চীন রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় : চীনা প্রতিনিধিদল

চীন রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় বলে জানিয়েছেন সফররত চীনের সিপিপিসিসি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কং কুউয়ান।

মঙ্গলবার (২৯মে) চীনা পলিটিক্যাল কন্সাল্টেটিভ কনফারেন্স এর পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির (সিপিপিসিসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট কং কুউয়ানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের এ প্রতিনিধিদল সংসদ ভবনে ডেপুটি স্পিকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়ার সাথে সাক্ষাত কালে এ কথা বলেন।

সাক্ষাতকালে প্রতিনিধিদল ডেপুটি স্পিকারের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ডেপুটি স্পিকার চীনের প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের কার্যাবলী এবং সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদের ভূমিকা সম্পর্কে তাদের অবহিত করেন।

সিপিপিসিসি এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কং কুউয়ান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ সফরে এসে বুঝতে পারছি যে, বাংলাদেশ খুব সুন্দর একটি দেশ এবং বাংলাদেশের মানুষ খুব অতিথিপরায়ন। বাংলাদেশের সাথে চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বন্ধন দিন দিন আরো দৃঢ় হবে।’

তিনি বলেন, তার দেশের চেতনাকে বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরার জন্য এসেছেন। এখানে এসে আমরা বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নের বিভিন্ন দিক দেখেছি এবং মুগ্ধ হয়েছি।

কং কুউয়ান বলেন, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য চীন এদেশের যোগাযোগ,তথ্য-প্রযুক্তি,বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ নানা খাতে সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করতে চায় বলে জানান চীনা প্রতিনিধি। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে উল্লেখ করেন।

চীন বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণকে পছন্দ করে এবং যে কোন সহযোগিতায় চীন বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানান এই চীনা প্রতিনিধি।

চীন সরকার এবং সে দেশের পার্লামেন্টের পক্ষ হতে চীনের পার্লামেন্ট পরিদর্শনের আমন্ত্রন জানিয়ে তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে সংসদীয় প্রতিনিধিদলের মধ্যে সফর বিনিময়ের বিষয়ে চীন আগ্রহী। এ ধরণের সফরের মাধ্যমে দু’ দেশের পার্লামেন্ট এবং সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা করে আসছে বাংলাদেশও সে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় রাখে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার একটি উপযোগী দেশ উল্লেখ করে চীনকে বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান ডেপুটি স্পিকার।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশেকে উন্নয়নের শিখরে তুলে নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে গেছে।

ডেপুটি স্পিকার বলেন, মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের প্রধানমন্ত্রী মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দিয়েছেন। এ সমস্যা মোকাবেলায় মায়ানমারকে কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য চীনকে সহযোগিতার আহবান জানান তিনি। রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরিয়ে নিতে মায়ানমারকে চাপ দিতে চীনের প্রতি আহ্বান জানান ডেপুটি স্পিকার।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমস্যার বিষয়ে ডেপুটি স্পিকারের আহ্বানের প্রেক্ষিতে চীনা প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি একটি জটিল বিষয় এবং জাতিগত ও নৃতাত্ত্বিক সমস্যা। এ বিষয়ে চীন অবগত রয়েছে এবং চীনের একটি পর্যালোচনাও রয়েছে। চীনও চায় এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক। তবে যেহেতু সমস্যাটা দু’দেশের মধ্যে তাই বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার নির্দিষ্ট কোন প্রস্তাব দিলে চীন সেটা বিবেচনা করবে।

এসময় ডেপুটি স্পিকার সমস্যাটিকে একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করেন এবং কফি আনানের সুপারিশের বিষয়ে চীনা প্রতিনিধিকে অবহিত করলে চীনা প্রতিনিধি এই বিষয়গুলো দেশে ফিরে তার দেশের সরকারের কাছে তুলে ধরবেন বলেও আশ্বাস দেন।

সাক্ষাতকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত, সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড.আব্দুর রব হাওলাদারসহ সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

আরজেড/