ওয়ান-ইলেভেনে নেয়া ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরতের আদেশ স্থগিত

সেনা-সমর্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরতের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের রায়ের পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টাকা ফেরত দেয়ার আদেশ স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।

মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৭ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী ওয়ান ইলেভেনের সময় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি নেয়া হয়। এর মধ্যে আনুমানিক ১৫-১৬টি কোম্পানির পাওনা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ফেরতের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, ২০১৭ সালে আপিল বিভাগ তা বহাল রেখেছিলেন। তবে রিভিউয়ে এসে সে রায় আর টেকেনি।

জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০০৮ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জরুরি অবস্থা চলাকালে একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা প্রায় ৪০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকা আদায় করেন। ওই টাকা দুই শতাধিক পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ০৯০০ নম্বর হিসেবে জমা হয়।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে নানা ধরনের আলোচনা হয়। কিন্তু ফেরত না পেয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট ব্যবসায়ীদের পক্ষে রায় দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। ২০১৫ সালের ২ আগস্ট আপিল বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংককে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক আপিল করেন।

যেসব কোম্পানির পাওনা টাকার বিষয়ে রায় হল, তার মধ্যে রয়েছে- এস আলম গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানের ৬০ কোটি, দি কনসোলিডেটেড টি অ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড এবং বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেডের ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ, মেঘনা সিমেন্টের ৫২ কোটি, বসুন্ধরা পেপার মিল ও ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টির ১৫ কোটি, ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের এক পরিচালকের ১৮৯ কোটি, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের ৯০ কোটি, ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৭০ লাখ, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসর্টসের ১৭ কোটি ৫৫ লাখ, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের ৭ কোটি ১০ লাখ, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডকে ৩৫ কোটি এবং ও ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারীর ৬৫ লাখ টাকা।

হাইকোর্ট এসব কোম্পানির টাকা বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে নেয়া অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি এসব টাকা তার মালিকদের ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

জানা গেছে, ওইসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও তত্ত্বাবধায়ক আমলে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ১৯ কোটি ৪৫ লাখ, এবি ব্যাংকের ১৯০ কোটি, এবি ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি, আমিন মোহাম্মদ ফাউন্ডেশনের ৩২ কোটি ৫০ লাখ, যমুনা গ্রুপের ৩০ কোটি, এমজিএইচ গ্রুপের ২৪ কোটি, এলিট পেইন্টের ২৫ কোটি ৪৪ লাখ, কবির স্টিল মিলসের ৭ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩৯ কোটি, কনকর্ড রিয়েল এস্টেট থেকে ৭ কোটি, কনকর্ড ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে ৮ কোটি, স্বদেশ প্রপার্টিজের ৯ কোটি, পিংক সিটির ৬ কোটি ৪১ লাখ, আশিয়ান সিটি থেকে ১ কোটি, সাগুফতা হাউজিং থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ, হোসাফ গ্রুপের ১৫ কোটি, পারটেক্স গ্রুপের ১৫ কোটি এবং ইসলাম গ্রুপ থেকে ৩৫ কোটি টাকা জোরজবরদস্তি করে নেয়া হয়।

এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে যাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় তাদের মধ্যে রয়েছেন- ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টুর ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, ব্যবসায়ী নূর আলীর ৪০ কোটি, ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের কাছ থেকে ১৭ কোটি, আবু সুফিয়ানের ১৪ কোটি, শওকত আলী চৌধুরীর ৬ কোটি, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের কাছ থেকে ১৫ কোটি, বিএনপির সাবেক এমপি সালিমুল হক কামালের ২০ কোটি, ওয়াকিল আহমেদের ১৬ কোটি, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ২০ কোটি ৪১ লাখ ও ন্যাশনাল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমান পরিচালক পারভীন হক সিকদারের কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা। এসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের অনেকেই আইনের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

আজকের বাজার/এমএইচ