‘গ্রামে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে কেরোসিন’

গ্রামীণ এই হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে আলোর জন্য কেরোসিনের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করায় তাদের রান্না, শিক্ষা ও আয়বর্ধক কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের এই গবেষণায় বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে এক কর্মশালায় এই প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা সহযোগী তাহরিন তাহরিমা চৌধুরী।

গবেষণার জন্য চট্টগ্রাম, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের আটটি জেলায় জরিপ চালানো হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড় এবং বরিশাল বিভাগের ভোলা, পটুয়াখালী ও বরগুনার গ্রাম এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয় নমুনা।

এসব এলাকার ৪৪ শতাংশ মানুষ এখনও আলোর জন্য কেরোসিনের উপর নির্ভরশীল বলে গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন।

খাগড়াছড়িতে ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৮৫ শতাংশ পরিবার এখনও কেরোসিন ব্যবহার করে। রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামে ৩৭ শতাংশ, লালমনিরহাটে ২৬ শতাংশ এবং পঞ্চগড়ের ৩৬ শতাংশ খানা জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার করছে। অন্যদিকে বরিশালের ভোলায় ১৫ শতাংশ, পটুয়াখালীতে ১৬ শতাংশ এবং বরগুনাতে ৯ শতাংশ মানুষ এ জ্বালানি ব্যবহার করছে।

কেরোসিনের বাড়তি ব্যয় মেটাতে গিয়ে এই গরিব মানুষদের ব্যয় কাটছাঁট করতে হচ্ছে বলে কেরোসিন খাতে ভর্তুকি দিতে সরকারের নীতি সংস্কারের পরামর্শ দেন তাহরিন তাহরিমা।

তিনি বলেন, “সরকার কেরোসিনের দাম লিটার প্রতি ৭৩ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকার নির্ধারণ করলেও গ্রামের অনেক জায়গায় প্রতি লিটার ৮০ টাকায়ও কেরোসিন কিনতে হচ্ছে।

“কেরোসিনের দাম এক টাকা বাড়লে শিক্ষার্থীদের ৩ মিনিট সময় নষ্ট হয়। দাম দুই টাকা বাড়লে ৬ মিনিট লেখাপড়া সময় নষ্ট হয়।”

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১৩ দশকি ৭ শতাংশ বেশি দিয়ে কেরোসিন কিনতে হচ্ছে এই গরিব মানুষদের।

“সরকার নির্ধারিত দাম জানে না বেশির ভাগ পরিবার। ৮৩ শতাংশ পরিবারের বাজার মূল্যের বিষয়ে সচেতনতা নেই। ৮৭ শতাংশ পরিবার জানেই না কেরোসিনের দাম ৭৩ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।”

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে বলে বাংলাদেশে তার প্রভাব থেকে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের কথা বিবেচনা করে জ্বালানি নীতিতে সংস্কার আনার উপর গুরুত্ব দেন তাহরিমা।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের (আইআইএসডি) জ্যেষ্ঠ পরামর্শক লরা মার্রিল বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) সবার জন্য জ্বালানি সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভর্তুকি ক্রমান্বয়ে কমছে।

তিনি বলেন, “ভারতের দরিদ্র্য পরিবারগুলো কেরোসিনের পরিবর্তে এলপিজি (তরলকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) এবং সৌর বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। নাইজেরিয়াও এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের জ্বালানি নীতিতে বিষয়টিতে জোর দিতে হবে।”

ড. মুর্শিদ বলেন, সরকার কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, রপ্তানি খাত, এলপিজি কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে। কারা এ ভর্তুকি পাচ্ছে সে বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে। গ্রামের দরিদ্র মানুষ কেরোসিন ব্যবহার করছে। এতে ভর্তুকি দিতে সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ বঞ্চিত এসব মানুষগুলোই দেশের প্রকৃত হতদরিদ্র। কেরোসিনের দাম বেড়ে গেলে এরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এর আগে বিশ্ববাজারে দাম কমলেও সরকার গরিব মানুষকে ন্যায্য সুবিধা দেওয়া হয়নি।