই সমস্ত ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ বা সচিবালয়ের মতো জায়গাতে যদি ফার্মাসিস্ট বা ভালো কেমিস্ট যারা এ সম্পর্কে নলেজ রাখেন এমন মানুষ যদি থাকেন, তাহলে ভালো হয় । এতে করে ওষুধ থেকে আমাদের রপ্তানি আয় বাড়বে। দেশের জন্যও ভালো হবে।

জালাল উদ্দিন আহমেদ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক
টেকনো ড্রাগস লিমিটেড