কুড়িগ্রামে পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষে সাফল্য

কুড়িগ্রামে প্রথমবারের মতো পতিত জমিতে সূর্যমূখী চাষ করে সাফল্য পেয়েছে চাষিরা। এই চাষের ফলে একদিকে যেমন আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে পতিত অনাবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। সংশ্লিষ্টরা বলছে, সূর্যমূখী থেকে পাখির খাবারের পাশাপাশি কোলস্টরেলমুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পামওয়েল ও সয়াবিনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রেহাই পাবেন ভোক্তারা। এই ধারণা থেকে চর ও দ্বীপচরগুলোতে কৃষিবিভাগ প্রণোদনার মাধ্যমে ব্যাপক জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনতে পারলে পাল্টে যেতে পারে এই এলাকার চিত্র। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম গ্রামের ধরলা নদী তীরবর্তী সর্দারপাড়া এলাকায় শীর্ণ ধরলা নদীর বুকে প্রায় ৭ একর জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছেন কৃষক আবু বকর সিদ্দিক। শুরুতে কেউ কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও যখন কুঁড়িগুলো পাখনা মেলে প্রস্ফুটিত হয়ে হলুদ বর্ণে ছেঁয়ে যেতে লাগল, তখন সেসব দেখতে মুগ্ধ হয়ে ছুটে আসতে লাগলেন সৌন্দর্য পিপাসুরা। তার সূর্যমূখীর ফলন দেখতে প্রতিদিন দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম শহরের হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা কৃষক আবু বকর সিদ্দিক জানান, পতিত চরের জমিতে আগে তিনি কলা, বাঁধাকপি, ফুলকপি লাগিয়েছিলেন। এতে খরচও বেশি, আবার সেই তুলনায় লাভ অনেক কম। এবারই প্রথম কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও সহযোগিতায় প্রথম সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। গত বছরের নভেম্বর মাসের ২০ তারিখে সারি সারি করে চারা লাগিয়েছেন। তিন মাসের মধ্যে ফুল দেয়া শুরু করেছে। চারমাসের মধ্যেই ফলন পাওয়া যায় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সূর্যমূখী চাষে কৃষি বিভাগ থেকে ১০ কেজি বীজ ও সার হিসেবে ইউরিয়া, পটাশ, জিপসাম ও ড্যাপ পেয়েছেন। এছাড়াও জমি তৈরি, বীজ লাগানো, পরিচর্চা, পানি সরবরাহ করতে গিয়ে তার প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে তিনি জানান, সূর্যমূখীর পাতা ছাগল-ভেড়া খাওয়ার ফলে অনেক ক্ষতি হয়। এছাড়াও ছেলেমেয়েরা ফুল তুলে নিয়ে যায় এতেও সমস্যা হয়।সূর্যমুখী চাষ দেখতে আসা কৃষক ওমর ফারুক, আবেদ আলী ও জামাল জানান, আমরা খবর পেয়ে এখানে এসেছি। ফলন দেখে সত্যিই আমরা অভিভূত। লাভজনক ও স্বাস্থ্যসম্মত সূর্যমুখী চাষে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান প্রধান জানান, জেলার ১৬টি নদ-নদীকে ঘিরে রয়েছে ৫ শতাধিক চর ও দ্বীপচর। এসব চরে কৃষি বিভাগ পরীক্ষামূলকভাবে প্রতিবন্ধকতা সহনশীল ফসল চাষাবাদ করে পতিত জমিগুলোকে চাষাবাদের আওতায় আনার কাজ করছে। চলতি বছর জেলায় ৫৫ একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে, যার ফলনও হয়েছে বাম্পার। তিনি আরও বলেন, সূর্যমূখী সয়াবিনের বিকল্প তেল হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এতে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কম। এছাড়াও পশুপাখির খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান