জলবায়ুর পরিবর্তনে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে: জাতিসংঘ

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী আবারো ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে খাদ্য বঞ্চনার শিকার মানুষের সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ৮০৪ মিলিয়ন। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮২১ মিলিয়নে।

ক্ষুধার্ত মানুষের এই হার দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলগুলোতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলেও প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’র (এফএও) প্রধান ডেভিড বেইসলি বলেন, এমন বার্তা মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করবে।

ট্রাম্প প্রশাসন মনোনীত বেইসলি স্বীকার করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দ্বন্দ্ব সংঘাতও এর কারণ।

‘জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে এটা সত্য’ বলে মেনে নিলেও কারণগুলো মনুষ্যসৃষ্টি কিনা দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তা বলতে সঙ্কোচবোধ করেন।

প্রতিবেদেনের বিশ্লেষণে অংশে বলা হয়, জলবায়ুর পরিবর্তন স্থিতিশীল থাকায় চরম খরা ও বন্যা ইতিমধ্যে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ও সমৃদ্ধ অঞ্চলে গম, চাল ও ভুট্টা উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।

এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে এ সংখ্যা আরো চরম আকারে হয়ে ওঠারও আশঙ্কা করা হয়েছে বিশ্লেষণে।

গত তিন বছরে ধরে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে অপুষ্টিতে থাকা নবজাতক, শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারীদেরকে টার্গেট করে কাজ করে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং স্থিতিস্থাপকতা তৈরি করতে সহায়তা করে এমন নীতি তৈরি করতে বৃহত্তর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বে সাড়ে সাত বিলিয়ন জনসংখ্যা রয়েছে উল্লেখ করে বেইসলি বলেন, যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে আজ থেকে ৩০ বছর পরে বিশ্বের জনসংখ্যা হবে ১০ বিলিয়ন। তখন আমরা যারা লন্ডন, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো ও প্যারিসেরি মতো জায়গায় থাকি, আমাদের কাছেও পর্যাপ্ত খাবার থাকবে না।

ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে স্থুলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে বিশেষ করে উত্তর আমেরিকায়।

একই পরিবারে অপুষ্টিার শিকার ও স্থুল সদস্য রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দরিদ্রদের পুষ্টিকর খাবার ক্রয়ের সামর্থ না থাকায় তাদের মধ্যে স্থুলতার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহকারী পরিচালক সেভেতলানা অ্যাক্সেলর্ড বলেন, প্রাথমিকভাবে মাতৃদুগ্ধ অপুষ্টি থেকে রক্ষা পেতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, উত্তর আমেরিকার তুলনায় আফ্রিকা ও এশিয়ায মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর হার দেড় গুণ বেশি। যেখানে ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হয়।

মায়েদের উচিত যতোটা সময় সম্ভব শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য সংস্থার এ কর্তাব্যক্তি।

আজকের বাজার/এমএইচ