জিআরআইয়ের সঙ্গে কাজ করবে ডিএসই

তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে সাসটেইনেবল রিপোর্টিং নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভের (জিআরআই) সঙ্গে কাজ করবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

রোববার (২০ মে) রাজধানীর একটি হোটেল জিআরআই ও ডিএসইর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।

চুক্তি অনুসারে সাসটেইনেবল রিপোর্টিংয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে ডিএসইর সঙ্গে যৌথভাবে সভা-সেমিনার আয়োজন করবে জিআরআই। তাছাড়া এ ইস্যুতে প্রতিষ্ঠান দুইটির মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতা অব্যহত থাকবে।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরে ‘করপোরেট ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড সাসটেইনেবলিটি রিপোর্টিং’ শীর্ষক একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় জিআরআই প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, সাসটেইনেবল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ ও পরিপালনের বিভিন্ন দিকের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বনামধন্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাহরণ তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা। অন্যদের মধ্যে জিআরআই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক রুবিনা সেন, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল মতিন পাটোয়ারিসহ এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তাবৃন্দ ও বিভিন্ন তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির আলোকে পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। মূলত এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গ্রীন রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক। তবে পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে এতদিন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এখন থেকে এটিকে বাধ্যতামূলক করতে চাইছে বিএসইসি। প্রস্তাবিত নতুন কর্পোরেট গভর্ন্যান্স গাইডলাইনের (সিজিজি) খসড়ায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে দুই বছরের মধ্যে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে। সিজিজি খসড়ায় পরিবেশ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা সংক্রান্ত যেসব ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে জিআরআইয়ের সাসটেইনেবল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডের অনেক সামঞ্জস্য রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কর্মশালায় জিআরআই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জেষ্ঠ্য সমন্বয়ক রুবিনা সেন সাসটেইনেবল রিপোর্টিংয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। টাটা, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা, আম্বুজা সিমেন্টের মত ভারতের বেশ কিছু বড় কনগ্লোমারেটের সাসটেইনেবল রিপোর্টিংয়ের মডেল তুলে ধরে তিনি বাংলাদেশের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের জন্য সুবিধামত পদ্ধতি বেছে নেয়ার আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে জিআরআই স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানিগুলোর নীতিকৌশল প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, সাসটেইনেবল রিপোটিংয়ের অগ্রণী সংস্থা জিআরআই ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী সরকার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়ে সহায়তা করে থাকে। সবার জন্য সামাজিক,পরিবেশ ও আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য। সাসটেইনেবল রিপোটিংয়ের জন্য জিআরআই স্ট্যান্ডার্ডই হচ্ছে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বেশি গৃহীত গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আড়াইশ করপোরেটের মধ্যে বর্তমানে ৯৩ শতাংশই জিআরআই স্ট্যান্ডার্ড অনুসরন করছে। কোনো কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রমের কারণে অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও সামাজিকভাবে যেসব প্রভাব পড়ে সেগুলো আর্থিক প্রতিবেদনে তুলে ধরাই হচ্ছে সাসটেইনেবল রিপোর্টিং। এটি প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক, পরিবেশ, সামামিক ও সুশাসনগত পারফর্মেন্স মূল্যায়ন ও অনুধাবন করতে সাহায্য করে। ফলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এসংক্রান্ত নীতিকৌশল প্রণয়ন করা সহজ হয়।

আরএম/