কমেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, সুস্থতার হারও বেড়েছে

দেশে করোনা শনাক্তের ১০৭তম দিনে গত ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে সুস্থতার হারও। গত ২৪ ঘন্টায় ১৫ হাজার ৫৫৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩ হাজার ৪৮০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। গতকালের চেয়ে আজ ৫২ জন কম শনাক্ত হয়েছেন।

গতকাল ১৫ হাজার ৫৮৫টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিল ৩ হাজার ৫৩১ জন। দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। নমুনা পরীক্ষায় আজ শনাক্তের হার ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

আগের দিন এ হার ছিল ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ শনাক্তের হার দশমিক ২৯ শতাংশ কম। আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬৭৮ জন। গতকালের চেয়ে আজ ৫৯৪ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৮৪ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪৬ হাজার ৭৫৫ জন।

তিনি জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪০ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৪০ দশমিক ১৪ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।

অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, দেশে গত ২৪ ঘন্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৮ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ১ জন কম মৃত্যুবরণ করেছেন।

গতকাল ৩৯ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ হাজার ৫০২ জন। তিনি জানান, শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। আগের দিনও এই হার ছিল ১ দশমিক ৩০ শতাংশ।

ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬ হাজার ২৮৭টি। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৭১০টি।
গতকালের চেয়ে আজ ৫৭৭টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৫৫টি। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৮৫টি। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩০টি কম নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৬ লাখ ২৭ হাজার ৭১৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩৩ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী। তাদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায় যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ৩ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। ঢাকা বিভাগে ১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন, সিলেট বিভাগে ১ জন ও বরিশাল বিভাগে ৪ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালে ২৫ জন এবং বাসায় ১২ জন মারা গেছেন। মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে ১ জনকে।

আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে আরও ৬১৮ জনকে এবং এ পর্যন্ত আইসোলেশনে নেয়া হয়েছে ২০ হাজার ৪৩২ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩৪১ জন এবং এ পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৭ হাজার ৯৬৫ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছেন ১২ হাজার ৪৬৭ জন। বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আইসোলেশন সেন্টার চালু রয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে ২ হাজার শয্যার আইসোলেশন সেন্টারে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে এবং সেখানে রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী অক্সিজেন দেয়া যায়।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৬৩ জনকে, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে নেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৪২ হাজার ২৬৬ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ৯৭২ জন, এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন থেকে মোট ছাড় পেয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫০ জন। বর্তমানে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক মিলিয়ে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ৬৩ হাজার ৮৯৬ জন। দেশে কোয়ারেন্টিনের জন্য ৬২৯টি প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে সেবা দেয়া যাবে ৩১ হাজার ৯৯১ জনকে।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, কেন্দ্রীয় ঔষধাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) গত ২৪ ঘন্টায় বিতরণ হয়েছে ৮ হাজার ৬০০টি। এ পর্যন্ত সংগ্রহ ২৫ লাখ ২৮ হাজার ২৪৫টি। এ পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ২৩ লাখ ৫৬ হাজার ৮৪০টি। বর্তমানে ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৩১টি পিপিই মজুদ রয়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় হটলাইন নম্বরে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫২টি এবং এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৫টি ফোন কল রিসিভ করে স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৩৮৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। ২৪ ঘন্টায় আরও ৫ জন চিকিৎসক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।

ডা.নাসিমা সুলতানা জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬০৯ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৩ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২১ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ হাজার ২৪৮ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৮০ হাজার ৫৩৩ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯৯ জন এবং এ পর্যন্ত ১৭ হাজার ২১৩ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২১ জুন পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৭ লাখ ৮ হাজার ৮ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ৪৪৩ জন এবং এ পর্যন্ত ৪ লাখ ৬১ হাজার ৭১৫ জন বলে তিনি জানান।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়। তিনি বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান