গীতিকার বুলবুলকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা : বিকেলে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন

সর্বস্তরের মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা জানালো সংগীতঙ্গ ও মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে।
শহীদ মিনারের পাদদেশে রাজনীতিক, শিল্পী, সংগীত পরিচালক, সামাজিত সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের শত শত মানুষ দেশের কীর্তিমান এই যোদ্ধার কফিনে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় পুরো শহীদ মিনারে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

দুুপুর সাড়ে বারটা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানো শেষে বুলবুলের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয়। জোহরে নামাজের পর সেখানে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর এফডিসিতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে আজ বাদ আছর দাফন করা হবে।
শহীদ মিনারে সকাল এগারটায় বুলবুলের মরদেহ আনা হয়। এ সময় তার সুরারোপিত ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ গান বেজে উঠে। এ সময় শহীদ মিনারে উপস্থিত শত শত মানুষ নিরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। অনেকের চোখে নেমে আসে শোকাশ্রু। প্রথমেই একদল নিরাপত্তাকর্মী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এরপর শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের কার্যক্রম। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শুরুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংস্কৃতিক বিয়ষক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ কেন্দ্রীয় ও দলের ঢাকা মহানগর নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা জানান। পরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে রাষ্ট্রপতির সহকারী সামরিক সচিব ইফতেখারুল আলম শ্রদ্ধা জানান।

এরপর শ্রদ্ধা জানায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কাউন্সিল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় সমাজতন্ত্রিক দল-জাসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যাললের উপাচার্য ড. আখতারুজ্জামানসহ শিক্ষক-কর্মচারীরাবৃন্দ, বাংলাদেশের কমিউিনিষ্ট পার্টি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নেতৃবৃন্দ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, গান বাংলা টিভি, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি,শিশু একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ বেতার শিল্পীবৃন্দ, মিউজিশিয়ান ফোরাম, প্রাচ্যনাট, গণ শিল্পী সংস্থা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতি জোট,নজরুল সংগীত শিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, সংস্কৃতি মঞ্চ, বাংলার মুখ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু লেখক সংসদ, ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন-বাসদ, একতা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বুলবুল ললিত কলা একাডেমি, ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী, জাসাস, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী সংস্থা, জাতীয় কবিতা পরিষদ, গণ সংস্কৃতি ফোরাম।
শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের জীবন ও কর্ম নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মামুনুর রশীদ, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ, শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শিল্পী সামিনা চৌধুরী, শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, শিল্পী এন্ডু কিশোর।

শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন শহীদ মিনারে বাসসকে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ভাবতে কষ্ট হচ্ছে বুলবুল নেই। তার গান গেয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। দেশাত্মবোধক ও আধুনিক গান রচনা এবং সুর করে বাংলা সংগীত জগতকে গড়ে গেলেন এই মেধাবী সংগীতঙ্গ। যতদিন বাংলা গান ও বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বুলবুল সবার মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
শিল্পী সৈয়দ আবদুল হাদি বলেন, একেবারে তরুণ বয়স থেকে বুলবুল গান সৃষ্টি শুরু করেন। গানে তার সুর সৃষ্টি ও সংগীত পরিচালনায় মান ছিল উন্নত এবং নিজস্বতায় পরিপূর্ণ। এই বয়সে সে চলে যাবে ভাবতে কষ্ট হয়। তার কর্মকে চিরকাল আমাদের স্বরণ রাখতে হবে। নিজ গুণেই তিনি সবার মাঝে অমর হয়ে থাকবেন।

কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, কাকে হারালাম, বলে বুঝাতে পারবো না। তার সাথে গান করেছি, তার সুরে গেয়েছি, তার সংগীত পরিচালনায় পারফরম করেছি, পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। মুক্তিযোদ্ধা এই মানুষকে বাঙালি জাতি কোনকালেই ভুলতে পারবেন না। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বুলবুল ভাই।