কৃষি প্রণোদনা পেয়ে উপকৃত হলেন নাটোরের সাড়ে ২২ হাজার কৃষক

চলতি অর্থ বছরে জেলার সাড়ে ২২ হাজার কৃষক কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এককালীন প্রণোদনা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন। কৃষি বান্ধব সরকারের এই সহায়তা এবং নতুন-নতুন প্রযুক্তি আর প্রশিক্ষণ হস্তান্তর এবং কৃষকদের প্রচেস্টায় নাটোর পরিণত হয়েছে খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলায়।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কৃষক পর্যায়ে প্রদত্ত এসব প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে আটটি শস্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সার ও বীজ বিতরণ এবং আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে ভর্তূকি প্রদান। একবিঘা জমি চাষের জন্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে জেলার ২০ হাজার ৭৬৫ জন কৃষককে। আর ৪০ জন কৃষক পেয়েছেন কৃষি যান্ত্রিকীকরণের লক্ষ্যে কম্বাইন্ড হারভেষ্টার ও রিপার মেশিন। বর্তমানে জেলার এক হাজার ৬০০ কৃষককের জন্যে বাড়ির আঙিনায় সব্জি চাষে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪২ লাখ ১৬ হাজার টাকা।
প্রদত্ত প্রণোদনার মধ্যে সর্বাধিক সাড়ে চার হাজার কৃষককে প্রদান করা হয়েছে ৫৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা মূল্যমানের ভুট্টা বীজ ও সার প্রদানের মাধ্যমে প্রণোদনা। তিন হাজার কৃষক পেয়েছেন সর্বাধিক ৫৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা মূল্যমানের গমের বীজ ও সার প্রণোদনা। চার হাজার ৪০০ কৃষক পেয়েছেন ৪৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মূল্যমানের মুগ ডালের বীজ ও সার, তিন হাজার কৃষক পেয়েছেন ২৪ লাখ ছয় হাজার টাকা মূল্যমানের সরিষার প্রণোদনা, দুই হাজার ৭৬৫ জন কৃষক পেয়েছেন ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার আউশ প্রণোদনা, এক হাজার ৬০০ কৃষক পেয়েছেন৪২ লাখ ১৬ হাজার টাকার সব্জি প্রণোদনা, এক হাজার ২০০ কৃষক পেয়েছেন নয় লাখ ৬৯ হাজার টাকার তিল প্রণোদনা এবং ২০০ কৃষক পেয়েছেন তিন লাখ ৪৩ হাজার টাকার পেঁয়াজ প্রণোদনা। এছাড়া ১০০ কৃষক পেয়েছেন আউশের বীজ সহায়তা। অন্যদিকে জেলার ৩৭ জন কৃষককে কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন ক্রয়ে সরকার ভর্তূকি প্রদান করেছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা এবং তিনটি রিপার মেশিন ক্রয়ে ভর্তূতি প্রদান করেছে প্রায় পৌনে তিন লাখ টাকা। পারিবারিক কৃষির আওতায় সব্জি পুষ্টি বাগান কর্মসূচীর অধীনে এক হাজার ৬০০ কৃষকের অনুকূলে বরাদ্দ মোট ৪২ লাখ ১৬ হাজার টাকা খুব দ্রুতই কৃষক পর্যায়ে প্রদান করা হবে।
প্রণোদনা প্রদানের পাশাপাশি কৃষকদের নিয়মিত শস্য ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান, নতুন নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং কৃষকদের সমন্বিত প্রচেস্টায় নাটোর পরিণত হয়েছে শস্য উদ্বৃত্ত জেলায়। বছরে জেলায় এক লাখ ১৩ হাজার ২২ হেক্টর জমিতে আউশ, রোপা আমন ও বোরো ধানের চাষ হয়। উৎপাদিত পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ২৫৩ টন চালের মধ্যে জেলার আড়াই লাখ টন চালের বাৎসরিক চাহিদা পূরণ করে আড়াই লাখ টনের বেশী উদ্বৃত্ত থাকছে। পেঁয়াজ ও রসুন উৎপাদনেও নাটোর জেলা উদ্বৃত্ত। জেলায় ২৪ হাজার টন পেঁয়াজের চাহিদার বিপরীতে চার হাজার ৩৭৮ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয় ৭২ হাজার ৭৬২ টন। অর্থাৎ প্রায় পঞ্চাশ হাজার টন উদ্বৃত্ত। অন্যদিকে সারাদেশে সর্বাধিক রসুন উৎপাদনকারী জেলা নাটোর। বছরে জেলায় ২১ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমি থেকে এক লাখ ৭৮ হাজার ৫৭৮ টন রসুন পাওয়া গেছে। ২০ হাজার টন জেলার চাহিদা পূরণ শেষে উদ্বৃত্ত থাকছে এক লাখ ৫৮ হাজার টন।
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদুল ইসলাম জানান, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ সকল প্রচেস্টাকে সমন্বিত করে কৃষকদের পাশে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের পাশে নিরবচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করছে।
নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক সুব্রত কুমার সরকার বাসস’কে বলেন, কৃষি বান্ধব সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার পাশাপাশি খাদ্য রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করা। করোনা পরিস্থিতিসহ বৈশ্বিক মন্দার মোকাবেলায় সরকার কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান করেছে। নানাভাবে সহযোগিতা করছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তি পর্যায়ের কৃষকদের। এর সুফল হিসেবে নাটোর বিভিন্ন শস্য উৎপাদনে উদ্বৃত্ত জেলায় পরিণত হয়েছে।