কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নে টেক্সটাইল খাতে বিকল্প জ্বালানি জরুরি

দেশে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হোম টেক্সটাইল রপ্তানি বাণিজ্যে অবদান রাখছে। চাহিদামতো বিনিয়োগ পেলে এই সেক্টরের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কর্মসংস্থানও বাড়বে। হোম টেক্সটাইল ব্যবসায় পরিচিত ব্যক্তিত্ব শাহাদাত হোসেন সোহেল। টাওয়েল টেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন দীর্ঘদিন। তাঁর এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের হোম টেক্সটাইল খাতের সম্ভাবনা, সমস্যা, ভবিষ্যৎ করণীয় ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক আজকের বাজার ও এবিটিভি’র সঙ্গে। কথোপকথনের অনুলিখন তাঁরই ভাষায় আজকের বাজারে ছাপা হলো।

হোম টেক্সটাইল সেক্টরে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাসের সমস্যা। এই সেক্টরে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হলেও গ্যাসের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। ২০১০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কার্যত কোনো সমাধান হয়নি। এ কারণে বিনিয়োগও বাড়ছে না। নতুন করে কেউ  বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না। কারণ হোম টেক্সাটাইলের মূল জিনিসটা হচ্ছে গ্যাস ও ইলেকট্রিসিটি। যদিও এখন ইলেকট্রিসিটির সমস্যা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।

অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলেও দেখা যাবে আমাদের দেশের বিদ্যুতের অবস্থা  ভালো, কিন্তু গ্যাসের অবস্থা খুবই খারাপ। দুঃখের সংবাদ হচ্ছে, গত ৮ বছরে দেশে গ্যাসের কোনো উন্নতি হয়নি, বরং খারাপের দিকে গেছে। সরকার চেষ্টা করছে এলপিজি আনার জন্য। আমাদের যে রিসোর্সেস আছে, এটার সাথে যদি বিকল্প জ্বালানি হিসেবে আমদানীকৃত গ্যাস আনতে না পারি, তাহলে টেক্সটাইল সেক্টর থেকে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাবে না।  টেক্সাইল সেক্টরে উন্নতির জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগও দরকার। বিনিয়োগ পেতে হলে আমাদের গ্যাস লাগবে। কিছুদিন আগেও  একটি প্রথম শ্রেণির দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ আটকে আছে। এই বিনিয়োগটি হলে আমাদের দেশে কর্মসংস্থান অনেক বাড়বে।

বিশ্ব ইকোনমিতে বিনিয়োগ একধরনের রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চায়না থেকে অনেক বিনিয়োগ সরে আসছে। ইন্ডিয়া ট্রাই করছে আমাদের সমপর্যায়ে আসার জন্য।  কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম আমাদের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে। ওদের ওখানেও শিল্প গড়ে উঠছে। মিয়ানমারও ট্রাই করছে। তবে আমরা জিনিসটাকে ক্যাপিটালাইজ করতে পারছি না। আমাদের এখানে ইনফ্রাস্ট্রাকচার হয়ে গেছে। ব্যাকওয়ার্ড় লিংকেজও হয়ে গেছে। এখন যেগুলো হয়ে গেছে, তার মধ্য থেকে ওভারহেড কস্ট কমাতে হবে। আরও বেশি বিনিয়োগ করলে ওভারহেড খরচগুলো কমে আসবে। এতে মানুষ  যেমন লাভের মুখ দেখবে, দেশও লাভবান হবে।

আমরা এখন ৩০ বিলিয়ন এক্সপোর্ট করি। ৫০ বিলিয়নে যাওয়ার জন্য আমাদের যে প্রস্তুতির দরকার, তার প্রথম শর্ত হচ্ছে গ্যাস। আমি এত করে বলছি কারণ হচ্ছে, আমার মনে হয় বিষয়টি নিয়ে তেমন কেউ ভাবছে না। অথচ বিনিয়োগের প্রধান শর্ত হচ্ছে জ্বালানি, গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি। কিন্তু এগুলো আমরা পাচ্ছি না। ব্যাংকিং খাতটা এখন একটা ডিসিপ্লিনের মধ্যে আছে।

পোর্ট সিচুয়েশনও খারাপের দিকে যাচ্ছে, কিন্তু সহনীয় পর্যায়ে আছে। সরকার মনোযোগ দিলে এটার সমাধান দুই মাসের ব্যাপার। এখন একটি ভ্যাসেল আসতে ছয় থেকে সাত দিন লেগে যাচ্ছে। অনেক বিদেশি ভ্যাসেল আসতে চায় না। ওরা চিন্তা করে ওখানে গিয়ে বসে থাকার চেয়ে আমি সিঙ্গাপুরে বসে থাকি। যদিও এগুলো ছোট বিষয়। এক্সপোর্টের জন্য এগুলো বড় বাধা নায়। কিন্তু বিনিয়োগটা আসতে হবে।

বিনিয়োগ এলে ফ্যাক্টরি হবে, কর্মসংস্থান হবে, ইকোনমি মোবিলাইজেশন হবে। সব মিলিয়ে আমরা খুব দ্রুত একটা জায়গায় পৌঁছে যেতে পারব।

বিদ্যুতের উন্নতি হলেও গ্যাসের কোনো উন্নতি নেই
টেক্সটাইল সেক্টরের ভিত্তি হচ্ছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ। বর্তমানে বিদ্যুতের বেশ উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু গ্যাসের কোনো উন্নতি নেই। গ্যাস না থাকলে টেক্সটাইলে প্রথম স্টেপই অতিক্রম করা সম্ভব নয়। বর্তমানে বিকল্প হিসেবে অনেকে হাস্ক নিয়ে কাজ করছে, ফার্নেস অয়েল নিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও চিন্তা করেছিলাম, নতুনভাবে বিনিয়োগ করলে ফার্নেস অয়েল নিয়ে বিনিয়োগ করব। কিন্তু এটির মধ্যেও ভেজাল রয়েছে। এই ভেজাল তেল দিয়ে বয়লার চালাতে গেলে অনেক সমস্যা হয়। তবে আমরা তো অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এলপিজিটা নিয়ে এলে এর সমাধান হবে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আমাদের দেশের মানুষ অনেকটা মেনেই নিয়েছে। আমার জানামতে, গভর্নমেন্ট ভর্তুকি তো দিচ্ছেই না, বরং লাভ করে। গণশুনানিতে শুনেছি, ২২ পয়সা করে লাভ করে। গত বছর সরকার তিতাস গ্যাসের ফান্ড থেকে নিয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, লাভ হচ্ছে। আমাদের যুক্তি হচ্ছে, গভর্নমেন্ট তো ব্যবসা করবে না। গভর্নমেন্ট তো সেবা করার জন্য।

সব দেশের হোম টেক্সটাইলই গ্যাস বেইজড
বিশ্বের যেসব দেশ টেক্সটাইলে ভালো অবস্থানে আছে, তারাও গ্যাস বেইজড। কারণ, এক গজ কাপড়ের যে দাম বা একটি জিন্স প্যান্টের যে দাম, এতে গ্যাস  ছাড়া বিকল্প অন্য জ্বালানি ব্যবহার করলে কস্ট অনেক বেশি পড়ে যাবে। একইভাবে টাওয়েল হোক বা অন্য যেকোনো টেক্সটাইলেরও একই অবস্থা। এক গজ টাওয়েল তৈরিতে গ্যাস ছাড়া অন্য জ্বালানি ব্যবহার করলে খরচ ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। টার্কিতে অন্যান্য খরচ অনেক কম। যেমন টার্কি থেকে পণ্য ইউরোপে আড়াই দিন বা তিন দিনে পৌঁছে যায়, যেখানে আমাদের লাগে ২৭ থেকে ৩০ দিন। তাদের গ্যাসের কোনো ইন্টারাপশন নেই। তাদের প্রোডাকশনের কোনো ইন্টারাপশন নেই। এখন গুজরাটেও গ্যাসের ব্যবস্থা করে ফেলছে।

বিশ্ববাজারে আমাদের অ্যাডভান্টেজ অনেক

সারা পৃথিবীতে হোম টেক্সটাইলে আমাদের অ্যাডভান্টেজ অনেক। সারা পৃথিবীর কাস্টমার আমাদের থেকে কিনতে চায়। কারণ, আমাদের থেকে কিনে তাদের মুনাফাটা বেশি হয়। তবে মুনাফা বেশি হয় বলে যে আমাকে বেশি দাম দেয়, সেটা না। অন্য দেশের সাথে কম্পেয়ার করে। তবে আমাদের থেকে কিনলে মুনাফাটা বেশি পায়। আপনি হয়তো জানেন, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মালয়েশিয়াতে আমরা ডিউটি ফ্রি। কিন্তু চায়না ইন্ডিয়াতে ডিউটি ফ্রি না। ইন্ডিয়া কানাডায় ডিউটি ফ্রি না। পাকিস্তান কানাডায় ডিউটি ফ্রি না। আমেরিকায় আমরাও ডিউটি ফ্রি না।

আমেরিকার কথা যদিও ভিন্ন। ওখানে অনেক বড় মার্কেট। ৩০ কোটি মানুষের বাজার। সেখানে বিভন্ন ধরনের কাস্টমার আছে। মিড লেভেল, আপার লেভেল ও লো লেভেলের লোক আছে।

প্রফিট কমেছে, বিদেশিদের কর্তৃত্ব বেড়েছে

আজ থেকে ২০ বছর আগে যে প্রফিট পাওয়া গেছে, এখন সেই প্রফিট পাওয়া যাচ্ছে না। তার ওপরে আবার রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর শুরু হয়েছে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। অ্যাকর্ড  ও অ্যালায়েন্স। কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। আমার বাড়ির দরজা কোন দিকে হবে, কেমন হবে; সব তাদের ইচ্ছামতো। একেক দিন একেকটা নিয়ে হাজির হচ্ছে। গার্মেন্টসের অনেক বন্ধুর কাছে ফ্রাস্ট্রেশনের কথা শুনি। দেখা যায় যে সব ঠিক আছে, সব হয়ে গেল, এমন সময় ওনাদের একজন ভিজিটর এসে বলল যে সবই ঠিক আছে, এখন একটু এইভাবে করতে হবে। আবার দেখা যাবে দুই মাস পর একই ঝামেলা। নতুন নতুন নীতিমালা। সরকারের নীতিনির্ধাকেরা বললেই হয়, ‘তোমরা একেক দিন একেক নীতিমালা নিয়ে আসছ কেন?’
ওরা পাকিস্তানে গিয়ে বা ভারতে বা অন্য কোনো রাষ্ট্রে গিয়ে এসব করতে পারে বলে মনে হয় না। মাঝখান থেকে পেয়েছে আমাদের। সবাই  এসে  কেবল মাতুব্বরি করে আমাদের ওপর।

আজ থেকে ২৫-৩০ বছর আগে দেখা যেত, বিদেশিরা আমাদের গণতন্ত্র ঠিক আছে কি না দেখতে আসত। এখন অর্থনৈতিক দিকে সেই চাপ শুরু হয়েছে। হুটহাট করে বলে বসে, এটা এটা ঠিক থাকলে জেএসপি পাবেন। কিন্তু এ রকম কেন হচ্ছে ঠিক বুঝি না। আমার কথা হচ্ছে, ওনাদের যেমন আমার প্রয়োজন,  তেমনি আমাদের দিয়েও তো ওনাদের প্রয়োজন মিটছে। তাই বিষয়লো মিউচ্যুয়ালি হওয়া উচিত। ওই পক্ষ আর এই পক্ষের ব্রিজ হচ্ছে সরকার। সরকারের দৃঢ় মানসিকতাই বিষয়টি রিচ করতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সংগঠনের করণীয়

টেক্সটাইলের নানা সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কোনো এক সেমিনারে একজন বিদেশি অ্যাম্বাসেডর অ্যাকর্ড কিংবা অ্যালায়েন্স, আমাদের ওপর মাতুব্বরি, লেবার ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন করতে হবেÑ এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুললে আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী সুন্দরভাবে, দৃঢ়ভাবে প্রতিউত্তর দিয়েছেন।

আমার মনে হচ্ছে, ধীরে ধীরে শুভ দিকগুলো হচ্ছে। দু-আড়াই বছর ওরা আমাদের ওপর বেশ খবরদারি করেছে। এখন আর সেই সময় নেই। আমরা যখন বিদেশে যাই, ওদের অনেক বিষয়ও চোখে পড়ে। কিন্তু উন্নত বিশ্ব বলে ওদের গায়ে একটা লেভেল এঁটে গেছে। তাই হয়তো ভাবে আমরা ওদের ত্রুটিগুলো জানি না।

তাই আমাদের আগে একটা জায়গায় আসতে হবে। পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, চায়না বলেন বা অন্য যেকোনো রাষ্ট্রে ওরা পাত্তা পাবে না। শুধু আমাদের ওপর যত কর্তৃত্ব। ওই যে বললাম, একটু দুর্বল হলে সবাই সাজেশন দিতে আসে।

একটা সময় টাওয়েল সেক্টরও দেশে বিপণন করবে

আমরা ধীর পায়ে এগোচ্ছি। ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট যেটা হচ্ছে, আমাদের ১৬-১৭ কোটি মানুষের দেশ। বিশাল বাজার। আমাদের বায়িং পাওয়ারটাও বাড়ছে, আস্তে আস্তে মিডল ক্লাস বড় হচ্ছে। লোয়ার মিডল ক্লাস থেকে আপার মিডল ক্লাস হচ্ছে। এটা একটা শুভ দিক।

আজ হোম টেক্সাইল নিয়ে বিদেশের বাজারে স্ট্রাগল করছিÑ প্রাইজ কমিয়ে দিচ্ছি, সুতার দাম বেড়ে যাচ্ছে (গত কয়েক দিনে সুতার দাম যেভাবে বেড়েছে), আমরা শঙ্কিত। অথচ যখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাবে, আমাদের বাজারটা যখন বড় হবে। আমাদের বাজারটা যেমন আছে, এখানে জোগান দেওয়ার মতো ইন্ডাস্ট্রি এখনো নেই। আমাদের পুরোনো ট্র্যাডিশনাল যেসব জায়গা (বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদী) থেকে কাপড়ের যে পরিমাণ জোগান হয়-, এটা একটা সময় পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু একটু ভালো লেভেলে যে কাপড়টা হয়, এটা হোম টেক্সাটাইল
হোক টেরি টাওয়েল বা বেডশিট হোক, এটা জোগান দেওয়ার জন্য যখন আমাদের দরকার হয়ে পড়বে তখন নট এনাফ। সো বাজারটা বড় হলে আমরাও তখন চিন্তাভাবনা করব।

ইউরোপে টেক্সাইল ফ্যাক্টরি নেই, টেরি টাওয়েল ফ্যাক্টরি নেই, গার্মেন্টস নেই। গার্মেন্টসের জোগান বলেন, কাপড়ের জোগান বলেন, তখন আমাদের দিতে হবে। তা ছাড়া কেনার জন্য ওদেরও যাওয়ার আর জায়গা নেই।

হোম টেক্সটাইল সেক্টরে প্রতিনিয়ত কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে

হোম টেক্সটাইল সেক্টরে প্রতিনিয়ত কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে। আমাদের ১০ হাজার কোটি টাকার যে বিনিয়োগটা পাইপলাইনে আছে, গ্যাস সমস্যার সমাধান যদি হয়ে যায়, তাহলে প্রতিনিয়ত প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আমাদের এই সেক্টরটাও যেহেতু লেভার বেইজ, এই যে ৪০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করছে গার্মেন্টস সেক্টরে, আমাদের হোম টেক্সটাইলে কাজ করছে প্রায় ৪ লক্ষ। এটা বেড়ে কম সময়ের মধ্যে ১০ লক্ষে পৌঁছে যাবে। অর্থাৎ আরও ৬ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। বাজার বাড়বে। লোকাল বাজার বড় হবে। ইনকাম যখন বেড়ে যাবে, তখন এই বাজারটাও বেড়ে যাবে। লোকাল টাওয়েলের কনজামশন বেড়ে যাবে। লোকাল বেডশিটের কনজামশন বেড়ে যাবে।

মানুষের যখন উন্নয়ন হয়ে যাবে, যে বাড়িতে একটা বেডশিট লাগে, সেখানে তখন ৩টা বেডশিট লাগবে। যে বাড়িতে একটা টাওয়েলে চলে, তখন প্রতিজনে একটি করে টাওয়েল লাগবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে আল্টিমেটলি এই জিনিসগুলোই বাড়বে।

সেক্টরের শঙ্কা

হোম টেক্সটাইল সেক্টরে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, গ্যাস কানেকশনটা যদি বেশি দেরি হয়ে যায়, তবে বাজারগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা  দেবে। তখন বাজারটা টেনে আনা দুরূহ হয়ে যাবে। এটাই আশঙ্কার জায়গা। আর এ কারণেই যত দ্রুত সম্ভব এই গ্যাস সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমাদের একসময় ইলেকট্রিসিটির সমস্যা ছিল। সেটা এখন নেই। সমাধান হয়ে গেছে। এখন গ্যাস সমস্যার সমাধানটা হলে আর কোনো আশঙ্কা আমাদের থাকবে না।

বাজেটে প্রত্যাশা

এবারের বাজেটে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রত্যাশা রাখি।  সরকারের নীতিনির্ধারকগণ যেভাবে বাড়াবেন, গ্যাসের দাম সেভাবেই বাড়বে। তবে গ্যাস ও বিদ্যুৎ শুধু আমরা ব্যবহার করি এমন না; সাধারণ মানুষও ব্যবহার করে। তবে আমাদের ভর্তুকিটা যেন সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয় সেই প্রত্যাশা রাখি।

এক্সপোর্ট যেটা হয়, সেটা বাইরে চলে যাচ্ছে। যেহেতু এটা ব্যবহার করে জিনিসটা বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। সারা বিশ্বে দিনে দিনে ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে। হোম টেক্সটাইলে যে যত পারছে, দাম কমিয়ে সেল বাড়াচ্ছে। ওই প্রেসারটা এসে আমাদের ওপর পড়ছে।

সারা দুনিয়ায় বর্তমানে কাস্টমাররা খুব বেশি হিসাব করে আসে। যেমন একজন কাস্টমার প্লেনে ওঠার আগেই হিসাব কষেÑ সুতার দাম কত, কেমিক্যালের দাম কেমন, বাংলাদেশে শ্রমিকের মূল্য কতÑ সব মিলিয়ে মাইন্ড সেটআপ করেই আসে ও এত ডলার দেবে। পারলে আরও ১০-২০ সেন্ট করে কমাবে। এখন আমরা যারা এই সেক্টরে চলে এসেছি; আমাদের আর ফিরে যাওয়ার জায়গা নেই। আমাদের এখানেই থাকতে হবে। এ বিষয়গুলো নিয়েই চলতে হবে। এ জন্য চাইব বাজেটে গ্যাস ও বিদ্যুতে সরকার যেন একটু ভর্তুকি দেয়।

হোম টেক্সটাইলে পাকিস্তান দুই বছর জিএসপি প্লাস ফেসিলিটি পেয়েছে। ২০১৪-১৫ এবং ২০১৫-১৬। বাংলাদেশে যাদের মাঝারি ধরনের ফ্যাক্টরি, তারা প্রচুর সাফার করছে। এবং অনেকটা বন্ধের পর্যায়ে। ব্যাংকের লোন ঠিকমতো দিতে পারছে না, ফ্যাক্টরি ঠিকমতো চালাতে পারছে না। কারণ অর্ডার নেই। ইউরোপের অর্ডার সবগুলো পাকিস্তানে চলে যাচ্ছে। পাকিস্তানিদের তো কোনো দামের বালাই নেই। ওরা যে দাম পায়, সেই দামেই অর্ডার নেয়। এক বছর পর বা দুই বছর পর সে নিজেই দেউলিয়া হবে, এটা ওদের চিন্তায়ই নেই। আরেকজনের মুখের খাবার কেড়ে খাওয়াটাই ওদের লক্ষ্য।

মাঝারি ও ছোট ফ্যাক্টরিগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য ভর্তুকিটা বাড়িয়ে দেওয়া জরুরি। একবার একটা ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে ফের চালু করাটা টাফ। তাই এই ট্রানজেকশন পিরিয়ডের জন্য আমি বলব ভর্তুকিটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।  ইতোমধ্যে এটা নিয়ে আমরা অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। ফিন্যান্স সেক্রেটারির সাথেও কথা বলেছি। তিনি যথেষ্ট সহমর্মী মনোভাব পোষণ করেছেন। এখন সামনের বাজেটে আমাদের মাঝারি ফ্যাক্টরিগুলোর জন্য কিছু করতে পারলে এই সেক্টরটা ভালোভাবে ট্রানজেকশন পিরিয়ডটা কাটাতে পারবে।

শাহাদাত  হোসেন  সোহেল
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টাওয়েল টেক্স লিমিটেড