কেরাণীগঞ্জে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ঋণ নিয়ে অনেক নারী পুরুষ স্বাবলম্বী

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ক্ষুদ্র ঋণ কেরানীগঞ্জের দারিদ্র বিমোচনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এ প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে শাত শত পরিবার দারিদ্র বিমোচন করছে। কেরানীগঞ্জের বেকার যুবক-যুবতী, গৃহিনী ও দরিদ্র চাষীরা এ প্রকল্পের থেকে ঋণ নিয়ে দাারিদ্র বিমোচন করেছেন। এ প্রকল্পের আওতায় হাাঁস মুরগী, গরু-ছগল, মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন প্রকল্পে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে আনেক অসহায় নারী-পুরুষ সফল উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। পাশাপাশি পরিবারের দারিদ্রতা দূর করে নিজেদের করেছেন স্বাবলম্বী। এতে কেরানীগঞ্জে দরিদ্রের সংখ্যা কমার সাথে সাথে বেকারত্বের সংখ্যাও কমেছে অনেকাংশে।

জানা যায়, সমাজে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পরা দরিদ্র জনগোষ্টীকে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। প্রতিটি বাড়িকে খামারে পরিণত করতেই সরকার এ প্রকল্প পরিচালনা করছে। করোনা কালিন সময় এ প্রকল্পের যে সব সদস্যরা আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার লক্ষ্যে সরকার কর্মশৃজন ঋণ নামে একটি বিশেষ ঋণ কার্যক্রম চালু করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় কেরানীগঞ্জে প্রতিজনকে ৫০ হাজার করে ১’শ জনকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে।

আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন করে পরিবারে সচ্ছলাতা ফিরিয়ে আনছেন এমন একজন হলেন কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মোঃ সাইফুল মিয়া। তিনি বলেন আমি একজন কৃষক। কিন্তু শুধু কৃষি কাজ করে আমার পরিবারের দারিদ্রতা দূর করতে পারছিলাম না। আমি প্রথমে একটি বাছুর দিয়ে গবাদি পশু পালন শুরু করি। গবাদি পশু পালন লাভ জনক হওয়ায় আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে খামার পদ্ধতিতে গবাদিপশু পালন শুরু করি। বর্তমানে আমার খামারে ১২টি গরু রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ কেজি দুধ পাওয়া যায়।

এ দুধ বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে প্রয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। বাস্তা ইউনিয়নের রাজাবাড়ি এলাকার সফল উদ্যোক্তা সোনিয়া বেগম জানান, তিনি প্রথমে ১০টি মুরগী ও ১০টি -হাঁস দিয়ে হাঁস-মুরগী পালন শুরু করেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তিনি হাঁস-মুরগীর সংখ্যা বাড়াতে পারছিলেন না। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে তিনি খামার পদ্ধতিতে হাঁস-মুরগী পালন করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছেন। বর্তমানে তার খামারে দেড়শ মুরগী এবং ২’শ হাঁস রয়েছে। তারানগর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মো. রুবেল এ প্রকল্প থেকে কয়েক ধাপে ঋণ নিয়ে মুদি দোকান করে সফল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়েছে। এছাড়াও তারানগর ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের মো. জামাল ও মো. আমিনুল ইসলাম ঋণ নিয়ে গবাদি পশু পালন করে সফল খামারি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। পাশা পাশি দুর করেছেন তাদের দারিদ্রতা।

এ ব্যাপারে তারানগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক বাসসকে বলেন, আমার এলাকার প্রায় কয়েক’শ দরিদ্র জনগণঁ আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প থেকে সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ,কৃষি কাজ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করে সফল হয়েছেন। এতে একদিকে যেমন বেকারত্বের সংখ্যা কমেছে অপরদিকে দারিদ্রতা দূর করে তারা নিজেদের সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পর উপজেলা সমন্বয়কারী মো. ফয়সাল আহমেদ বাসসকে জানান, আমার বাড়ি আমার খামার সরকারে একটি বিশেষ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র জনগোষ্টীর আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কেরানীগঞ্জের ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে আমরা ৬০ জন নারী-পুরুষের সমন্বেয়ে সমিতি গঠন করে তাদের সঞ্চয়ে উদ্ভদ্ধ করি।

এবং তাদের সঞ্চয়ের পাশা পাশি পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সদস্যকে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমরা প্রথমে ১০ হাজার টাকা করে ঋণ দিয় থাকি। পর্যায়ক্রমে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকি। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত সফল উদ্যোক্তাদের ৫০ হাজার টাকা করে ১’শ জনকে ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে আরো অধিক ঋণ নিয়ে থাকি। আমরা কেরানীগঞ্জ উপজেলায় গত এক বছরে ৩ হাজার জন উদ্যোক্তাকে ঋণ দিয়েছি। এর মধ্যে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পর মাধ্যমে ১হাজার জনকে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়। এবং পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ২ হাজার জনকে ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছি।