করোনায় আক্রান্তের হার কমেছে, বেড়েছে সুস্থতা

দেশে করোনাভাইরাস শনাক্তের ১৫০তম দিনে ২৪ ঘন্টায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের হার কমেছে। সুস্থতার হার বেড়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ৭ হাজার ৭১২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ হাজার ৯১৮ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় গত ২৪ ঘন্টায় শনাক্তের হার ২৪ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগেরদিন ৪ হাজার ২৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৩৫৬ জন। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় এই হার ছিল ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ সুস্থতার হার ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ।
আজ দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত অনলাইন হেলথ বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য জানান।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, দেশে এ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ১ হাজার ২৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ২০ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। মোট পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ।
তিনি জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় হাসপাতাল এবং বাসায় মিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৯৫৫ জন। গতকালের চেয়ে ৮৮৯ জন বেশি সুস্থ হয়েছেন। গতকাল সুস্থ হয়েছিলেন ১ হাজার ৬৬ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩৯ হাজার ৮৬০ জন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, আজ শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ৫৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আগের দিনের চেয়ে আজ সুস্থতার হার শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৫০ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকালের চেয়ে আজ ২০ জন বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল ৩০ জন মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশে এ ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ২৩৪ জন। করোনা শনাক্তের বিবেচনায় আজ মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ। গতকাল মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গতকালের চেয়ে আজ মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেশি।
ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ‘করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘন্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৮ হাজার ১২৩ জনের। আগের দিন সংগ্রহ করা হয়েছিল ৪ হাজার ২৩৮ জনের। গতকালের চেয়ে আজ ৩ হাজার ৮৮৫টি নমুনা বেশি সংগ্রহ করা হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় দেশের ৮৩টি পরীক্ষাগারে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৭ হাজার ৭১২ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল ৪ হাজার ২৪৯ জনের। গত ২৪ ঘন্টায় আগের দিনের চেয়ে ৩ হাজার ৪৬৩টি বেশি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে পুরুষ ৪৪ জন এবং নারী ৬ জন। তাদের মধ্যে ৪৫ জন হাসপাতালে এবং ৫ জন বাড়িতে মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৫৪৯ জন পুরুষ এবং ৬৮৫ জন নারী মারা গেছেন।
অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৭ জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ৫ জন এবং ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে ১ জন রয়েছেন। এ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক মৃত্যুর সংখ্যা এবং শতকরা হার: শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, দশমিক ৫৬ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ৩২ জন, দশমিক ৯৯ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৮৭ জন, ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ২১২ জন, ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ৪৪৮ জন, ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৯৩০ জন, ২৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি ১ হাজার ৫০৭ জন, ৪৬ দশমিক ৬০ শতাংশ।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টায় বিভাগ ভিত্তিক মৃত্যু হয়েছে- ঢাকায় ২৯ জন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ৫ জন করে, খুলনা ও রংপুরে ৪ জন করে এবং বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহে ১ জন করে। এ পর্যন্ত বিভাগ ভিত্তিক মৃত্যু সংখ্যা এবং শতকরা হারে দেখা গেছে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৫৪৯ জন, ৪৭ দশমিক ৯০ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৭৫ জন, ২৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে ১৯৮ জন, ৬ দশমিক ১২ শতাংশ; খুলনা বিভাগে ২৩১ জন, ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে ১২৭ জন, ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ; সিলেট বিভাগে ১৫৪ জন, ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ; রংপুর বিভাগে ১২৪ জন, ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৭০ জন, ২ দশমিক ১৫ শতাংশ।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, ‘ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ১১৫ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৭৪ জন। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ২৪৪ জন, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ২১ জন। সারাদেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৫৭৫ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৮৯ জন। সারাদেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪০টি, রোগী ভর্তি আছে ৩ হাজার ৯৩৪ জন এবং শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ৩০৬টি। সারাদেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৫৫টি, রোগী ভর্তি আছে ২৮৪ জন এবং খালি আছে ২৭১টি। সারাদেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৪৯০টি। সারাদেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৩৩৩টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ১৫৯টি।
০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৪৭৪ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৪৯১ জন। আইসোলেশন থেকে ২৪ ঘণ্টায় ৭০৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ১৫৬ জন ছাড় পেয়েছেন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশন করা হয়েছে ৫২ হাজার ৬৪৭ জনকে।
তিনি জানান, প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ১ হাজার ৭শ’ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮৩২ জনকে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৪৩৮ জন এবং এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৭১৬ জন ছাড় পেয়েছেন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৫৪ হাজার ১১৬ জন।
নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৭১৮টি, ৩৩৩ এই নম্বরে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫৯ হাজার ২৭৩টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫ নম্বরে ফোন এসেছে ২৮৩টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘন্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৭১ হাজার ৭৩। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৮২ হাজার ৩টি।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘন্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘন্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৩৯৭ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৬২৭ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্যকর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।
তিনি জানান, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৮০৮ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৮ লাখ ৩৪০ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ হাজার ৮৫০ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২১ লাখ ৮৭ হাজার ১৫ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৮৩৮ জন এবং এ পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৭৫ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ৩ আগস্ট পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে ২৪ ঘন্টায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৭ জন। এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ কোটি ৭৯ লাখ ১৮ হাজার ৫৮২ জন। ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ হাজার ৮১০ জন এবং এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৩ জন বলে তিনি জানান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে সবাইকে ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, সর্বদা মুখে মাস্ক পরে থাকা, সাবান পানি দিয়ে বারবার ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, বাইরে গেলে হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার, বেশি বেশি পানি ও তরল জাতীয় খাবার, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, ডিম, মাছ, মাংস, টাটকা ফলমূল ও সবজি খাওয়াসহ শরীরকে ফিট রাখতে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ-নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হয়।
ডা.নাসিমা সুলতানা বলেন, ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ তা অতিরিক্ত ঝুঁকি তৈরি করে।