চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপার খোঁজে পেপ গার্দিওলা

টানা কয়েক দফা ব্যর্থতার পর সব ফাক-ফোকর বন্ধ করে এবার ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ফুটবলের শিরোপা ঘরে তোলায় মনোযোগ দিতে চান পেপ গার্দিওলা। ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই আসরে দলের সকল প্রকার ঘাটতি দূর করে শিরোপা খড়া কাটাতে চান গার্দিওলা। ‘সি’ গ্রুপে আগামীকাল বুধবার শাখতার দোনেৎস্ক-এর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ইউরোপীয় মিশন শুরু করতে যাচ্ছেন তিনিভ ।

ইউক্রেনেগামী বিমানে দীর্ঘ যাত্রাকালে তিনি ভেবে দেখার সুযোগ পাবেন সাম্প্রতিক বছর গুলোতে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে তার শিষ্যদের ব্যার্থতার কারণ। সর্বশেষ দু’টি শিরোপা জয়ের মাধ্যমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন গার্দিওলা। তন্মধ্যে প্রথমটি তিনি জয় করেছেন রেকর্ড পয়েন্ট সংগ্রহের মাধ্যমে। আর দ্বিতীয় শিরোপার সঙ্গে ঘরোয়া ফুটবলের ত্রিমুকুটও জিতে নিয়েছেন তিনি।খবর বাসস।

কিন্তু ইত্তেহাদ স্টেডিয়ামে আসার পর চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপাটি যেন অধরাই থেকে গেছে কাতালানীয় কোচের কাছে। বিশেষ করে গত এক দশক ধরে ইউরোপের অভিজাত ক্লাবগুলোর প্রতিযোগিতায় নিষ্ঠুর ব্যর্থতার শিকার হয়ে আসছেন গার্দিওলা। অথচ এই সময় বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ ও সর্বশেষ ম্যানচেস্টার সিটির মত বিশ্ব সেরা ক্লাবের দায়িত্ব পালন করেছেন গার্দিওলা।

২০০৯ সালে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয়ে করেছেন গার্দিওলা। ২০১১ সালে বার্সার হয়ে দ্বিতীয়বারের মত চ্যাম্পিয়ন্স লীগের শিরোপা জয় করেন তিনি। কিন্তু সিটির হয়ে সর্বশেষ তিনটি আসরে সেমি-ফাইনালেও দলকে পৌঁছে দিতে পারেননি তিনি। সিটিকে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌছে দিয়েছিলেন গার্দিওলার পূর্বসুরি ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি। স্প্যানিশ কোচের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার আগে তিনি সিটিজেনদের পৌঁছে দিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমি-ফাইনালে।

বার্সেলোনা ছাড়া বা আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসিকে ছাড়া গার্দিওলা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জয়ে ব্যর্থ হয়েছেন বলে সর্বদাই বলে আসছেন তার সমালোচকরা। এমনকি ৪৮ বছর বয়সী এই কোচের কিংবদন্তী খেতাব পাওয়ার যোগ্যতা আদৌ আছে কিনা তা নিয়েও শংকা প্রকাশ করেছেন তারা।

সৃষ্টিশীল ও প্রেরণাদায়ী গার্দিওলার ইউরোপীয় অভিযান মোটেও সুখকর হচ্ছেনা। বারবার দু:খজনক অভিজ্ঞতা নিয়েই ফিরতে হচ্ছে তাকে। গত আসরে টটেনহ্যামের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে গার্দিওলাকে হতাশ করেছিল ভিএআর প্রযুক্তির ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু সিটির এই ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে প্রথম লেগে আগ্রাসী মেজাজ এবং দ্বিতীয় লেগে রক্ষণাত্মক মনোভাব।
আগের বছর গার্দিওলার দলকে শেষ ষোল থেকে বিদায় করে দিয়েছিল মোনাকো।

এদিকে আরো একবার চ্যাম্পিয়ন্স লীগে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে ম্যানচেস্টার সিটিকে ঘিরে। এবার অবশ্য দলটি পড়তে পারে উয়েফা নিষেধাজ্ঞায়। কারণ সিটির বিরুদ্ধে উঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

তবে এবারের আসরেও সিটিজেনরা ‘বড় কানের কাপটি’ তুলে ধরতে পারবে কি-না সেটি নিয়ে ভয় থেকেই যাচ্ছে। কারণ প্রিমিয়ার লীগেও তাদের শুরুটা হয়েছে কিছুটা নড়বড়ে। শনিবার নরউইচের কাছে বিস্ময়করভাবে ৩-২ গোলে হেরে যাবার পর তালিকার শীর্ষ পয়েন্টধারী লিভারপুলের সঙ্গে রচিত হয়েছে ৫ পয়েন্টের ব্যবধান। ওই ফলাফলই প্রমাণ করে ইনজুরিগ্রস্ত সেন্টার ব্যাক আয়মেরিক ল্যাপোর্তের উপস্থিতি দলের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। অবশ্য কাগজে কলমে দূর্বল একটি গ্রুপেই পড়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। তাদের গ্রুপের অপর প্রতিপক্ষের নাম আটলান্টা। অবশ্য ল্যাপোর্তেকে ছাড়াই তার দলটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে প্রত্যয়ী গার্দিওলা।

নরউইচের কাছে পরাজিত হবার পর তিনি বলেন, ‘এই একটি ম্যাচে হারের কারণে আপনি যদি মনে করেন এই দলটি নিয়ে আমার মধ্যে সন্দেহ ঢুকে গেছে তাহলে…। কারণ তারা ইংল্যান্ডের মাটিতে আমার জন্য বিপুল সম্মান বইয়ে এনেছে। প্রথম মৌসুমে গার্দিওলাকে ‘প্রতারক’ খেতাবও দেয়া হয়েছিল। অনেক প্রতিবন্ধকতার কারণে ওই সময় এভাবে খেলা সম্ভব হয়নি। আর এই খেলোয়াড়রাই সেখান থেকে আমার জন্য সম্মান বইয়ে এনেছে। আমাকে সম্মানিত করেছে। তারাই আমাকে ফুটবল বিশ্বে ‘একজন ভাল’ কোচের আসনে বসিয়েছে।’

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান