চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে অভিনব উদ্যোগ

চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে মশা নিধনে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। ১৭ জুন আগামী শনিবার দিনভর এই অভিযান চলবে। এতে রাজধানীর ৯২টি স্পটে কমপক্ষে ১০ হাজারের বেশি চিকিৎসক ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন।

এদিন রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি সব মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, সব ধরনের প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ম্যাটস্) এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ক স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চিকুনগুনিয়া রোগ নির্মূলে মহানগরীতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস ও জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সাঁড়াশি অভিযান চালাবেন।

এই অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দেবে ঢাকা উত্তর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

কার্যক্রম সফল করতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আজ থেকে তিন দিন ১৪, ১৫ ও ১৬ জুন অভিযান বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন ও প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা ঈদের ছুটি কাটাতে বাড়ি যাওয়া বিলম্বিত করে এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজি হয়েছেন।

অভিযান চলাকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী , স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিদর্শন ও কাজের সমন্বয় করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগরীতে চিকুনগুনিয়া রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে এবং হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন শত শত চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগী আসছেন। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও অনেক কর্মজীবী মানুষ আয়-রোজগার করতে পারছেন না।

অফিস-আদালতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে যেতে পারছে না। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর অনাবশ্যক চাপ।

তারা বলেন, শুধু তাই নয়, দেশের অন্য অঞ্চল থেকে চিকুনগুনিয়ার দু`একজন রোগীর খবর পাওয়া গেলেও দেখা যাচ্ছে সেই রোগীরা ঢাকাতেই এডিস মশার কামড় খেয়েছেন। ঢাকা মহানগরীতে নিজের বা প্রতিবেশীর ঘরে, আত্মীয় বা বন্ধুমহলের কারো চিকুনগুনিয়া হয়েছে এ খবর এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর গত ১ থেকে ৫ জুন মহানগরীর ৪৭টি ওয়ার্ডে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বিষয়ে একটি জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায় ২৩টি ওয়ার্ডে স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক উঁচু মাত্রায় এডিস মশা রয়েছে। ব্রুটো ইনডেক্স ২০ হলো স্বাভাবিক মাত্রা। কিন্তু, ৪৭টি ওয়ার্ডের গড় ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া যায় ৫২ , যা স্বাভাবিকের চেয়েও দুই গুণেরও বেশি। কোনো কোনো এলাকার ব্রুটো ইনডেক্স ১৩৩। যেমন-ধানমন্ডি, কলাবাগান ও কাঁঠালবাগান।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ( রোগ নিয়ন্ত্রণ) সানিয়া তহমিন ঝরা জানান, ১৭ জুন শনিবার সকাল ৯টায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও নির্দেশনা নিয়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিজানে অংশ নেবে শিহ্মাথীরা।

অভিযানকালে নির্মাণাধীন ভবনগুলোতে এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত ও ধ্বংস, মোটরযান মেরামতের দোকানগুলোতে গিয়ে পুরনো টায়ার সহ সকল সম্ভাব্য উপযোগ ধ্বংস করা হবে।

একইসঙ্গে পরিবারের সদস্যদের সচেতন করা ও চিকুনগুনিয়া রোগের জরিপ করার উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এজন্য নগরবাসীর সহযোগিতা চেয়ে আগে থেকেই মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১৪ জুন ২০১৭