করোনা ভাইরাসের কারণে চীনে আটকা ৫০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চীনে এখন পর্যন্ত ৪১ জন প্রাণ হারিয়েছে। দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই এই ভাইরাস ছড়ানো শুরু হওয়ায় এ শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছি্ন্ন রয়েছে। ফলে সেখানে ৫০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি আটকা পড়েছেন।

উহানে থাকা বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে ৫০০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি। উহান থেকে বাস, ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ ঘরে থাকছেন। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খাবার সংকটেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে কোনও বাংলাদেশি আক্রন্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদেশের দূতাবাস নিজ দেশের ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কেউ খোঁজ-খবর নেয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

হুবেই ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল অ্যান্ড অটোমোশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন রাকিবিল তূর্য। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের ইউনিভার্সিটিতে বাঙালি আছি আমরা প্রায় ২০০ জন। শীতকালীন ছুটি থাকায় ৬০-৭০ জন দেশে গেছে আগেই। পুরো শহর বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আমরা সবাই বন্দি দশায় আছি। নিজেদের সেফভাবে চলতে হচ্ছে। আর ইউনিভার্সিটি থেকে যথেষ্ট হেল্প করছে। বাংলাদেশি কেউ আক্রান্ত হইছে এখনও এমন খবর পাওয়া যায়নি। সিটি লকডাউনের জন্য খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই ভয়ে আছি। কারণ ভাইরাস খুব দ্রুত স্প্রেড হচ্ছে। আমাদের আশেপাশে ভারত, শ্রীলংকার যারা আছেন তারা জানিয়েছেন, উহানে তাদের যে নাগরিক রয়েছে তাদের চেকআপ করিয়ে তাদের দেশে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু আমাদের দূতাবাস এখনও কোনও খবর নেয়নি। কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানতে পারিনি। আমরা চাইলেও এখন দেশে ফিরে যেতে পারছি না।’

তূর্য বলেন, উহানে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন আমরা প্রায় ১৫০ জন আছি।

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সবাই খুব চিন্তায় আছি। পরিস্থিত খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বলা যায় মৃত্যুপুরীতে আছি। সবাই উৎকণ্ঠায় আছি। দোকানপাট বন্ধ, ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। দূতাবাস থেকে এখনও কেউ যোগাযোগ করেনি। আমরা দ্রুত দেশে ফিরতে চাই।’

হুবেই ইউনির্ভাসিটি অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী শাফায়াত উল্লাহ খান বলেন, ‘কিছু কিছু সংবাদে বলা হচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আমাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু দূতাবাস থেকে আমাদের কোনও খোঁজ নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলিয়াস আহমেদ বলেন, ‘বাজার, দোকান, সুপারশপ বন্ধ। ভ্যাকেশন টাইম, ক্যান্টিনও বন্ধ।আমরা বাঙালিরা রান্না করে খাই। যাদের যা মজুত আছে শেষ হয়ে গেলে খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। খুব শঙ্কার মধ্যে সময় পার করছি। আমরা সবাই রুমে বন্দি।’

আরেক শিক্ষার্থী মাহিন ইসলাম বলেন, ‘এখানের অবস্থা খুব একটা ভালো না। একটু আতঙ্কের মধ্যে আছি। রাস্তাঘাটে কোনও মানুষ নেই। বাজারে খাবার-দাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।আমরা চাই বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি থেকে আমাদের খোঁজখবর নেওয়া হোক। এখানের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তারা একটা সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের জন্য ভালো হবে।’

চীনে বাংলাদেশি দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন মাসুদুর রহমান টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি কেউ আক্রান্ত হয়নি। পুরো উহান শহর লক ডাউন। যার কারনে আমরা চাইলেও তাদের কাছে যেতে পারছি না। তবে আমরা খোঁজ খবর রাখছি। শিক্ষার্থীদের অনেকের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। ওরাও চাইলে আমাদের কাছে আসতে পারবে না। সেখানে খাবারের একটা সংকট আছে। আমরা চীন সরকারকে বলেছি তারা যেন এ বিষয়ে নজর দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীন সরকারের কিছু বিধি নিষেধ আছে। চাইলেই আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। সব কিছুতে তাদের ওপর নির্ভরশীল। আমরা প্রতিনিয়ত দেশে আপডেট তথ্য পাঠাচ্ছি। এই মুহূর্তে বাংলাদেশি কাউকেই দেশে পাঠানোর কোনও সুযোগ নেই। কারণ চীন সব বিমানবন্দরও বন্ধ রেখেছে।’

আজকের বাজার/এমএইচ