কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা কেড়ে নেওয়ায় ভারতকে পাকিস্তানের হুমকি

Indian army soldiers guard during restrictions in Jammu, India, Monday, Aug. 5, 2019. India's government issued a revocation of the special constitutional status of its portion of Kashmir on Monday amid an uproar in Parliament and a huge troop deployment in the region. The constitutional provision forbids Indians from outside the region from buying land or permanently settling in the Muslim-majority territory. (AP Photo/Channi Anand)

কাশ্মীরে জরুরি অবস্থা জারি করে এবং সেখানকার রাজনৈতিক দলের নেতাদের গৃহবন্দি করে রেখে রাজ্যটিতে কয়েক দশক ধরে আরোপিত ৩৭০ ধারা যা রাজ্যটিকে বিশেষ মর্যাদা দেয়, তা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভারত। মোদি সরকারের এমন ঘোষণার পর তা ঠেকাতে সব ধরনের বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছে পাকিস্তান।

সোমবার ভারতের রাজ্যসভায় কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল হয়ে যাওয়ার পর এই হুমকি দিলো ইসলামাবাদ।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য মতে, সোমবার সকালে সংসদ অধিবেশন শুরু হতেই তুমুল বাধা ও বাগ-বিতণ্ডার মধ্যে রাজ্যসভায় সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন অমিত। এই মর্মে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে, যাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোভিন্দ স্বাক্ষরও করেছেন। এই ধারা তুলে নেয়া হলে বিলুপ্ত হবে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা। স্বাভাবিক ভাবেই এই ধারার অধীনে ৩৫এ ধারারও বিলুপ্তি ঘটবে। মোদি সরকারের নেয়া এমন সিদ্ধান্তকে অনৈতিক আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান।

গত কয়েকদিন ধরেই জম্মু-কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীর অতিরিক্ত প্রায় ২৫ হাজার সেনা মোতায়েন, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ঘিরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো।

ভারত সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়। এতে ভারত সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বলা হয়েছে, অধিকৃত কাশ্মীর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিতর্কিত অঞ্চল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের একতরফা কোনো পদক্ষেপই বিতর্কিত অঞ্চলের স্ট্যাটাসকে পরিবর্তন করতে পারে না। কারণ এটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ভারত অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানের জনগণ মেনে নেবে না।আন্তর্জাতিক এই বিবাদের একটি পক্ষ হিসেবে ভারতের নেয়া অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) যদি মনে করে যে, তাদের সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ, তাহলে তারা প্রেসিডেন্টের আদেশের মাধ্যমে গভর্নর শাসিত আইন জারি কিংবা এটি নিয়ে রাজনীতি করতো না। যদি তারা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর এবং লাদাখকে পৃথক দুটি অঞ্চল করে, তাহলে এতে প্রমাণিত হয় যে, তারা আশা হারিয়েছে… আজ ভারত আবারও আন্তর্জাতিক বিশ্বের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি বিতর্কিত ইস্যুকে পুনরুজ্জীবিত করলো। এতে সমস্যার সমাধান হবে না, বরং উত্তেজনা বাড়বে। তারা এটিকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। সময়ই বলবে, ভারত এটি নিয়ে কী ধরনের বিপজ্জনক খেলা খেললো।

এর আগে রোববার রাতে রাজধানী শ্রীনগর আর জম্মু অঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের সব স্কুল-কলেজ। গোটা রাজ্যে মোবাইল টেলিফোন আর ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় রাত দেড়টা নাগাদ কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি আর সাজ্জাদ লোনকে গৃহবন্দি করা হয়েছে। রাজ্য জুড়ে চলছে ধরপাকড়।

কাশ্মীর নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বাতাসে নানা কথা ভেসে বেরাচ্ছিলো। এই রাজ্যটি নিয়ে মোদি সরকার যে কিছু একটা গোপন ফন্দি আঁটছেন তার ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছিলো নানা কর্মকাণ্ডে। অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে দিয়ে হঠাৎ করেই কাশ্মীরে পাঠানো হয়েছিল অতিরিক্ত সেনা। পর্যটকদেরও সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় জম্মু-কাশ্মীর পুলিশকে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও শোনা যায়। ব্যাপক গন্ডোগোলের আশঙ্কায় সাধারণ মানুষ ভিড় জমাতে থাকে খাবারের দোকান আর পেট্রোল পাম্পগুলোতে।

প্রসঙ্গত, এই ৩৭০ ধারা বাতিল বিজেপি’র পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলোর একটি। এই ধারার কারণেই কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দারাই শুধুমাত্র সেখানে বৈধভাবে জমি কিনতে পারতেন, সরকারি চাকরি করার সুযোগ পেতেন এবং সেখানে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারতেন।

আজকের বাজার/এমএইচ