করোনার সনদ সংগ্রহে কুমিল্লায় বিদেশগামীদের ভোগান্তি চরমে

কুমিল্লায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান এবং সনদ সংগ্রহে বিদেশগামী যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা ও নমুনা সংগ্রহে ধীরগতিসহ নানা জটিলতা পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে নারী ও বয়স্ক যাত্রীদের বিড়ম্বনা বেশি।

বিদেশগামী যাত্রীদের ফ্লাইট ধরার ৪৮ ঘণ্টা আগে করোনার সনদ গ্রহণ করতে গিয়ে নানা নিয়মের বেড়াজালে পড়তে হচ্ছে। প্রথমে এক দিন আগে কুমিল্লা সদরের জেনারেল হাসপাতালে নমুনা প্রদান করতে হয়। এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শেষে পরের দিন বা এর এক দিন পর জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে সনদ সংগ্রহ করতে হয়।

এ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সনদ না পেয়ে বিদেশ যাত্রা বাতিলের অভিযোগও করেছেন অনেকে।সরকার

বিদেশগামীদের জন্য কোভিড নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করলেও সব জেলায় করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় বৃহত্তর কুমিল্লার নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনীর প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদেশগামীদের কুমিল্লায় আনুষঙ্গিক কাজ করতে গিয়ে নানা ঝাক্কি-ঝামেলা অতিক্রম করতে হচ্ছে। এরপর রয়েছে ভিসার মেয়াদ সাপেক্ষে সময় মতো বিমানের টিকিট প্রাপ্তির বিষয়।

বিদেশগামী যাত্রীদের অভিযোগ, দূর-দূরান্ত থেকে এসে নমুনা প্রদান বা সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায় অফিসে তালা ঝুলছে, কোনো মেডিকেল টেকনিশিয়ান নেই। সকাল সাড়ে ১০টা বা ১১টার দিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহের পর রেজিস্ট্রেশন ফি সংগ্রহ করা হয়। এ কাজগুলো শেষ করতেই দুপুর অতিক্রম করে। এ দীর্ঘ সময় ধরেই অপেক্ষা করতে হয়।

ফেনীর ছাগলনাইয়া থেকে আসা জসিম উদ্দিন নামে দুবাইগামী এক যাত্রী বলেন, ফ্লাইটের মাত্র দুই দিন আগে রেজিস্ট্রেশন করে নমুনা দিয়েছেন তিনি। এত অল্প সময়ে সব কাজ শেষ করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি এ প্রক্রিয়ার সময় বাড়ানো বা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সনদ দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের কাতারগামী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে নমুনা দিতে এসে দেখি অফিসে তালা ঝুলছে, কেউ নেই। দুই ঘণ্টা পর একজন এসে কাগজপত্র জমা নিলেও, দুপুরে ১টার দিকেই কর্তৃপক্ষ জানায় যে আর কাগজপত্র নেবে না।

যাত্রীদের এ ভোগান্তির বিষয়ে সিনিয়র মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. জহির জানান, কাগজপত্র পরীক্ষা, রেজিস্ট্রেশন ফি ও করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় ঠিক সময়ের মধ্যে সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানায়, কুমিল্লায় ছয় জেলার বিদেশগামীদের সরকারি নিয়ম মেনে করোনার সনদ দেয়া হচ্ছে। গত ২০ জুলাই থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৫৫ জন বিদেশগামীর নমুনা সংগ্রহ শেষে রিপোর্ট প্রদান করা হয়েছে। তার মধ্যে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে ১৩১ জনের। পজেটিভ আসাদের যাত্রা বাতিল হয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নমুনা সংগ্রহ এবং সনদ প্রদানে একটু ভোগান্তিতে পড়তেই হবে বিদেশগামীদের। এখানে সবাই কুমিল্লার বাসিন্দা না। পার্শ্ববর্তী আরও পাঁচটি জেলা থেকে অনেককে কুমিল্লায় আসতে হচ্ছে সনদ নেয়ার জন্য।’

একটি মাত্র বুথ দিয়ে ছয়টি জেলার মানুষকে সেবা দিতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘লোকবল সংকটের কারণেই সময় মতো সনদ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’