ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতদের ওপর ফের হামলা

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ফের হামলার শিকার হয়েছেন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। শনিবার রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পদবঞ্চিতদের ওপর হামলার ঘটনায় টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে অনশন কর্মসূচিতে বসেছেন হামলার শিকার নেতারা। তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

হামলায় ঢাবির রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ক্যাফেটোরিয়া বিষয়ক সম্পাদক লিপি আক্তারসহ ২০/২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদবঞ্চিত ও কাঙিক্ষত পদ না পাওয়া নেতারা জানান, কমিটি গঠনের জেরে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য টিএসসিতে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে পদবঞ্চিত ও পদধারী অন্তত পাঁচশ নেতা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও ছিলেন।

হামলার শিকার নেতারা জানান, টিএসসিতে বৈঠক চলাকালে দুইপক্ষের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তারকে ‘ভাইরাস’ বলে সম্বোধন করেন।

এরপর গোলাম রাব্বানীর অনুসারীরা লিপি আক্তার ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের সভাপতি শ্রাবণী শায়লা ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা পারভীন, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের গত কমিটির সহ-সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহসহ অন্যদের ওপর হামলা চালায়।। এতে পদবঞ্চিত অন্তত ২০/২৫ জন নেতা আহত হন।

ছাত্রলীগের গত কমিটির উপ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এমদাদ হোসেন সোহাগ জানান, কমিটি নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য দুইপক্ষকে নিয়ে টিএসসিতে সভা চলছিল। এ সময় গোলাম রাব্বানী লিপি আক্তারের ওপর চড়াও হন। পরে গোলাম রাব্বানীর অনুসারী অন্যরাও পদবঞ্চিতদের ওপর হামলা চালায়।

হামলার ঘটনায় আলোচনা সভা থেকে বেরিয়ে এসে টিএসসির রাজু ভাস্কর্য এলাকায় অবস্থান নেন পদবঞ্চিত নেতারা। এরপর সেখানে অবস্থান নিয়ে তারা অনশন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। পদবঞ্চিত নেতারা জানান, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চান। প্রধানমন্ত্রীর ডাক না পাওয়া পর্যন্ত পদবঞ্চিতরা অনশন চালিয়ে যাবেন বলে জানানো হয়।

পদবঞ্চিত এক নেতা বলেন, ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যারা বিতর্কিত তাদের ডকুমেন্ট নিয়ে আমরা হাজির হয়েছিলাম। কিন্তু ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার বিশাল বাহিনী নিয়ে লিপি আক্তারসহ আমাদের অন্য নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে আমরা তার বিচার চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচারে ভার দিলাম।

তবে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।

তিনি বলেন, আলোচনা চলার এক পর্যায়ে তক-বিতর্ক হয়। কাউকে মারধর করা হয়নি। পদবঞ্চিতরা নাটক শুরু করেছে।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেখানে হট টক হয়েছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কথা বলেছি। মান-অভিমান হয়েছে, একপর্যায়ে হট্টগোলের মতো হয়েছে। আমি ও ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। আমরা দুইপক্ষকে সরিয়ে দিয়েছি। এখানে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি। তারা এটিকে ইস্যু করতে চাইছে। কোনো ধরনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি।

এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, আমি আজ কিছু বলব না। যা বলার কাল বলব।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১৩ মে সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এলাকায় অযোগ্য, অছাত্র, বিবাহিত, বিভিন্ন মামলার আসামীদের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদায়নের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে ছাত্রলীগের একাংশ। সেই মিছিলে হামলার অভিযোগ উঠে।

আজকের বাজার/এমএইচ