চোরাচালান বন্ধে স্বর্ণ শিল্পে নীতিমালা ও ট্যাক্স কমাতে হবে

দেশের স্বর্ণ ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য নাম জাভেরি গোল্ড। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন রিপন কুমার ঘোষ। এ সেক্টরের প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনার  নানা দিক নিয়ে আজকের বাজার ও এবিটিভির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি। আলোচনার চুম্বক অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

চোরাচালান বন্ধে স্বর্ণ শিল্পে নীতিমালা ও স্বর্ণ আমদানিতে ট্যাক্স কমানো প্রয়োজন। জুয়েলারি শিল্পে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এ শিল্পের ক্ষতি করছে । সঠিক সময়ে সমাধান না হলে এ শিল্প ধংসের পথে চলে যাবে। স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও সরকার মিলে কাজ করলেই কেবল এই শিল্পকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এভাবেই আজকের বাজার ও এবি টিভির কাছে স্বর্ণ ব্যবসার বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন জাভেরী গোল্ডের অন্যতম পরিচালক রিপন কুমার ঘোষ। তার সঙ্গে কথপোকথনের চুম্বক অংশ তারই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

শিল্প উন্নয়নে সরকারের কাছে চাওয়া  
স্বর্ণ বা জুয়েলারি শিল্প দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে, তাই এই ব্যবসার নীতিমালা প্রবর্তনে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ট্যাক্স ফ্রি  ব্যবস্থার পুন:প্রবর্তন করতে হবে। ভরি প্রতি ৩০০০ টাকার বদলে ১৫০০ টাকা ট্যাক্স  চালু করা হলে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করি।  স্বাধীন এই দেশে স্বর্ণ ব্যবসায় নীতিমালা নেই এটা একটা বড় ব্যর্থতা ।  নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করে সবাইকে এক হয়ে এই শিল্পের জন্য কাজ করে যেতে হবে।

বাজেট ঘিরে প্রত্যাশা
বাজেট একটি দেশের অন্যতম একটি প্রত্যাশার জায়গা। যেখানে দেশ, দেশের মানুষ ও ব্যাবসায়ীরা অনেক কিছু আশা করেন। এক্ষেত্রে একজন ব্যাবসায়ী হিসেবে ব্যবসা-বান্ধব বাজেট আমার প্রত্যাশা। এ ছাড়াও বাজেটে ক্রেতাদের জন্য ভ্যাট  ৫ শতাংশ রাখার আহ্বান জানাই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলা যায়,  ভারতে ১% ভ্যাট নিচ্ছে সরকার তাই সবাই দিতে আগ্রহী।   সরকারের কাছে আবেদন, ভ্যাট ১৫% না করে ৫% করা  হোক।

স্বর্ণকারদের টিকিয়ে রাখার উপায়
বাংলাদেশে স্বর্ণের কারিগররা অতি মেধাবী,বিচক্ষণ ও সূক্ষ্ম কাজে পারদর্শী। যা তাদের কাজ দেখেই বুঝা যায় কারণ তারা তাদের হাতের মাধ্যমে কাজ করে তা ফুটিয়ে তুলছেন। অথচ দেশের বাইরে  মেশিনের মাধ্যমে এসব কাজ করা হয়। তাই বলতে পারি আমরা অন্যান্যদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮ লাখ মানুষ জুয়েলারি শিল্পে জড়িত ছিল।  এখন তা  প্রায় ৫০% কমে গিয়ে  ৪ লাখে নেমে এসেছে। এর পেছনে প্রথম কারণটি হচ্ছে আমরা দেশের কারিগরদের কাজ দিতে পারছি না কারণ আমাদের দেশের ক্রেতারা বাইরের দেশের স্বর্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছেন। তাই দেশের ক্রেতারা যদি দেশীয় স্বর্ণ অলংকার ক্রয় করেন তবে আমাদের স্বর্ণ শিল্প এগিয়ে যাবে।  দেশে অর্ডার বাড়বে ও কারিগররা কাজ পাবেন। আমাদের গৌরবের স্বর্ণ শিল্পকে যদি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে ক্রেতাদের দেশীয় স্বর্ণের প্রতি আগ্রহী হতে হবে। ভাবতে হবে এ দেশ আমাদের, এ শিল্প আমাদের, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও  প্রত্যেকে আমাদের ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজন। এদের সবাইকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দেশী স্বর্ণের প্রতি আগ্রহী ও সহনশীল হতে হবে আমাদের ক্রেতদের।

রিপন কুমার ঘোষ
পরিচালক
জাভেরি গোল্ড

আজকের বাজার: আরআর/ ২৯ মে ২০১৭