করোনাযুদ্ধে প্রথম সারির যোদ্ধা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সরকারি নির্দেশনা মানা এবং বিদেশফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে সরকারের সামনের সারির কর্মী পুলিশ এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে যাতে করোনা ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপে এ ছুটি ছিল ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল। পরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে জনগণকে ঘরে রাখতে এবং বিদেশফেরতদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশের দুই লক্ষাধিক সদস্য প্রথম থেকেই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। গত ২৩ মার্চ সরকার দেশজুড়ে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ২৫ মার্চ তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্যরা পাঁচটি জেলার অধীনে ১৯টি উপকূলীয় উপজেলায় কাজ করছেন এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্যরা নিকটস্থ বিএএফ ঘাঁটি থেকে জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং গুরুতর রোগীদের পরিবহনে নিযুক্ত রয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিট একসাথে কাজ করছে। ‘তারা সরকারের দেয়া নির্দেশনা দক্ষতার সাথে পালন করে চলেছে।’ তিনি বলেন, লোকজনের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা বিদেশফেরতদের খুঁজে বের করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অনেকেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা না মানায় সেনা সদস্যরা এই নির্দেশনা লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর হতে শুরু করেছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পরিচালক লে. কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তার অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সারাদেশে সামাজিক দূরত্ব এবং হোম কোয়ারান্টাইন কঠোরভাবে নিশ্চিত করছে। তিনি বলেন, তারা করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করছেন। জায়েদ বলেন, উপকূলীয় উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্যরা একই দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের সমুদ্র ও নদীতে ছোট-বড় ট্রলার দিয়ে মাছ ধরার কাজে থাকা জেলেদের সতর্ক করার সাথে জড়িত রয়েছে ৯টি নৌ-জাহাজ। তিনি আরও বলেন, তাদের (জেলেদের) পরিবারের মধ্যে সচেতনতার বিষয়েও পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।

আইএসপিআর পরিচালক জানিয়েছেন, নৌবাহিনীর সদস্যরা জেলেদের মধ্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাস্ক এবং সাবান সরবরাহ করছেন। এছাড়াও গরীব ও দুস্থদের মাঝে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়তার জন্য চাল ও ডালসহ বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক আইএসপিআর কর্মকর্তা বলেছেন, যারা সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ সোমবার করোনাভাইরাসে আরও তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে। এছাড়া নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩৫ জন। এনিয়ে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১২ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১২৩ জনে দাঁড়িয়েছে। সূ্ত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/শারমিন আক্তার