কুমিল্লার গাছে গাছে আমের মুকুল

পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের‘মামার বাড়ি’কবিতার পংক্তিগুলো, আয় ছেলেরা, আয় মেয়েরা/ফুল তুলিতে যাই, ফুলের মালা গলায় দিয়ে/মামার বাড়ি যাই। ঝড়ের দিনে মামার দেশে/আম কুড়াতে সুখ, পাকা জামের মধুর রসে/রঙিন করি মুখ। গাছে গাছে ফুলের সমাহার। কুমিল্লায় প্রতিটি গাছের শাখায় শাখায় নতুন ফুলে বাংলার প্রকৃতিকে এক অপরূপ সাজে সাজিয়েছে। বিশেষ করে গাছে গাছে আমের মুকুল যেন বাংলার প্রকৃতিকে অপরুপ করে তুলেছে। আমের মুকুল দেখতে যেমন-তেমন, এর মৌ মৌ গন্ধ পাগল করে সকল বাঙালিকেই। মৌমাছির দল গুন গুন শব্দে, মনের আনন্দে আহরণ করে মধু। মৌমাছির এ গুন গুন সুরও কেড়ে নেয় অনেক প্রকৃতি প্রেমির মন। ফালগুন এলেই বাংলার পত্রহরিৎ অরণ্যে নতুন এ পত্র-কুড়ি দেখা যায়। নতুন ফুলে-ফুলে ভরে ওঠে গাছের শাখা। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। তবে সুখের ঘ্রাণ বইতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এ মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ।

মাঘের সন্ন্যাসী হয়ে শীত বিদায় নিয়েছে প্রকৃতি থেকে। ফালগুনের প্রথম দিনেই বর্ণাঢ্য আয়োজনে বরণের মধ্য দিয়ে বাংলা পঞ্জিকায় সদ্যই অভিষিক্ত ঋতুরাজ বসন্ত। হলুদ, বাসন্তী আর গাঢ় লালচে ফুলে ফুলে সেজেছে গ্রাম বাঙলা। আগুনঝরা ফাগুনের আবাহনে ফুটেছে শিমুল-পলাশ। কুমিল্লার গ্রামের মেঠোপথে কখনও কখনও দূর সীমানা থেকে কানে ভেসে আসছে কোকিলের কুহু কুহু কলতান। এরই মধ্যে বসন্তের আগুনরাঙা গাঁদা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুলও। আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে এখনই মৌ মৌ করতে শুরু করেছে কুমিল্লার চারিদিক। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাস আন্দোলিত করে তুলছে মানুষের মন। ঋতু বৈচিত্রে কুমিল্লায় সবুজ প্রকৃতির আমেজ এখন অনেকটা এমনই আবেগের হয়ে উঠেছে। বসন্তের ফাগুন আর আমের মুকুল যেন একই সুতোয় গাঁথা। বছরের নির্দিষ্ট এ সময়জুড়ে তাই চাষি তো বটেই, কমবেশি সব শ্রেণির মানুষেরও দৃষ্টি থাকে সবুজ পাতায় ঢাকা আমগাছের শাখা-প্রশাখায়। সদ্য মুকুল ফোটার এমন দৃশ্য এখন ইট-পাথরের গড়া নগর থেকে শুরু করে বিস্তৃত কুমিল্লার গ্রামীণ জনপদেও।

আমের মাস বলতে জ্যৈষ্ঠ মাসকে বোঝালেও কুমিল্লা অঞ্চলে সাধারণত বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে এখানকার গাছের আম হাট-বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। সেই হিসেবে এবারে মাঘ মাসের শুরু থেকেই এখানকার আমগাছগুলোতে মুকুলের সমারোহ বলে দিচ্ছে ব্যাপক ফলনের ইতিবাচক লক্ষণ। ফালগুন-চৈত্রে এসব মুকুল শেষ পর্যন্ত গাছে টিকে থাকলে কুমিল্লায় আমের বেশ ভালো ফলন মিলবে। সরেজমিনে দেখা যায় কুমিল্লার চান্দিনার উপজেলার এতবারপুর, জোয়াগ, গলাই, নবাবপুর, বরকইট, শুহিলপুর, বাড়েরা, মাইজখার, জয়দেবপুর, বাতাঘাসী, বরকরইসহ অন্যান্য ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ল্যাংড়া, ফজলি, হিমসাগর ও আশ্বিনিজাতের আমগাছগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। হলুদ বর্ণের মুকুল সূর্যের সোনালী আলোয় যেনো অপরূপ রঙ ছড়াচ্ছে।

অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবারে কুমিল্লার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষীরা। এবার রেকর্ড পরিমাণ মুকুল এসেছে। যেসব আমগাছে গত কয়েক বছরেও মুকুলের দেখা মেলেনি সেসব গাছের ডাল-পালা, পাতা মুকুলে ঢাকা পড়েছে। মুকুলের সমারোহ দেখে বাড়ির লোকদের মনে-প্রাণে আনন্দ বইছে। অনেকেই মুকুল রক্ষার জন্য কৃষি অফিসে গিয়ে কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিচ্ছেন। কেউ কেউ গাছের যত্নে বেশ মনোযোগী উঠেছেন। আমগাছগুলোতে মুকুলের ব্যাপক সমারোহ দেখে উপজেলার উদ্ভিদবিদরা বলছেন এবারে কুমিল্লায় আমের ব্যাপক ফলনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক সুরজিত চন্দ্র দত্ত বলেন, কুমিল্লায় ব্যক্তি উদ্যোগে বৃহৎ আম বাগান না থাকলেও পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নেই কম বেশি আম গাছ বা ছোট ছোট বাগান রয়েছে। আম এর ভালো ফলনের জন্য আমরা যে কোন ব্যক্তিকেই পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান