কুমিল্লায় ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা ও জৌলুস ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

এককালের খরস্রোতা ডাকাতিয়া নদী এখন মৃতপ্রায়। নেই জোয়ার-ভাটার উত্তাল ঢেউ। অবৈধ দখল আর দূষণে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে নদীটি। চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। নতুন উদ্যোগে নাব্যতা ও জৌলুস ফিরে আসবে ডাকাতিয়ার। এ সংবাদে নদী এলাকার মানুষ খুশি।

সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২০৭ কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ৬৭ মিটার(২২০ ফুট)। এটি মেঘনার একটি উপনদী। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে কুমিল্লা জেলার বাগসারা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং পরবর্তীতে চাঁদপুর ও লক্ষীপুর জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি কুমিল্লা-বৃহত্তর লাকসাম, চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও হাজীগঞ্জ উপজেলা অতিক্রম করে চাঁদপুর মেঘনা নদীতে মিলিত হয়েছে। নদীটির ধরন প্রকৃতি সর্পিলাকার। নদীটির নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে। এ নদী দিয়ে একসময় মগ-ফিরিঙ্গি জলদস্যুরা নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় প্রবেশ করত এবং নদীতে ডাকাতি হতো। ডাকাতের উৎপাতের কারণে নদীটির নাম ডাকাতিয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আবার কারো কারো মতে, ডাকাতিয়া নদীর করাল গ্রাসে দুই পাড়ের মানুষ সর্বস্ব হারাত। জীবন বাঁচাতে ডাকাতিয়া পাড়ি দিতে গিয়ে বহু মানুষের সলিলসমাধি রচিত হয়েছে। ডাকাতের মতো সর্বগ্রাসী বলে এর নামকরণ হয়েছে ডাকাতিয়া নদী।

বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত থাকলেও এ ডাকাতিয়া নদী একসময় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জন্য সুফল বয়ে এনেছে। নদীতে চলতো স্টিমার ও বড় বড় নৌকা। পণ্য পরিবহন ছিল সহজলভ্য। কৃষকরা পেতো সেচ সুবিধা। বর্ষা মৌসুমে ডাকাতিয়ার গর্জন শুনতে দুই ধারে চোখে পড়তো পর্যটকদের ভিড়। ডাকাতিয়া নদীতে একসময় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন সুস্বাদু মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে গভীরতা ও প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় খুব বেশি মাছ পাওয়া যায়না। তবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি’র আন্তরিকতা ও তৎপরতায় ডাকাতিয়ার নাব্যতা ও জৌলুস ফিরে আসার বিষয়ে আশার আলোর দেখছেন নদী এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। মন্ত্রী নদীটির নাব্যতা ফিরে আনার পাশাপাশি নদীর দুই তীরকে দৃষ্টিনন্দিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছেন।

এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি এলজিআরডি মন্ত্রীর নেতৃত্বে ডাকাতিয়া নদীর লাকসাম অংশে পরিদর্শনে আসেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার। এসময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ খলিলুর রহমান, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীরসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরিদর্শকালে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, পূর্বের ন্যায় ডাকাতিয়ার নদীর নাব্যতা ও জৌলুস ফিরে আনা হবে। নির্বিঘ্ন নৌ-চলাচলের মাধ্যমে ব্যবসায়ী, সেচ সুবিধার মাধ্যমে কৃষকরা যাতে নদীটির সুফল ভোগ করতে পারে এজন্য শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান