চুয়াডাঙ্গায় গমের পর এবার ধানে ব্লাস্ট রোগ

চুয়াডাঙ্গায় গমের পর এবার ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন মাঠে ছত্রাক জাতীয় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে শত শত বিঘা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাকা ধান ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে এ রোগ দেখা দেওয়ায় চাষীরা দিশেহারা। কৃষি কর্মকর্তারা প্রকৃতির ওপর দোষ চাপিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন-অভিযোগ কৃষকদের।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৪টি উপজেলায় ৩৩ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ হয়েছে ৩৩ হাজার ৫৪৮ হেক্টর জমিতে। আবাদকৃত জমির মধ্যে বিআর ২৬, ব্রি ২৮, ৪৮, স্বর্ণা ও খাটো বাবু জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ ভাগ জমিতে আবাদ হয়েছে ব্রি ২৮ জাতের ধান। আর এ জাতের ধানেই দেখা দিয়েছে ব্লাস্ট রোগ। জেলার অধিকাংশ চাষী সারা বছর খাবারের জন্য উল্লেখিত প্রজাতের ধান আবাদ করে থাকেন। কিস্তু ফসল ঘরে তোলার আগ মুহূর্তে হঠাৎ করেই ছত্রাক জাতীয় ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণে শত শত বিঘা জমির ধানে শিষ শুকিয়ে গেছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে ধান সব পেকে গেছে। কাছে গিয়ে ধানের শিষ হাতে নিলেই বোঝা যাচ্ছে সব ধান চিটা হয়ে গেছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, আক্রান্ত ধান গাছের নিচের অংশে রিংয়ের মতো কালো দাগ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় এটাকে গিটে ব্লাস্ট বলা হচ্ছে। আবার কোনো কোনোটিতে শিষের নিচের অংশে, থোড়ে ও পাতায় কালো দাগ সৃষ্টি হয়ে পচন ধরছে। আক্রান্ত হওয়া ধানগাছের শিষ শুকিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই এর বিস্তার ঘটছে।

গ্রামের একাধিক চাষী বলেন, ‘জমি বর্গা নিয়ে ধান আবাদ করেছি। ব্লাস্ট আক্রান্ত হওয়ার কারণে বিঘাপ্রতি ৩-৪ মণ হারেও ফলন পাওয়া যাবে না। এতে আমরা খাবো কি? আর ঋণই বা পরিশোধ করব কিভাবে। এর বাইরে ব্লাস্টের হাত থেকে বাঁচতে ছত্রাকনাশক ওষুধ দিতে খরচ হচ্ছে প্রতি বিঘায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে কখনো ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা যায়নি। হঠাৎ করে এ রোগ দেখা দেওয়ায় আমরা চিন্তিত। ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধের করণীয় সম্পর্কে কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আক্রান্ত ধানের বিষয়ে চিন্তা না করে কীভাবে বাকি ধান রক্ষা করা যায় সেই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপপরিচালক, নির্মল কুমার দে বলেন, ‘তাপমাত্রা ভারসাম্যহীন হওয়ার কারণে এমনটি ঘটতে পারে। এ রোগের যাতে বিস্তার না ঘটে তার জন্য ছত্রাকনাশক ওষুধ সময়মতো সঠিক মাত্রায় প্রয়োগের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাইকিংসহ প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে।’