করোনায় বিলম্বিত সিরিজ ১০ মাস পর শুরু করছে শ্রীলংকা ও ইংল্যান্ড

গত বছরের মার্চে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে শ্রীলংকা সফরে এসেছিলো ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ায় সফরে আনুষ্ঠানিক কোন ম্যাচ না খেলেই দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হয় ইংলিশরা। অবশেষে দশ মাস পর সিরিজটি কাল থেকে শুরু করতে যাচ্ছে শ্রীলংকা ও ইংল্যান্ড। করোনাভাইরাসের সমস্যা মাথায় নিয়েই সিরিজ শুরু করতে হচ্ছে ইংলিশদের। গল-এ আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্টটি।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে খেলার পথে টিকে থাকতে সিরিজ জয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জো রুটের নেতৃত্বাধীন দলটির জন্য। তবে দলের দুই গুরুত্বপুর্নূ খেলোয়াড় বেন স্টোকস ও জোফরা আর্চারকে ছাড়া সিরিজ শুরু করতে হচ্ছে ইংল্যান্ডকে।
এ ছাড়া করোনা পজিটিভ হওয়ায় দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই ছিটকে পড়েছেন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার মঈন আলি। গত ৩ জানুয়ারি শ্রীলংকা পৌঁছানোর পর করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হন মঈন।
এর আগে করোনার কারনে গত ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হয়েছিলো ইংল্যান্ড। প্রোটিয়া দলের কয়েকজন খেলোয়াড়-স্টাফা করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।
শ্রীলংকায় জৈব-সুরক্ষা পরিবেশে দলের সকলে একত্রে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জনি বেয়ারস্টো।
বেয়ারস্টো বলেন, ‘সবাই একত্রে আছে। এটাই দলের শক্তি এবং কোভিডের পুরো সময় জুড়ে এই ঐক্যবদ্ধ থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।’
২০১৯ সালে দেশের হয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন বেয়ারস্টো। গল-এ সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে আবারো দলে ফেরার আশা করছেন তিনি।
প্রথম টেস্টে খেলার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা ছিলো অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসের। কিন্তু করোনা আক্রান্ত মঈনের সংস্পর্শে আশায় সাত দিনের আইসোলেশনে ছিলেন তিনি।
তবে গত সোমবার থেকে দলের সাথে অনুশীলন শুরু করা ওকস বলেন, ‘আমি খেলার আশা করছিলাম, স্টোকস না থাকায় অলরাউন্ডার হিসেবে আমি ও স্যাম কারান দলের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারতাম। তবে এটি হতাশার। কারন এই টেস্টে আমি তা করতে পারছি না। কিন্তু পরিস্থিতি সব সময়ই আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।’
আগামী বুধবার আইসোলেশন শেষ হবে মঈনের। ১৮ জনের দলে প্রধান দুই স্পিনার হিসেবে আছেন ডম বেস ও জ্যাক লিচ।
ম্যাচে মিডিয়াম পেসাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে ইংল্যান্ড দলে তিনজন রিজার্ভ স্পিনার রয়েছে। তারা হলেন- ম্যাসন ক্রেন, ম্যাট পার্কিনসন ও আমার ভির্ডি।
কোচ ক্রিস সিলভারউড বলেন, ‘যদি প্রয়োজন পড়ে আমরা বেশি স্পিনার খেলাতে পারি। সবাই এখানেই আছে, তারা তৈরিও আছে। আমরা এখানে বড় গ্রুপ হয়েই এসেছি, যাতে কোন সমস্যা হলে তা সামাধান করা সম্ভব হয়।’
২০১৮ সালে শ্রীলংকা সফরে তিন ম্যাচের সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন দুই স্পিনার মঈন ও লিচ। সিলভারউড জানান, স্বাগতিদের ডেড়ায় প্রতিপক্ষকে আবারো হারানোর সামর্থ্য তাদের রয়েছে।
সিলভারউড বলেন, ‘এখানে জয় পাওয়া কঠিন। আমি মিকি আর্থারের (শ্রীলংকার প্রধান কোচ) কমেন্ট পড়েছি। তিনি ২০১৮ সালে আমাদের সিরিজ জয়ের স্মৃতিতে ফিরে গেছেন এবং তারা ঐ হারের প্রতিশোধ নিতে চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জিততে পারি, আমি কি বিশ্বাস করি? অবশ্যই। আমি সর্বদা বিশ্বাস করি আমাদের দল যেকোন দলকে হারাতে পারে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায় আছেন নতুন মুখ এসেক্সের ব্যাটসম্যান ড্যান লরেন্স । সিলভারউড জানান, ২৩ বছর বয়সী লরেন্স আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ।
প্রথমবারের মত হওয়া বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপের পয়েন্ট টেবিলে চতুর্থস্থান রয়েছে ইংল্যান্ড। শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। লর্ডসের ফাইনালে খেলার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে এ সিরিজ জয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে ইংল্যান্ডের।
সদ্যই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুই ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হেরেছে শ্রীলংকা। সিরিজে ইনজুরিতে পড়া ব্যাটসম্যান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও পেসার কাসুন রাজিথার পরিবর্তিত কাউকে বেছে নিতে হবে লংকান টিম ম্যানেজমেন্টকে।
উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান নিরোশান ডিকবেলা জানান, তাদের অনুপস্থিতি দলের জন্য বড় ধাক্কা, সে দিক থেকে শ্রীলংকা এখনো সমস্যার মধ্যে রয়েছে।
স্টোকস-আর্চারকে ছাড়া ইংল্যান্ড অনেকটাই দুর্বল। আগামী মাসে ভারত সফরের আগে, এই সফরের জন্য তাদের বিশ্রামের অনুমতি দেয়া হয়।
ডিকবেলা বলেন, ‘আমি মনে করি, এটি কঠিন সিরিজ হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে কন্ডিশনের সাথে তুলনা করলে এবং স্টোকস-আর্চারসহ আরো কিছু খেলোয়াড়ের অনুপুস্থিতিতে আমাদের ভালো সুযোগ থাকছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমরা এটিকে সহজভাবে নিচ্ছি না। আমরা শুধুমাত্র আমাদের স্বাভাবিক খেলাটি খেলতে চাই।
বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান আরও যোগ করে বলেন, ‘আমরা ইংল্যান্ডকে সহজভাবে নিচ্ছি না। কিন্তু আমি মনে করি, আমাদের সিরিজ জয়ের ভালো সুযোগ রয়েছে।’