টমেটো ও আমকে সেইফ ফুড ঘোষণার প্রকল্প চলছে

শফিকুর রহমান ভুঁইয়া দেশের ফুড সেক্টরের ব্যবসায় সম্মানীয় নাম । দীর্ঘ দিন এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থেকে ব্যবসার ও ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে কাজ করেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, এফবিসিসিআই নির্বাচন, তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য করণীয় ইত্যাদি নানা বিষয়ে আজকের বাজারের সঙ্গে  খোলামেলা কথা বলেছেন। তাঁর কথামালার অনুলিখন তাঁরই ভাষায় ছাপা হলো।

ব্যবসা বাণিজ্যের সাম্প্রতিক অবস্থা

বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার। ব্যবসার সার্বিক অবস্থা এক কথায় ভালো বলা যাবে। আমাদের বাজেটের দিকে তাকালেই ব্যবসার বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আমাদের বাজেট ৩ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়াতে যাচ্ছে। আমাদের ফুড সেক্টরও বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। ফুড সেক্টর আরো ভাল করবে তবে ফুড ডাইভার্সিফিকেশনের পাশাপাশি কোয়ালিটি এনশিউর করতে হবে। এক্সপোর্ট মানের প্রোডাক্ট তৈরি করতে হবে। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশি বাজারে  যেতে  হবে। আর এ কারণেই আমাদের সেইফ ফুড দরকার। টমেটো এবং আমকে সেইফ ফুড হিেেসবে ডিকেয়ার করার জন্য আমরা একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটা প্রায় ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। এই প্রকল্পের কাজ চলছে যেন আগামি দিনে আমরা সেইফ টমেটো ও আম পাই। দেশ  থেকেই ফরমালিনমুক্ত টমেটো এবং আম সংগ্রহ করতে পারি। তাই বলব মান নিয়ন্ত্রণটা বেশি জরুরি।

আমাদের দেশে বর্তমানে নানাবিধ চমৎকার চমৎকার সব খাদ্য পণ্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এখনো মানুষ মনে করে এখানের খাদ্য পণ্য মানসম্মত নয়।  তাই রেসিপি রিসার্চ করে পণ্য তৈরি করার কথা বলছি আমরা। যাতে করে দেশীয় ভোক্তার পাশাপাশি দেশের বাইরের বাজারেও আমরা যেতে পারি।

ব্যবসার চ্যালেঞ্জ
বর্তমানে ব্যবসার বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইনফ্রাস্টাকচারের প্রবলেম। যদিও এগুলো অনেকটাই সমাধানের পথে রয়েছে। যেমন,আমরা  একটা সাধারণ সমস্যার কথা জানি। সেটা হচ্ছে, গ্যাস সমস্যা। এই গ্যাস সমস্যা সমাধানে সরকার বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আশা করি দ্রুতই এটির সমাধান হয়ে যাবে।

আজ দেখেন অনেকেই দু’একটা  প্রোডাক্ট নিয়েই বাজারে তোলপাড় তুলে ফেলছে। অনেক টাকা রেভিনিউ তুলছে। অনেক টাকা রেমিট্যান্স বাড়াচ্ছে। কিন্তু তারা সাব সেক্টরে কাজ করে। বেসিক ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে আমাদেরটা। আমরা একটা উপাদানকে ডাইভার্ট করে,প্রোডাক্ট তৈরি করে তারপর মার্কেটে দিই। এখন এই পরিবেশটা ধরে রাখতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। বর্তমান সরকারের যে ব্যবসাবান্ধব নীতি রয়েছে তার সঙ্গে সমন্বয় রেখে এগোতে হবে।

অ্যাসোসিয়েশনের চ্যালেঞ্জ
এফবিসিসিআই অনেক বড় সংগঠন। আমাদের সঙ্গে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন। এখানের ভোটাররা বেশিরভাগই বড় ব্যবসায়ী। এদিক দিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তবে আমাদের মার্কেট স্ট্রাটিজিটা ঠিক করতে হবে। শুধু লোকাল মার্কেটের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না।  আমাদের এক্সপোর্ট মার্কেটে যেতে হবে।  ওই এক্সপোর্ট মার্কেটে যেতে হলে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। যেমন- বিদেশি মার্কেট ধরতে হলে বিদেশি মিশনগুলোর  ঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। আর কোয়ালিটি ডেভেলপ তো আছেই। বিস্কিট কিন্তু এখন রেগুলার ফুডের জায়গা দখল করে ফেলেছে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয়
বাংলাদেশে অনেক বড় বড় সংগঠন রয়েছে যারা ইচ্ছে করলে যে কোনো সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে  দেখা করে যে কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু ছোট সংগঠনগুলোর বেলায় সে সুযোগ নেই। ছোট সংগঠনগুলো একজন মন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছতেই হিমশিম খেয়ে যায়। আমি বেসিক্যালি এই কথা চিন্তা করেই এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে এসেছি। এখানে যদি যোগ্য লোক নেতৃত্ব দেন তাহলে অ্যাসোসিয়েশনের যে কোনো সমস্যা সমাধান করা সহজ হবে।

এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা  অন্তত একজন সৎ ও যোগ্য সভাপতি পেতে যাচ্ছি। আমার জানা মতে, মহিউদ্দিন সাহেব অত্যন্ত ভালো  ও যোগ্য একজন নেতা। আর এফবিসিসিআই মাঝারি ও ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের আস্থার জায়গা। এখন এখানে সেক্টরভিত্তিক প্রতিনিধি না থাকলে  তা অর্থবহ হবে না।

এই নির্বাচনে আমি ৭ টি কর্মসূচি নিয়ে নেমেছি। সেগুলো হচ্ছে- ১. এফবিসিসিআইয়ের সাথে আমি ২০ বছর আছি। এই ২০ বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে সাধারণ পরিষদের সঙ্গে থাকতে চাই। তাদের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকতে চাই। ২. নির্বাচন পরিষদের সকল গণদাবি আদায় এবং বাস্তবায়নে চেষ্টায় থাকব। ৩. প্রতি তিন মাস পরপর  সাধারণ পরিষদের সামনে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরার চেষ্টা করব। আমি জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী, আমার কাজের জবাবদিহিতা থাকবে। ৪. ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে এফবিসিসিআইসহ ছোট বড় সকল ব্যবসায়ী সংগঠনকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে চাই। ৫. ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ কে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর চাওয়ার সাথে সম্পৃক্ততা রেখে এফবিসিসিআইকে গড়ে তুলতে চাই। ৬. এফবিসিসিআইকে শক্তিশালী করতে একটি রিসার্চ সেল তৈরি করব। ৭. স্মার্ট এফবিসিসিআই গঠন। স্মার্ট- এর মিনিং: এস ফর স্পেসিফিক, এম ফর মেজারেবল, এ ফর এচিভ, আর ফর রিয়েলিস্টিক, টি ফর টাইমলি।

ব্যবসায়ীদের পক্ষে এফবিসিসিআইয়ের ভূমিকা
এবার প্রস্তুতি ছিল একটি প্যানেল সিলেক্ট করেই কমিটি গঠন করা। কিন্তু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সাধরণ পরিষদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সম্প্রতি ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম নামে আমরা আরেকটি প্যানেল ঘোষণা করেছি। আমরা ১৮ জন ডিরেক্ট র নির্বাচিত হতে পারলে বাকিদের সঙ্গে মিলে একটি শক্তিশালী এফবিসিসিআই গঠনের মাধ্যমে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধান করতে পারব।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ
নতুন উদ্যোক্তাদের স্বাগত জানাই। তবে ব্যবসার মাঠে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সিস্টেম। অ্যাসোসিয়েশনের বাইরেও দক্ষতা উন্নয়নে কিছু কাজ থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর একটা প্রকল্প রয়েছে। যেটার নাম হচ্ছে দক্ষতা উন্নয়ন নীতি বা এনএসডিসি। এখানে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করা হয়। আমি এফবিসিসিআইয়ে নির্বাচিত হতে পারলে সারাদেশ থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের ডেকে নিউ এন্টারপ্রেনিউরশিপ তৈরি করবো। তাদের মধ্য থেকে যে ফুড লাইনে ভালো করবে তাকে ফুড লাইনে প্রমোট করা হবে। যে আইটি লাইনে ভালো করবো তাকে আইটি লাইনে দেওয়া হবে। যে ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট লাইনে ভালো করবে তাকে ওই লাইনে সাপোর্ট দেওয়া হবে। এভাবে নতুনদের সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।

ব্যবসায়ীদের জন্য আরো বার্তা
আমি সব সময়ই পরিবর্তনে বিশ্বাসী। আমি পরিচালক নির্বাচিত হতে পারলে জবাবদিহিতামূলক কাজ করবো। প্রতি তিন মাস পরপর সাধারণ পরিষদের সদস্যদের ডেকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি জবাবদিহি করব।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৪ মে ২০১৭