খাদ্য সংকট মোকাবিলায় কৃষি খাতে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে : কৃষিমন্ত্রী

কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদনাসহ কৃষি খাতে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আজ সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্্িরফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল ও আরিফুর রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষকদের স্বার্থে সার,বীজসহ কৃষিখাতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ প্রদান করেছে। এছাড়া কৃষি পুনর্বাসনে ১শ’২০কোটি টাকা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণ ও সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদের জন্য ৫০ কোটি টাকা এবং ফসলে নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণের জন্য প্রদর্শনী স্থাপন ও গ্রহণকরণ বাবদ ৭৫ কোটি টাকাসহ মোট ২শ’ ৬কোটি টাকা ইতোমধ্যে বরাদ্দ প্রদান করেছে। অতি সম্প্রতি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও বীজ, সেচ ইত্যাদিসহ কৃষিখাতে সহায়তা বাবদ ২শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। আউশে বীজ ও সারবাবদ ৩৫ কোটি টাকা এবং সেচ বাবদ ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে এবছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন। করোনাভাইরাসের কারণে বোরো ধান কাটার শ্রমিকের সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হাওর অঞ্চলের ধান কাটার জন্য জরুরি ভিত্তিতে নতুন ১৮০টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহের বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে হাওরাঞ্চলে ৩৬২টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ১০৫৬টি রিপার সচল রয়েছে। দেশের অন্য এলাকা থেকে হাওরের আগাম বোরো ধান কাটার জন্য কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও রিপার প্রেরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমন ধানের উৎপাদন বাড়ানো হবে। এবার সরকার সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে ধান ও ৩৬ টাকা কেজি ধরে চাল ক্রয় করবে। তিনি বলেন, ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হতে যাচ্ছে,যা বাস্তবায়তি হলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ আরও প্রসার লাভ করবে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষি যান্ত্রিকীকরণে আরও ১শ’ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দিয়েছেন। যার মাধ্যমে প্রায় ৮শ’টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ৪শ’টি রিপারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি অচিরেই কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। ইতোমধ্যেই সমপরিমাণ কৃষি যন্ত্রপাতি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার কৃষিখাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্রদান করেছে। এ প্রণোদনার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করে কৃষি ফার্ম, ফলমূল, মসলাসহ খাদ্য শস্য উৎপাদনে কৃষকগণ যাতে সক্ষম হন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে নেত্রকোনাসহ দেশে ৭টি হাওড় এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষি শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ, সাবান, হ্যান্ডস্যানিটাইজার, মাস্ক প্রভৃতি উপকরণ প্রদান, নিরাপদ যাতায়াতের জন্য আলাদা গাড়ি, নির্বিঘœ গমনাগমন, ধান কাটা স্থলে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে শ্রমিকদের রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষি শ্রমিকগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাওড়ে যাওয়া শুরু করেছেন। আগামী আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৩ লক্ষ ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সঠিক সময়ে বীজতলা তৈরি, রোপণ, সেচসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রণোদনা হিসেবে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে সার, বীজ প্রভৃতি বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বসতবাড়ির আঙিনাসহ সকল পতিত জমিতে শাকসবজি, ফলমূল ও অন্যান্য ফসলের চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
কৃষক তাঁর উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে যাতে ন্যায্যমূল্য পেতে পারে সেজন্য ত্রাণসামগ্রীতে আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্তকরণের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিতরণযোগ্য ত্রাণসামগ্রিতেও আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় কৃষিপণ্য অন্তর্ভুক্তকরণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আসন্ন আউশ মৌসুমে সেচের ভর্তুকি সর্বোচ্চ ৫০শতাংশ প্রদানের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পরবর্তী বোরো মৌসুমে কৃষকদের সুবিধার্থে সেচ ভর্তুকি ২০ থেকে ৫০শতাংশে উন্নীত করা হবে।
করোনাকালীন সাধারণ ছুটির সময় কৃষি কার্যক্রম সক্রিয় রাখতে সকল কর্মকর্তাদের তাঁদের কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাঁদেরকে নিয়মিতভাবে মাঠে গিয়ে এই দুর্যোগময় অবস্থায় কৃষকের সাথে, কৃষকের পাশে থাকতে বলা হয়েছে।