জটিল হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জুলাই মাসে করা রহস্যময় ফোনালাপকে ঘিরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্রেটিক দলের ইম্পিচমেন্ট তদন্ত এগিয়ে নেয়ার প্রয়াস যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবেশকে বেশ জটিল করে তুলেছে।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে যতোই ঘনিয়ে আসছে বিষয়টির গুরুত্ব ততোই বাড়ছে রিপাব্লিকান ডেমোক্রেট উভয় দলের ভোটার ও দল সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। বিষয়টি পরিচ্ছন্নভাবে রাজনৈতিক বিভক্তি সৃষ্টি করছে।খবর ভি ও এ

ডেমোক্রেটিক দলের ইম্পিচমেন্ট তদন্তের যুদ্ধে ভীত সন্তস্ত্র নন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি ক্ষুব্ধ, কিছুটা হতাশ, “লোকে বলে এসব কিভাবে আমি সামলাই। কারন এদের সবকিছু ভাওতাবাজী, ধোকাবাজী। সেই কারনেই আমি বলি আমি ঠিক আছি। ঠিকমত আমার যা কাজ তা আমি করছি। আমেরিকানদের জন্যে যা প্রয়োজন, তা ঠিকঠাকমতোই আমি করছি। আমি যেভা্ববে চলছি, কাজকর্ম করছি, যেভাবে আমার জীবনকে চালিয়ে নিচ্ছি তাতে আমি ভীষন খুশী”।

গনমাধ্যমের ওপর আক্রমন অব্যাহত রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, “এদের বেশীরভাগই দুর্নীতিপরায়ন। দেশটিতে দুর্নীতিবাজ অসৎ গনমাধ্যম রয়েছে। তারা সত্যিকারভাবেই মানুষের শত্রু। ধন্যবাদ”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জিলেনস্কির সঙ্গে জুলাই মাসে হওয়া প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ফোনালাপকে কেন্দ্র করে ডেমোক্রেটরা ইম্পিচমেন্টের তদন্তের প্রক্রিয়া এগুচ্ছেন। তারা বলছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঐ ফোনালাপে ডেমোক্রেটিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্পর্কে তথ্য সহায়তা চেয়েছেন জিলেনস্কির কাছে। ডেমোক্রেট এ্যাডাম স্কিফ বলেন: “এমন একটি দেশের নেতা যে দেশটি সেনা, অর্থনীতি, কুটনীতি বা যে কোনো বিষয়ে পুরোপুরিভাবে আমাদের দেশের ওপর নির্ভরশীল, তার কাছে নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা চাওয়ার মানে কি? এটা সত্যি দুর্নিতী, আইন বিরোধী”।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোনো ধরনের অনৈতিক বা ভুল কাজ করেন নি বলে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন ঐ ফোনকল ছিলো পারফেক্ট। আইন বিশেষজ্ঞ পল স্কিফ বারমানের মতে অভিযোগগুলো গুরুত্বপূর্ন, “হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা ঐ ফোনালাপের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনা করলে মনে হয় প্রেসিডেন্ট তার ব্যাক্তিগত ও রাজনৈতিক সুবিধার জন্যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, কতৃত্বের অপ্রয়োগ করেছেন যা আমাদের দেখামতে আইনের পক্ষে যায় না”।

তাই বলে ট্রাম্পের ঐ কর্মকান্ড কি তাকে প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে সরানোর মতো? আর ইম্পিচমেন্টের তদন্তে সেই প্রশ্নেরই উত্তর বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন ভেন্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির বিশ্লেষক থমাস স্কিউয়ার্টজ: “প্রশ্ন হলো তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ কতোটা ইম্পিচ করার মতো অপরাধ। আদৌ ইম্পিচের সঙ্গে যায় কিনা। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্যাণ্য রাষ্ট্রপ্রধানদের আলাপের সঙ্গে এর তুলনা করলে তা পরিস্কার হয়ে উঠবে”।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম টেক্সাস এ এ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মেহনাজ মোমেনের কাছে। তিনিও বললেন এবারকার অভিযোগ বেশী স্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ন। দেখা যাক কি ঘটে।

২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে ইম্পিচমেন্টের অভিযোগ বা প্রক্রিয়া যতো শানিত হচ্ছে ভোটারদের মধ্যে তার প্রভাব ততোটা জোরে পড়েতে শুরু হয়েছে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের এর বিশ্লেষক উইলিয়াম গ্যালস্টোন বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা বিতর্ক বাড়ছে। সামনের দিনগুলোতে তা আরো বাড়বে এবং কতোদিন এ ইিয়ে চলবে জটিলতা তা বলা মুস্কিল। মোটামুটি জ্বলন্ত আগুনে গ্যাসলিন ঢেলে দেয়ার মতো। আমার ভয় হচ্ছে”।

জন হাডাকের মতো: ২০২০ প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক ও প্রচারনার সুচনা বিতর্ক হবে ইম্পিচমেন্ট বিষয়টি কেন্দ্র করে, “গত তিন বছর ধরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিয়ে যা হয়নি আগামী ৫ থেকে ৮ সপ্তাহ তা হবে বলে আমার বিশ্বাস। আর তার কারন এখনকরা এই ইম্পিচমেন্ট আলোচনা”।

রাজনিতিতে ট্রাম্প আর নবাগত বা কোনো স্ট্রেণ্জার নন। সামনের দিনগুলো তার জন্যে – বিশেষ করে রাজনীতিবিদ ট্রাম্পকে আমেরিকানদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার মোক্ষম সময় হতে পরে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান