গুহা থেকে যেভাবে উদ্ভার হলো থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবলাররা

থাইল্যাণ্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের উদ্ধার করার মধ্যদিয়ে সফল এক অভিযানের সমাপ্তি টানলো থাইল্যান্ড।

মঙ্গলবার তাদের সবাইকে নিরাপদে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। তিনদিনের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের শেষদিন কোচসহ অন্য চার কিশোরকে বের করে আনা সম্ভব হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে থাই নেভি সিল।

মঙ্গলবার অভিযানের তৃতীয়দিনে গুহা থেকে নবম, দশম এবং এগারোতম কিশোরকে উদ্ধার করা হয়।

এর কিছুক্ষণ পর দশম কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। পরে ৫টা ৮ মিনিটে উদ্ধারকারীরা ১১তম কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে গুহা থেকে বের হন।

তবে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গুহায় আটকা কিশোর ফুটবল দলের আরো এক সদস্য ও তাদের ২৫ বছর বয়সী কোচকে সবার শেষে উদ্ধার করা হয়।

সপ্তাহ দুয়েক ধরে বিশ্ববাসীর চোখ চিল থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের দুর্গম গুহা থাম লুয়াং এর দিকে। কারণ, এই গুহার চার কিলোমিটার ভেতরে আটকা পড়ে মৃত্যুর ক্ষণ গুণছিল এই ১২ ক্ষুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ।

সম্প্রতি দেশি বিদেশি ৯০ জন ডুবুরি ও উদ্ধারকারী দলের সমন্বয়ে চলে এই উদ্ধার অভিযান। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টানা তিন দিন রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেছে দলটি। উদ্ধার কাজের সময় মারা গেছেন এক থাই ডুবুরি।

রোববার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গুহার ভেতর পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ফলে ওই দিনই উদ্ধার অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক অভিযান। এতে বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকারী ও বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। যদিও এটা ছিল একটা জটিল অভিযান, তার পরেও সবার সমন্বয়ে এর সফল সমাপ্তি হয়।

বিবিসি বাংলা জানায়, উদ্ধার অভিযান চালায় ৯০ জন দক্ষ ডুবুরির একটি বিশেষ দল। এদের ৪০ জন থাইল্যান্ডের এবং বাকিরা বিভিন্ন দেশ থেকে আগত।

অসামান্য সাহসী এই ডুবুরি দল, গুহার ভেতরে অন্ধকার, সংকীর্ণ এবং জায়গায় জায়গায় ডোবা পথ দিয়ে কিশোরদের হাঁটিয়ে বা ডুবসাঁতার দিইয়ে প্রবেশমুখে নিয়ে আসেন।

এই কিশোরদের আসার সময় গুহার ভেতরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়, যা কিনা অভিজ্ঞ ডুবুরিদের জন্যও ভীষণ কষ্টকর। এই অভিযান প্রক্রিয়া জুড়ে ছিল হাঁটাপথ, পানির ভেতর দিয়ে চলা, বেয়ে ওঠা এবং পানিতে ডুবসাঁতার দিয়ে দড়ি ধরে এগিয়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ।

বাড়তি সতর্কতার জন্য ডুবুরিরা মুখোশ ব্যবহার করেন। প্রতিটি কিশোরকে বের করে আনতে দুজন করে ডুবুরি সাহায্য করেছে। তাদের একজন সামনে থেকে অক্সিজেন ট্যাংক নিয়ে এগিয়ে যান, মধ্যে উদ্ধারকৃত কিশোর আর শেষে আবারো একজন ডুবুরি। এভাবে প্রত্যেককে গুহা থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়।

তবে গুহার সবচেয়ে জটিল অংশটি হল অর্ধেক পথের ‘টি জংশন’। যেটা এতোটাই সংকীর্ণ যে তার ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য ডুবুরিদের অক্সিজেন ট্যাঙ্কটি খুলে ফেলতে হয়।

গত ২৩ জুন এই দলটি গুহার ভেতর বেড়াতে গিয়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আটকা পড়ে যায়। পরে গত সপ্তাহে তাদের সন্ধান পায় ডুবুরি দল। এরপর তাদের উদ্ধারে শুরু হয় সর্বিক তৎপরতা।

ওই সুড়ঙ্গে রয়েছে আরেকটি স্থান যার নাম দেয়া হয়েছে চেম্বার থ্রি। যেটা ডুবুরিদের জন্য ফরোয়ার্ড বেইজে পরিণত হয়। সেখানে কিশোররা বাকি পথ পাড়ির দেয়ার আগে কিছু সময় বিশ্রাম নিতে পারে।

পরে তারা পায়ে হেঁটে সহজেই প্রবেশমুখে পৌঁছে যায়। সেখান থেকে তাদের চিয়াং রাইয়ের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

উদ্ধারকারীরা গুহায় ঢুকার আগে বিশাল পাম্পিং মেশিন দিয়ে গুহার ভেতরের পানির স্তর নীচে নামিয়ে আনা হয়।যার কারণে পুরো অভিযান কাজ আরো সহজ হয়ে যায়।

এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া এক সাবেক থাই নৌবাহিনীর ডুবুরির মৃত্যুর ঘটনার মধ্যে দিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে এই যাত্রা কতোটা বিপজ্জনক ছিল।

সামান গুনান নামের ওই ডুবুরি শুক্রবার গুহার মধ্যে দিয়ে কিশোরদের অক্সিজেন ট্যাঙ্ক দিয়ে ফিরছিলেন। এসময় পানির ভেতরেই অক্সিজেন ফুরিয়ে গেলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যান তিনি।

আরএম/