চাঁদপুরে মেঘনার ভাঙনের কবলে আশ্রয়ণ প্রকল্প

জেলায় মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়েছে ভূমিহীণদের আশ্রয়ণ প্রকল্প। চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে অবস্থিত মেঘনা নদী বেষ্টিত সাতটি আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। সেখানে ভূমিহীণ ও আশ্রয়হীণ ৬৭৫ টি পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। তবে সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসতবাড়ি এবার মেঘনা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫ টি ব্যারাকের ৬০ টি বসতঘর মেঘনা নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে।
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে নদী ভাঙন ও অসহায় ভূমিহীণ পরিবারের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসতঘর দেয়ার উদ্যোগ নেয় শেখ হাসিনার সরকার। ওই সময় সদর উপজেলার লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের হরিনা মৌজায় মেঘনা নদীর চরাঞ্চলে সাতটি আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে হরিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প, হরিনা সম্প্রসারণ আশ্রয়ণ প্রকল্প, পদ্মা আশ্রয়ণ প্রকল্প, পদ্মা সম্প্রসারণ আশ্রয়ণ প্রকল্প, ইলশেপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্প, গোক্ষুরদী আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গোক্ষুরদী সম্প্রসারণ আশ্রয়ণ প্রকল্প।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙনে অনেক বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। যেসব পরিবারের বসতঘর বিলীন হয়েছে, তাদের প্রকল্প এলাকার অন্য বসতঘরে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ভাঙনের ভয়াবহতা অব্যাহত থাকায় ভাঙন আতঙ্কে পরিবারগুলো দিন কাটাচ্ছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার দায়িত্বরত গ্রাম পুলিশ বিল্লাল হোসেন জানান, নদী ভাঙন অব্যাহত থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। নদী ভাঙনের কারণে পরিবারগুলোর ক্ষতি ঠেকাতে নজর রাখা হচ্ছে। সেখানে কিছু বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। তবে নদীর গভীরতা বেশি হওয়ায় বালির বস্তা রাখা যাচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমান জানান, এরই মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫টি ব্যারাকের ৬০টি পরিবার থাকার বসতঘর মেঘনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অন্য সব ব্যারাকে বসবাসরত পরিবারগুলো ও অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। এক মাস যাবত নদী ভাঙছে। প্রতিদিন কোনো না কোনো বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বাসু শেখ জানান, বিভিন্ন সময়ে নদী ভাঙনের কারণে আমরা ঘর-বাড়ি হারিয়েছি। এরপর এখানে এসে বর্তমান সরকারের কারণে আশ্রয় পেয়েছি । আমাদের ভাগ্য খারাপ তাই নদী ভাঙন আমাদের পিছু ছাড়ে না।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকার খলিলুর রহমান জানান , নদী ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তা না হলে আমাদের মাথা গোঁজার আর কোন ঠাঁই থাকবে না। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
১০ নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সচিব মো. আলমগীর হোসেন জানান, এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১৩৫টি ব্যারাকে ৬৭৫টি পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। প্রমত্তা মেঘনা নদীর ভাঙনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৬০ টি বসতঘর বিলীন হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আরো ঘর নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে। আমরা বিষয়টি সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান জানান , ভাঙন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্য ঘরে আশ্রয় দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে নদী ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরইমধ্যে সেখানে কিছু বালু ভর্তি বস্তা ফেলা হয়েছে।
চাঁদপুর সদরের ইউএনও কানিজ ফাতেমা জানান, নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা বিষয়টি কর্তৃৃপক্ষের নজরে দিয়েছি।
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ্র নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান জানান, আমরা ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গন ঠেকাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে নদীর গভীরতা বেশি ও প্রচন্ড ঢেউয়ের কারণে কোন ভাবেই জিও ব্যাগ থাকছে না। আমাদের পানি উন্নয়ন বোর্ডের টিম গিয়ে ও সার্ভে করে এসেছে। বিষয়টি কর্তৃৃপক্ষের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি এখন উনারা যে মোতাবেক কাজ করতে বলবেন আমরা সেই ভাবেই কাজ করবো।