গ্রীসকে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ইউরো ২০২০’র টিকিট পেল ইতালি

রোমে শনিবার ঘরের মাঠে গ্রীসকে ২-০ গোলে পরাজিত করে ইউরো ২০২০’র চূড়ান্ত পর্বের টিকিট নিশ্চিত করেছে ইতালি। গত বছর বিশ্বকাপের খেলতে ব্যর্থ হবার পর আবারো এলিট পর্যায়ে নিজেদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলো আজ্জুরিরা।
দ্বিতীয় দল হিসেবে বাছাইপর্ব থেকে চূড়ান্ত পর্বে খেলার ছাড়পত্র পেয়েছে ইতালি। এর আগে প্রথম দল হিসেবে গ্রুপ-আই থেকে সাত ম্যাচে শতভাগ জয় নিয়ে বেলজিয়াম আগামী বছরের ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছিল।

বেলজিয়ামের মত ইতালিও এ পর্যন্ত খেলা সাতটি ম্যাচেই পূর্ণ তিন পয়েন্ট করে সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ ২১ পয়েন্টসহ গ্রুপ-জে’র শীর্ষ দল হিসেবেই বাছাইপর্বের বাঁধা পার হলো। ১৯৫৪ সালে স্তাদিও অলিম্পিকোতে এর আগে একবারই মাত্র সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিল আজ্জুরিরা। কাল রবার্তো মানচিনির নতুন চেহারার দলটি যেন সেই স্মৃতিকেই ফিরিয়ে এনেছিল।

গ্রীকদের প্রায় ঘন্টাখানেকের লড়াইয়ের পর অবশেষে ইতালিয়ানরা নিজেদের আধিপত্য দেখাতে সক্ষম হয়। চেলসি মিডফিল্ডার জর্জিনহো ৬৩ মিনিটে স্পট কিক থেকে প্রথমে দলকে এগিয়ে দেন। এরপর জুভেন্টাস ফরোয়ার্ড ফেডেরিকো বার্নারডেশি ৭৮ মিনিটে জয়সূচক গোলটি করেন। ম্যাচ শেষে মানচিনি বলেছেন, ‘অলিম্পিকোর সমর্থকদের আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। এমনকি প্রথমার্ধেও যখন আমরা ভাল খেলতে পারিনি তখনো তারা আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছে। হতে পারে রোমে ফিরে এসে খেলোয়াড়রা কিছুটা নার্ভাস ছিল।’

আগামী বছর ইউরো ২০২০ এর চূড়ান্ত পর্ব যে ১২টি ভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হবে তার মধ্যে ইতালিও একটি। উদ্বোধনী ম্যাচটি রোমার এই স্তাদিও অলিম্পিকোতেই অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে।

মানচিনি জানিয়েছেন, ১৯৯০ সালে রোম বিশ্বকাপের সেই ‘যাদুকরী রাত’ এর কথা বিবেচনা করেই চারবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালি স্বস্তিবোধ করতে পারে। আগামী জুনে রোমে ইতালি তাদের গ্রুপের অন্তত দুটি ম্যাচ খেলবে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলতে ব্যর্থ হবার পর থেকেই মানচিনি তার দলকে পুনর্গঠনের কাছে হাত দেন। তারই ধারাবাহিকতায় তিন ম্যাচ হাতে রেখেই ইউরোর চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে কোচের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন আজ্জুরিরা।

৫৪ বছর বয়সী ইতালি জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় মানচিনি বলেন, ‘কঠিন একটি পরিস্থিতি থেকে দলকে বের করে আনার জন্য সহযোগিতা করতে পেরে আমি দারুন খুশী ও গর্বিত। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা দলটিকে নতুন করে সাজিয়েছি। এটা খুব একটা সহজ ছিলনা। তবে খেলোয়াড়রা একে অপরের সাথে দ্রুতই মানিয়ে নিতে পেরেছে। এটা এমন একটি দল যারা নিজেদের ঐতিহ্য বুঝতে পেরেছে, শেষ পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা আছে। তবে এখনো তাদের উন্নতির অনেক জায়গা আছে। আমাদের আরো বেশী কাজ করতে হবে। তবে ইউরোপের সেরা দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার থেকে আমরা খুব একটা বেশী দুরে নাই।’

ম্যাচের শুরুতে আজ্জুরিরা আধিপত্য দেখালেও প্রথম আক্রমন করেছিল গ্রীকরাই। তবে দিমিত্রিস লিমনিয়সকে দারুনভাবে রুখে দেন গিয়ানলুইগি ডোনারুমা। প্রথমার্ধে লোরেনজো ইনসিগনে ও নিকোলো বারেলার দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ফিওরেন্টিনার ফরোয়ার্ড ফেডেরিকো চিয়েসা ইনজুরিতে পড়লে বিরতির আগে তার পরিবর্তে বার্নারডেশিকে নামানো হয়।

বিরতির পর সিরো ইমোবিলে দু’বার সুযোগ নষ্ট করেন। ৬৩ মিনিটে অবশ্য আর শেষ রক্ষা হয়নি। বক্সের ভিতর ইনসিগনের একটি প্রচেষ্টা আন্দ্রেস বুচালাকিস হাত দিয়ে ব্লক করলে পেনাল্টি পায় ইতালি। গ্রীসের গোলরক্ষক পাচালাকিসকে উল্টো দিকে পাঠিয়ে জর্জিনহো ৬০ হাজার দর্শককে আনন্দে ভাসান। ইতালির হয়ে এটি চেলসি খেলোয়াড়ের তৃতীয় গোল, সবকটিই এসেছে পেনাল্টি থেকে। ম্যাচ শেষের ১২ মিনিট আগে দলের জয় নিশ্চিত করেন বার্নারডেশি। মানচিনির অধীনে এটি ইতালির টানা অষ্টম জয়। ১৯৬৮ সালে ইতালি তাদের একমাত্র ইউরো চ্যাম্পিয়নশীপ জয় করেছিল। ২০০৪ সালের ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়ন গ্রীস ৫ পয়েন্ট নিয়ে ছয় দলের গ্রুপের পঞ্চম স্থানে রয়েছে। তাদের পরবর্তী প্রতিপক্ষ চতুর্থ স্থানে থাকা বসনিয়া ও হার্জেগোভেনিয়া।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান