কোনো প্লাটফর্মই র‌্যানসমওয়্যার থেকে নিরাপদ নয়

সফোসল্যাবসের পর্যালোচনা
ক্ষতিকর সফটওয়্যার র‌্যানসমওয়্যারে আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চলতি বছরও বিশ্বে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। কোনো প্লাটফর্ম এ ধরনের হামলা থেকে নিরাপদ নয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সফটওয়্যার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান সফোসল্যাবস এক প্রতিবেদনে এমনটাই দাবি করেছে। সফোসল্যাবস চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা তাদের গ্রাহকদের কম্পিউটার থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। পরে সংগৃহীত তথ্য পর্যানলোচনা করে র‌্যানসমওয়্যার ও অন্যান্য সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ‘সফোসল্যাবস ২০১৮ ম্যালওয়্যার ফোরকাস্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে উইন্ডোজ সিস্টেমে র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণের প্রাধান্য ছিল। অ্যান্ড্রয়েড, লিনাক্স এবং ম্যাকওএস প্লাটফর্মও র‌্যানসমওয়্যারের হামলা থেকে নিরাপদ ছিল না।

সফোসল্যাবসের নিরাপত্তা গবেষক ও সফোসল্যাবস ২০১৮ ম্যালওয়্যার ফোরকাস্ট প্রতিবেদনের কন্ট্রিবিউটর ডোরকা পলোতায় জানান, র‌্যানসমওয়্যার প্লাটফর্ম-অজ্ঞেয়বাদীতে পরিণত হয়েছে। র‌্যানসমওয়্যার সাধারণত উইন্ডোজ কম্পিউটারকে লক্ষ্য করে হামলা করে। তবে চলতি বছর বিশ্বজুড়ে আমাদের গ্রাহকদের বিভিন্ন ডিভাইস ও অপারেটিং সিস্টেমে র‌্যানসমওয়্যারের ছদ্মবেশী-হামলার হার বেড়ে গেছে।
গত মে মাসে একযোগে বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশের তিন লাখের মতো কম্পিউটার সিস্টেম ওয়ানাক্রাই র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণের শিকার হয়। এটি অন্যান্য র‌্যানসমওয়্যার ভাইরাসের চেয়ে আলাদা ছিল না। অর্থাৎ ওয়ানাক্রাই র‌্যানসমওয়্যারের মাধ্যমে প্রথমে কোনো কম্পিউটারে সংরক্ষিত ডাটা লক করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তথ্য ফিরে পেতে ভুক্তভোগী ব্যবহারকারীর কাছ থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। সাইবার অপরাধীদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ পরিশোধ করা হলেই কেবল আক্রান্ত ডিভাইসের ফাইল আনলক করে দেয়া হয়। ওয়ানাক্রাই র‌্যানসমওয়্যারের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাজুড়ে পরে একই ধরনের আক্রমণ চালানো হয়। এক্ষেত্রে র‌্যানসমওয়্যারের হালনাগাদ সংস্করণ ব্যবহার করা হয়, যাকে বলা হচ্ছে পেট্যয়া। পলোতায় বলেন, পেট্যয়া হামলার উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয়, কারণ এ সাইবার আক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক ভুল এবং ফাঁকফোকর ছিল। ২০১৬ সালে প্রথম ওয়ানাক্রাই র‌্যানসমওয়্যারের সন্ধান মেলে।
সফোসের তথ্যমতে, বিশ্বের সব র‌্যানসমওয়্যার হামলার মধ্যে ওয়ানাক্রাই ৪৫ দশমিক ৩ শতাংশ ও সিরবার ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ দায়ী।
পলোতায় বলেন, র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমবারের মতো কীটসদৃশ বৈশিষ্ট্য দেখেছি, যা ওয়ানাক্রাই সাইবার আক্রমণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। এটি উইন্ডোজের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে এবং দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। ফলে এ র্যা নসমওয়্যারের বিস্তার রোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। এর পরেও আমরা গ্রাহকদের রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। ওয়ানাক্রাই র‌্যানসমওয়্যারের আক্রমণ এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে র্যা নসমওয়্যারটির হুমকি এখনো রয়ে গেছে, কারণ এটির সহজাত প্রকৃতি হচ্ছে স্ক্যানিং এবং কম্পিউটারকে আক্রমণ করা।
সাইবার অপরাধীরা এখন অ্যান্ড্রয়েড র‌্যানসমওয়্যারের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। সফোসের বিশ্লেষণে বলা হয়, আমাদের গ্রাহকদের মধ্যে যারা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করছেন, তারা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। চলতি বছর প্রতি মাসেই এমন আক্রমণের হার বাড়ছে।
সফোসল্যাবসের নিরাপত্তা গবেষক ও সফোসল্যাবস ২০১৮ ম্যালওয়্যার ফোরকাস্ট প্রতিবেদনের কন্ট্রিবিউটর রোল্যান্ড ইয়ু জানান, শুধু গত সেপ্টেম্বরেই ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েডে ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। অক্টোবরে এটি প্রায় ৪৫ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, আমরা এমনটাই ধারণা করছি।
সফোসের প্রতিবেদনে আন্ড্রয়েডে আক্রমণের দুটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ আছে। এ দুটি পদ্ধতি হলো ডাটা এনক্রিপটিং না করেই ফোন লক করা এবং ডাটা এনক্রিপটিংয়ের সময়ে ফোন লক করা। অ্যান্ড্রয়েডে অধিকাংশ র‌্যানসমওয়্যার ব্যবহারকারীর ডাটাকে এনক্রিপ্ট করে না। রোল্যান্ড ইয়ু জানান, আগামী বছরও অ্যান্ড্রয়েড ফোনে র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণের ঘটনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আজকের বাজার : সালি / ১৫ নভেম্বর ২০১৭