কুমিল্লায় সাড়ে ১২শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই

কুমিল্লায় দুই হাজার ১০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক হাজার ২৫৩টিতেই কোন শহীদ মিনার নেই। মাত্র ৮৫৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার রয়েছে। উপজেলা ওয়ারী শহীদ মিনার বেশি রয়েছে নাঙ্গলকোটে ১৩৮টি, সবচেয়ে কম মেঘনায় মাত্র ৭টি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পর থেকে অস্থায়ীভাবে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে প্রতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে আসছে বাঙ্গালি জাতি। ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপনের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ শুরু হয়।

একটি মহানগরী, ৮টি পৌরসভা ও ১৭টি উপজেলার ৩ হাজার ৮৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুমিল্লা জেলায় দুই হাজার ১০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও এক হাজার ২৫৩টিতেই কোন শহীদ মিনার নেই। এ সকল বিদ্যালয়ের বাইরেও জেলায় রয়েছে অসংখ্য কিন্ডার গার্টেন, আনন্দ স্কুল, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা। এ সকল প্রতিষ্ঠানে রয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সেগুলোতেও শহীদ মিনার না থাকায় শিক্ষার্থীরা মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে না। জেলার উপজেলা ওয়ারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ও শহীদ মিনারের সংখ্যা যথাক্রমে- আদর্শ সদরে বিদ্যালয় ১০৯টি এবং শহীদ মিনার ৪৪টি। সদর দক্ষিণে বিদ্যালয় ৯০টি এবং শহীদ মিনার ৩০টি। লালমাইয়ে বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৭টি এবং শহীদ মিনার ২১টি। লাকসামে বিদ্যালয় ৭৬টি এবং শহীদ মিনার ২০টি। এছাড়া মনোহরগঞ্জে বিদ্যালয় ১০৪টি এবং শহীদ মিনার আছে ২২টি। চৌদ্দগ্রামে বিদ্যালয় ১৭৫টি এবং শহীদ মিনার ১১১টি। নাঙ্গলকোটে বিদ্যালয় ১৫১টি এবং শহীদ মিনার ১৩৮টি। চান্দিনায় বিদ্যালয় ১৩৬টি এবং শহীদ মিনার ১০৮টি। বরুড়ায় বিদ্যালয় ১৫৪টি এবং শহীদ মিনার ৪৮টি।

তাছাড়া ব্রাহ্মণপাড়ায় বিদ্যালয় ১০৮টি এবং শহীদ মিনার ১১টি। বুড়িচংয়ে বিদ্যালয় ১৪৯টি এবং শহীদ মিনার ৬৩টি। মুরাদনগরে বিদ্যালয় ২০৪টি এবং শহীদ মিনার ৮৬টি। দেবিদ্বারে বিদ্যালয় ১৮৫টি এবং শহীদ মিনার ৫৬টি। দাউদকান্দিতে বিদ্যালয় ১৪৯টি এবং শহীদ মিনার ১৭টি। তিতাসে বিদ্যালয় ৯২টি এবং শহীদ মিনার ৫০টি। হোমনায় বিদ্যালয় ৯৩টি এবং শহীদ মিনার ২২টি। মেঘনায় বিদ্যালয় ৬৫টি এবং শহীদ মিনার আছে ৭টি। এ ব্যাপারে সুজন কুমিল্লার সভাপতি আলী শাহ মো. আলমগীর খান বলেন,‘প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীর তার ভাষা ও ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে জানার অধিকার রয়েছে। শিক্ষার্থী যে বিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জন করবে সেখানে শহীদ মিনার থাকবে না তা হতে পারে না।’ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার না থাকা প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বলেন, শিক্ষার্থীদের মহান ভাষা দিবস সম্পর্কে সচেতন হওয়ার জন্য শহীদ মিনার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের মাঝে দেশপ্রেম, বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা, মাতৃভাষা ও বাঙ্গালি জাতির প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার স্থাপনসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তৎপর রয়েছে। যে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, আমরা এ সকল বিদ্যালয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। আশা করছি পর্যায়ক্রমে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান