চলতি বছরে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন কমবে ১৬ লাখ টন

বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস
গেলো বছর সারা বিশ্বে চাল উৎপাদন বাড়লেও, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর তা, ব্যাপক হারে কমে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, চলতি বছর শীর্ষ চার চাল উৎপাদনকারী দেশ চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ২৯ লাখ টন কমবে। শুধু বাংলাদেশেই কমবে প্রায় ১৬ লাখ টন।
বিশ্বব্যাংকের কমোডিটি মার্কেট আউটলুক-২০১৭-এর অক্টোবর সংখ্যায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, উৎপাদনে শীর্ষে না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ১৪ লাখ টন কমবে চাল উৎপাদন। এছাড়া ফিলিপাইন, ব্রাজিল ও জাপানেও চালের উৎপাদন কমতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শীর্ষ চারটি দেশে চাল উৎপাদন কমার কারণে সারা বিশ্বের চাল উৎপাদনে ভাটা পড়তে যাচ্ছে। ফলে বেশকিছু দেশের আমদানি বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরে ১৭ লাখ টন চাল আমদানি করতে পারে, যা গত অর্থবছরে ছিল মাত্র এক লাখ টন। এছাড়া আমদানি বাড়াতে পারে চীন, নাইজেরিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফিলিপাইন ও আইভোরি কোস্ট।

গত অর্থবছর বাংলাদেশে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৪৬ লাখ টন। এ বছর ১৬ লাখ টন কমে ৩ কোটি ৩০ লাখ টনে নেমে আসবে পণ্যটির উৎপাদন। মূলত পাহাড়ি ঢল ও হাওড় অঞ্চলে বন্যায় এ বছর ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণে চাল উৎপাদনে এমন ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। গত বোরো মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯০ লাখ ৫৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ধান কাটার ঠিক তিন সপ্তাহ আগে হাওড় অঞ্চলের প্রায় চার লাখ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়। এছাড়া উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের বেশকিছু জেলায় ফাঙ্গির (নেক ব্লাস্ট) আক্রমণে ধানের হেক্টরপ্রতি ফলন কমে যায়, যা চালের মোট উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এদিকে সদ্য শেষ হওয়া বোরো মৌসুমে চাল উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লাখ ১৩ হাজার টন হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা তথ্যে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। যদিও গত বছর এ মৌসুমে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৩৮ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছিল। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ৯ লাখ ২৫ হাজার টন কমছে চাল উৎপাদন। এ অবস্থায় চাল আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদনের তথ্য ও সরকারের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে চাল আমদানি শুরু হয়েছে। চলতি বছর শেষে চাল আমদানি ১০ লাখ ও ২০১৮ সালের মধ্যে আমদানি ১৫ লাখ টন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কেননা ভারত থেকে এরই মধ্যে এক লাখ টন চাল সরকারিভাবে কেনার অনুমোদন নেয়া হয়েছে। দেশীয় টেন্ডারের মাধ্যমে চাল আমদানি ছাড়াও গম আমদানি বাড়ানো হচ্ছে।
এদিকে চালের দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে এরই মধ্যে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত এলাকায় কৃষকদের পর্যাপ্ত কৃষি উপকরণ ও অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোয় কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। প্রকৃতি যদি সহায়ক থাকে, তাহলে চলতি অর্থবছরে আমন ও বোরোর বাম্পার ফলন হতে পারে।
চাল উৎপাদন কমার প্রভাব এরই মধ্যে দেশের বাজারে পড়তে শুরু করেছে। বাজারে মোটা ও চিকন চালের দাম রেকর্ড বেড়েছে। কয়েক সপ্তাহ ধরেই চালের দাম ৫২-৬৫ (চিকন) ও ৪২-৫০ (মোটা) টাকায় ওঠানামা করেছে।
বিশ্বব্যাংক ১৬ লাখ টন উৎপাদন কমার পূর্বাভাস দিলেও চলতি অর্থবছরে চাল উৎপাদন সে হারে নাও কমতে পারে বলে মনে করছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছর চীনে চাল উৎপাদন ১৪ কোটি ৪৯ লাখ টন থেকে নয় লাখ টান কমে ১৪ কোটি ৪০ লাখ টন হবে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় চাল উৎপাদন ৩ কোটি ৭২ লাখ টন থেকে দুই লাখ টন কমে ৩ কোটি ৭০ লাখ টন হবে। আমেরিকায় চাল উৎপাদন ৭১ লাখ থেকে ৫৭ লাখ টনে নেমে আসতে পারে। তবে পাকিস্তানে চাল উৎপাদন অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশটিতে গত বছর চাল উৎপাদন ৬৯ লাখ টন হয়েছিল। এছাড়া ভিয়েতনামে চাল উৎপাদন পাঁচ লাখ টন বাড়তে পারে। দেশটিতে গত অর্থবছর ২ কোটি ৮০ লাখ টন চাল উৎপাদন হলেও এবার তা বেড়ে ২ কোটি ৮৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। মিয়ানমারে চাল উৎপাদন এক লাখ টন বেড়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টন থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ টন হতে পারে। সব মিলিয়ে গত অর্থবছর সারা বিশ্বে চাল উৎপাদন ১ কোটি ৪৫ লাখ টন বাড়লেও চলতি অর্থবছরে তা হচ্ছে না। গত অর্থবছর সারা বিশ্বে ৪৮ কোটি ৭১ লাখ টন চাল উৎপাদন হলেও এবার তা ৩৩ লাখ টন কমে ৪৮ কোটি ৩৮ লাখ টনে নেমে আসতে পারে।
আজকের বাজার : সালি / ০১ নভেম্বর ২০১৭