টেকনোলজি নিয়েই আমাদের কৃষিকে এগোতে হবে

এসিআই এগ্রিবিজনেস লিমিটেড। বাংলাদেশের অন্যতম কৃষি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কৃষির প্রায় সব শাখাতেই তাদের ব্যবসা রয়েছে। কৃষিতে টেকনোলজি, দেশের এগ্রিবিজনেসের সাম্প্রতিক অবস্থা, করণীয়সহ নানা বিষয়ে আজকের বাজারের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. এফ এইচ আনসারী। তাঁর কথোপকথন, তাঁরই জবানিতে অনুলিখন করে ছাপা হলো আজকের বাজারের পাঠকদের জন্য।

টেকনোলজি নিয়েই আমাদের কৃষিকে এগোতে হবে
আসলে কৃষি নিয়ে যে ব্যবসা, সেটাই এগ্রিবিজনেস। বাংলায় না বলে আমরা ইংরেজিতে বলছি। কারণ এই ব্যবসাটা এখন একেবারেই টেকনোলজি-নির্ভর। আর টেকনোলজির জন্য আমাদের অধিকাংশেরই বিদেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। এগ্রিবিজনেস বললে খুবই কমিউনিকেটিং হয়। তাই আমরা এগ্রিবিজনেস বলছি। মূলত এটা এগ্রিকালচার বিজনেস। আগে কেউ এগ্রিকালচার নিয়ে এভাবে ব্যবসা করার কথা চিন্তা করেননি। আমরাই প্রথম এগ্রিবিজনেস টাইটেল নিয়ে, এগ্রিকালচারের সব সেক্টর নিয়ে বিজনেস করছি। এর আগে বিভিন্ন সেক্টরের যে প্রডাক্ট নিয়ে যিনি ব্যবসা করতেন, তিনি সেই ব্যবসার কথা বলতেন।

যেমন ধরুন, কেউ কনজ্যুমারস প্রডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করছেন, তিনি বলতেন কনজ্যুমারস আইটেমের বিজনেস করছি। যিনি সার, বীজ, কীটনাশক, ট্রাক্টর কিংবা কোনো টেকনোলজি নিয়ে ব্যবসা করছেন, তিনি সেই প্রডাক্টের বিজনেস করছেন। এমনই প্রচলন ছিল। আমরা সেই জায়গা থেকে বের হয়ে এসে ‘এগ্রিবিজনেস’ টাইটেলে বিজনেস শুরু করলাম। মূলত আমরাই এ দেশে পরিচিত করি এই ধারণাটা। এখন অনেকেই এগ্রিবিজনেস করছেন। কিন্তু পুরোপুরি ব্রড বেইজে কেউ এখনো করছেন না, সেক্টর বেইজ করছেন। আমরাই ইনপুট নিয়ে কথা বলি, ভ্যালু অ্যাডিশন নিয়ে কথা বলি, কমপ্লিট এগ্রিকালচার বিজনেস আমরাই প্রথম করছি বাংলাদেশে। বলা যেতে পারে, ইন্টিগ্রেটেড এগ্রিকালচার বিজনেস বাংলাদেশে একমাত্র আমরাই করছি।

এগ্রিবিজনেসের পরিধি
এগ্রিবিজনেসের চারটি এরিয়া আছে। একটি হচ্ছে টেকনোলজি বা ইম্পুটস। আরেকটি হচ্ছে ভ্যালু অ্যাডিশন। কাঁচামাল বা ‘র’ ম্যাটেরিয়ালস একটি এরিয়া। আর ফরওয়ার্ড লিংকেজ বলতে পারেন আরেকটি এরিয়া। আমি যদি গুছিয়ে বলি বিষয়টা, তাহলে ইম্পুটস। ‘র’ ম্যাটেরিয়ালস ফর দ্য ভ্যালু অ্যাডিশন। অর্থাৎ, ক্ষেত-খামারে আমরা যা উৎপাদন করি সেটা একটা বাজার, যেটা ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত হয়। আরেকটি যেটা ভ্যালু অ্যাড করল। আর ফইনাল প্রডাক্ট হলো যেটা ফরওয়ার্ড লিংকেজ, অর্থাৎ রিটেইলিং।

আপনি জানতে চাচ্ছেন, বিস্কিট বা এ ধরনের প্রডাক্টকে আমরা এগ্রিবিজনেস বলতে পারি কি না। আমরা বলতে পারি। কারণ, বিস্কিটের বেশির ভাগ কাঁচামাল কিন্তু এগ্রিকালচার প্রডাক্ট। গম বা ভুট্টা কিংবা চিনি সবই এগ্রিকালচার প্রডাক্ট। কিন্তু সাধারণত যাঁরা বিস্কিটের ব্যবসা করেন, তাঁরা এটাকে কনজ্যুমারস প্রডাক্ট বলেন। এই কনজ্যুমারস প্রডাক্ট হচ্ছে এগ্রিকালচার প্রডাক্টেরই ভ্যালু অ্যাডিশন। বেসিক পার্থক্য নেই।

টেকনোলজির সাথে এগ্রিকালচারের সম্পর্ক
এগ্রিকালচারের সঙ্গে টেকনোলজির সম্পর্ক আছে। এগ্রিকালচার কিন্তু প্রচণ্ড ডাইনামিক একটি বিষয়। এটাকে ডাইনামিক বলছি, কারণ এর সাথে প্রডাক্টিভিটির সম্পর্ক রয়েছে। একজন কৃষক ক্ষেতে ধান বা গম বা যেকোনো ফসল উৎপাদন করছেন। তাতে তাঁর খরচ হলো কত? তাঁর ইল্ডটা কেমন? অর্থাৎ একজন কৃষক যে ইল্ড করছেন, তাঁর উৎপাদনের ওপর নির্ভর করছে পার ইউনিটে তাঁর কতটা খরচ হলো। একজন যিনি যে জমিতে এক টন ধান উৎপাদন করছেন, আরেকজন যিনি একই পরিমাণ জমিতে আট টন উৎপাদন করছেন; ইউনিট-প্রতি উৎপাদন খরচ তাঁদের আলাদা আলাদা হবে। প্রতি কেজি ধান উৎপাদন খরচে তাঁদের ব্যাপক পার্থক্য আছে।

এসব স্টোরি কিন্তু বাংলাদেশে আছে, বাংলাদেশে এ রকম গল্প হচ্ছে। এ রকম ক্রপ গ্যাপ আছে আমাদের। এটা ধানে আছে, গমে আছে, সবজিতে আছে। এটার কারণ হচ্ছে টেকনোলজি। ধরুন, যে সিড বা বীজটা তিনি বুনছেন, তাঁর ইল্ড ক্যাপাসিটিই হয়তো আট টন নয়। আবার যে কৃষক আট টনি বীজই বুনেছেন, তিনি হয়তো প্রপার সার দিতে পারেননি, টেককেয়ার করতে পারেননি বা পোকা লেগেছে তাঁর ধানে, কীটনাশক দিতে পারেননি, এই টোটালটা একটা টেকনোলজি। এ জন্য আমরা বলি, এগ্রিকালচার হচ্ছে প্রচণ্ড ডায়নামিক একটা খাত এবং এখন এটি অনেক বেশি টেকনোলজি-নির্ভর।

টেকনোলজি যত বেশি ফাস্ট হবে, প্রোডাক্টিভিটি তত বাড়বে। আমাদের দেশে পার হেক্টরে গম হয় দুই টন, এটিই ইউরোপে হয় ছয় টন, আর ইন্ডিয়াতে তিন টন। এটি কেন? বিকজ অব টেকনোলজি। এখন এই টেকনোলজি আমাদের দেশে নেই কেন বা আমরা পাচ্ছি না কেন? কারণ আমরা এই সময়োপযোগী টেকনোলজি উদ্ভাবন করতে পারিনি। তাহলে কী করা যাবে; বাইরে থেকে এটা আনা যায়, আনতে হবে। দেশে এটা হচ্ছে, কেউ কেউ আনছেন আবার ব্যবহারও করছেন। এ কারণে টেকনোলজি এত গুরুত্বপূর্ণ।

ধরুন আমাদের গ্রামের একজন কৃষক, তাঁর পাশের বাসায় থাকেন একজন বয়স্ক বৃদ্ধ বীজ ব্যবসায়ী কৃষক। ওই বৃদ্ধের প্রতি তাঁর অগাধ বিশ্বাস। প্রতি হাটবারে বৃদ্ধ ব্যবসায়ী হাটে বীজ বিক্রি করেন। নবীন কৃষক হাটে গিয়ে বৃদ্ধের কাছ থেকে ২০ টাকার করলা বীজ কিনলেন, বৃদ্ধ খুশি হয়ে বীজ পরিমাণের চেয়ে একটু বেশিই দিয়ে দিলেন। কৃষকও খুশি। বাড়ি এসে তিনি ওই পরিমাণ বীজ একসঙ্গে বুনে দিলেন; তাতে হবে কী? একসঙ্গে অনেক গাছ বেড়ে ওঠার প্রতিযোগিতায় পড়ে যাবে। কিছু গাছ হলো, কিছু গাছ হলো না। তাঁর বাড়ির প্রয়োজন মিটিয়ে তিনি হয়তো প্রতিবেশীকে অল্প কিছু দিতে পারলেন। তাঁর ইল্ড কিন্তু ভালো হলো না। বিশ্বস্ত বৃদ্ধের কাছ থেকে কিনেও তিনি ভালো ফল পেলেন না।

আরেকজন কৃষক শিক্ষিত, শহরে যান নিয়মিত। পাশের এক গ্রামের বড় কোনো হাট থেকে কোনো পরিষ্কার, সাইনবোর্ডওয়ালা বীজের দোকান থেকে করলা বীজ কিনলেন ওই ২০ টাকারই। দোকানি বললেন, ২০ টাকা না, আপনি ১০ টাকাই দেন। এই বীজগুলো তিন জায়গায় অল্প অল্প করে লাগাবেন। কৃষক তাই করলেন। ফলন হলো এক টন। তিনি খেলেন, প্রতিবেশীকে দিলেন, ৪০ টাকা করে কেজির করলা ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করলেন। এটা হলো প্রপার টেকনোলজির কারণেই। যিনি টেকনোলজি ব্যবহার করলেন, প্রপার ইউজ করলেন, তিনি লাভবান হলেন। আর যিনি করলেন না, তিনি পারলেন না। এটাই হলো টেকনোলজির সফলতা। এগ্রিকালচারে টেকনোলজির বেনিফিটটা এখানে।

কৃষিতে যন্ত্রপাতি
আমরা আগে দেখতাম জমি চাষে লাঙল ব্যবহার করা হতো, এরপর এল ট্রাক্টর। এখন তো ধান কাটাই-মাড়াই করতেও যন্ত্র দেখছি। এগুলোকে কি টেকনোলজির অংশ বলা যাবে? হ্যা, এটা পিওর টেকনোলজি। যখন আমরা বলি এগ্রিকালচার টেকনোলজি, তখন ফার্ম মেকানাইজেশনের বিষয় আছে। যন্ত্রপাতিনির্ভর কৃষিতে যেতে হবে আমাদের। বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছে যন্ত্রপাতিনির্ভর কৃষিতে যেতে হবে। বাংলাদেশে কৃষকের ছেলে যে একটু লেখাপড়া করেছে, এ দেশে জিনস প্যান্ট, টি-শার্ট বেশ কম দামে পাওয়া যায়, এগুলো সে পরে, পাশের ছেলেটাকেও দেখে। সে তো সারা দিন কোমর বাঁকা করে মাঠে পড়ে থাকবে না।

আমাদের ফিউচার জেনারেশনকে কৃষিতে ধরে রাখতে কৃষি মেকানাইজেশনে যেতে হবে। এটা তো গেল একটা দিক। অন্যদিকে যন্ত্রপাতিতে লাভও বেশি। ধরুন, শুধু ধানের কথাই যদি বলি, কৃষক যদি লাঙলের কল ব্যবহার করেন, মেশিনে সেচ দেন, যন্ত্রে ধান লাগান, ধান মাড়াইটাও যন্ত্রে করেন, তাহলে তাঁর প্রফিট অন্তত ৩০ পার্সেন্ট বেড়ে যাবে। ১৪ টাকা খরচের ধান উৎপাদন করে তিনি ২০ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। যা আমরা দু-তিন বছর আগে দেখেছি ২০ টাকা কেজিতে তিনি ধান বিক্রি করতে পারছেন না। এ সবটাকেই আমরা বলছি টেকনোলজি।

লাঙলের বদলে কল বা যন্ত্র
আমরা তো জানি গ্রামের কৃষক টেকনোলজিতে ওইভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন না। এটা কি তাঁর প্রতি অমানবিক আচরণ হয়ে যায় না? মানবিকতার দিক থেকে বিষয়টাকে কীভাবে দেখা যায়? আমরা যখন শহরের মানুষের সঙ্গে এটা নিয়ে কথা বলি, তখন তাঁরাও বলেন যে এটা কি সামাজিক অন্যায্যতা হয়ে যাচ্ছে? আপনি যদি দেখেন, গ্রামে যখন ধান লাগানো হয় কিংবা ধান কাটার সময় হয়, তখন প্রায় ৩৫ পার্সেন্ট লেবার কম পাওয়া যায়। আমরা এ বছর বা আগের বছর দেখেছি, বোরো মৌসুমে সময়মতো ধান কাটা না গেলে ধান তো মাঠেই পড়ে থাকবে, নষ্ট হবে। এ সময় শ্রমিকেরা ধানের ৩০ ভাগ পর্যন্ত মজুরি দাবি করে বসেন। লেবার কস্ট এতটাই কস্টলি এফেয়ার্স হয়ে যাচ্ছে। এই কস্টলি এফেয়ার্স তো মেনে নেওয়া যায় না। আর যেহেতু এখানে শ্রমিকের সংকট দেখাই যাচ্ছে, লেবার শর্ট আছে। এ রকমটা তো কোনোমতে অমানবিক হতে পারে না। ইস্যু হচ্ছে, আমরা হিউম্যান বিং। আমাদের এগোতে হবে। আমাদের প্রোডাক্টিভ হতে হবে। প্রোডাক্টিভিটি একটি সহজ ইকোনমিক হিসাব। ইমোশনের বাইরে আমাদের এটা করতে হবে। করতে পারলে এই লাভ হবে যে কৃষি প্রচণ্ডভাবে প্রোডাক্টিভ হবে। কৃষিকে আমরা সামনে নিতে পারব। কৃষককে প্রচণ্ডভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।

লোকে কৃষিকাজ করে কেন? করে তার ফ্যামিলি প্রসপারিটির জন্য। সে কৃষি করবে পরিবারের জন্য, কিছু টাকাপয়সা থাকলে তার পরিবারের লোক ভালো থাকবে, স্বাস্থ্য রক্ষায় খরচ করতে পারবে, পরের মৌসুমের জন্য কিছু টাকা জমা রাখতে পারবে। এসব মিলে তার ওভারঅল ইকোনমি। এই ইকোনমি এগিয়ে নিতে হলে মেকানাইজেশনে যেতে হবে। এখন ইস্যুটা হলো তার টাকাপয়সা কম। সে এগুলো কিনবে কীভাবে। সুবিধার কথা হলো, গ্রামে এরই মধ্যে কিছু কিছু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে, যারা নিজেরাই টাকা দিয়ে যন্ত্রপাতি কিনছে বা ব্যাংক লোন করে ব্যবস্থা করছে। কেনার জন্য টাকাপয়সা পাচ্ছে। সরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানও সহায়তা করছে। অনেক কোম্পানি আছে যারা এই সার্ভিস প্রোভাইড করছে।

এখন প্রশ্ন, কৃষকের কাছে এগুলো আসলে কতটা কস্টলি? সাধারণভাবে হিসাব করলে এক বিঘা জমি ম্যানুয়ালি চাষবাস করতে দুই হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। এটি পাওয়ার টিলারে করতে পারলে খরচ হবে মাত্র ১ হাজার ৪০০ টাকা। আর ট্রাক্টরে করতে পারলে ৬০০ টাকা। তাহলে লাভটা কোথায়? এখন এক বিঘা জমির ধান কাটতেও লেবার কস্ট পড়ছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। আর যন্ত্র দিয়ে করলে পড়বে৪ চৌদ্দ-পনেরোশ টাকা। তাহলে লাভটা কোথায় পরিষ্কার বুঝতে পারছেন নিশ্চয়? ওভারঅল, আমি মনে করি, আপনারা যাঁরা শিক্ষিত সমাজ, তারা এবং আমরা এককভাবে এসব বিষয়ে কৃষকদের যদি সাপোর্ট দিয়ে যাই, তাহলে হবে কী, কৃষকের অর্থনৈতিক উন্নয়নটা হবে। দ্যাটস ভেরি ইমপর্ট্যান্ট।

টেকনোলজির সাথে ভ্যালু অ্যাডিশন খুবই সম্পর্কিত
এগ্রিবিজনেসে টেকনোলজির সঙ্গে ভ্যালু অ্যাডিশন অত্যন্ত সম্পর্কিত। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা প্রায়ই বলি, দানা ফসল যা লাগে, আমরা তা পুরোটা উৎপাদন করতে পারি। কথাটা পুরো ঠিক নয়। দানা ফসলের মধ্যে ডাল আছে, সরিষা আছে। ডাল প্রায় পুরোটা আমদানি করতে হয়। আর সর্ষে বা তেল ৭০ থেকে ৮০ ভাগ আনতে হয় বাইরে থেকে। তার মানে, কোনো কোনো ফসলে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন ইস্যুটা কী? আমাদের সবাই ধান করে। প্রায় ৮০ পার্সেন্ট কৃষকই জমিতে ধান চাষ করেন। ধানের ইল্ড কত? ধানের জাতীয় গড় উৎপাদন হেক্টরপ্রতি তিন টন। অথচ ভিয়েতনামে এটা ছয় টন।

এখন আমরা যদি উৎপাদন ছয় টনে নিয়ে যেতে পারতাম, তাহলে লাভটা হতো কী, আমাদের জমি সারপ্লাস হতো। ওই জমিতে আমরা গরুর জন্য ঘাস করতে পারতাম, ডাল করতে পারতাম, গম করতে পারতাম, মুরগির খাবারের জন্য ভুট্টা করতে পারতাম। এখন ইস্যুটা কী? যে প্রসঙ্গটা আপনি বললেন, ভ্যালু অ্যাডিশন। ফসল যদি সারপ্লাস হতো, অভ্যন্তরীণ মার্কেটে আমরা এসব পেতাম। এগুলো থেকে আদার দ্যান বেসিক ফুড, আমরা ভ্যালু অ্যাডেড খাবার করতে পারতাম, চিপস, ফ্লেক্স, চানাচুর এজাতীয় খাবার। তাতে কৃষক এগুলোর ‘র’ ম্যাটেরিয়াল বিক্রি থেকে লাভবান হতেন।

আমাদের দেশে ভ্যালু অ্যাডেড ফসল উৎপাদনের ভ্যারাইটি নিয়ে কিছুটা সমস্যা আছে। কৃষকের এই ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্ট থেকে অনেক কিছুই বানানো যায় না। যেমন আলু, আলু থেকে ফ্রেঞ্চফ্রাই করতে গেলে যে ভ্যারাইটি দরকার, সেটা আমাদের নেই। বলা হচ্ছে আমরা কমার্শিয়াল ভ্যারাইটির আলু রিলিজ করেছি, আসলে এটা ঠিক না। আমাদের আলু সাধারণত তরকারিতে ব্যবহৃত হয়। তাহলে কী করতে হবে? ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যের মানের আলুর ভ্যারাইটি আমাদের উদ্ভাবন করতে হবে। করতে পারলে সারপ্লাস ফসলের ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যের মার্কেটটা করতে পারব। আমাদের দেশে বেশ কিছু কোম্পানি ভ্যালু অ্যাডেড প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ভালো করছে। ভালো ভালো পণ্য করছে। নতুন নতুন কোম্পানি আসছে।

কৃষিতে বিপ্লব আনতে হলে, ভ্যালু আনতে হলে আমাদের ভ্যালু অ্যাড করতে হবে। তাহলে মার্কেট করতে পারব। মার্কেটিং হলে অর্থনীতি উন্নত হবে, দেশের বাইরেও যাওয়া যাবে। প্রায় ১ কোটি মানুষ দেশের বাইরে, বাইরেও একটি বিশাল মার্কেট রয়েছে আমাদের। তারা বাংলাদেশের স্ন্যাকস-জাতীয় খাবারটা চায়। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

এ ছাড়া দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে, পপুলেশনের প্রায় ৫ ভাগ, সংখ্যায় ১ কোটি। এটা বাড়ছে। আমাদের জিডিপি গ্রোথ ৭ পারসেন্ট। ফলে মধ্যবিত্তের সংখ্যা ২০৩০ সালে গিয়ে ৪ কোটি হয়ে যাবে। এত বড় মধ্যবিত্ত শ্রেণি, তারা তো শুধু ভাত আর মাছই খাবে না। স্ন্যাকস খাবে, অন্য কিছু খেতে চাইবে। ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যের সম্ভাবনা এ কারণেও বাড়ছে। ভালো ভালো কোম্পানি এখন আমাদের দরকার। মার্কেটও বাড়ছে।

প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে ক্ষতিকর পদার্থ থাকে না
প্রসঙ্গক্রমে বলি, এমন অভিযোগ আমরা মাঝে মাঝে পাই যে কৃষিপণ্যে এমনকি প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যেও ক্ষতিকর পদার্থ মেশানো হয়, যা শরীরের জন্য ভালো না। কথাটা সব সময় ঠিক না। একেবারে প্রাথমিক ধাপে কিছুটা হতে পারে। তবে আমরা রিসেন্টলি এফএওতে পরীক্ষা করিয়ে দেখেছি, মাছ বা মাংস, ফল বা প্রসেসড ফুডÑ এসবে কোনো রকম টক্সিস কিছু পাওয়া যায়নি। এটা একটা ইন্টারেস্টিং নিউজ। তবে কিছুটা ব্যাকটেরিয়া কন্টামিনিটেড হয়। পরিষ্কার করার সময় পানি ইত্যাদিতে কিছুটা কন্টামিনেশন হচ্ছে না তা বলা যাবে না।

তবে এটাও ঠিক, খুব যে দারুণ কিছু হচ্ছে তা-ও না। একসময় কার্বাইড দিয়ে কাজ কারার চেষ্টা করেছে, এখন কার্বাইড দিয়ে করে না। কার্বাইডের অল্টারনেটিভ ইথুপেইন কিছু জিনিস আছে, সেগুলো দিয়ে কাজ করে। ইথুপেইন দিলে সরাসরি ক্ষতি হয় না, কনফাইন্ড একটা প্লেসে ইথুপেইনের গ্যাসটা বের করে টেম্পারেচার বাড়ায়, এতে ফল বা ফসলে ফিজুলিটিটা একটিভিটেড হয়, ফলে এগুলো তাড়াতাড়ি পেকে যায়। এটা একটা ইন্টারন্যাশনাল প্র্যাকটিস বা প্রসেস। ফসল যদি কমপ্লিট হারভেস্ট করেন, পুরোপুরি পাকার পরে এটি স্টোর করতে পারবেন না, এটা পচে যাবে, ক্যারি করতে পারবেন না। ম্যাচিউরড হলে স্টোর করে ধরে ধরে আস্তে আস্তে বাজারে দেওয়া যায়। এক দিন, দুই দিন ধরে রাখা যায়।

আরেকটা অল্টারনেটিভ জিনিস, ইন্টারেস্টিং বিষয়। এটা টেকনোলজি বেইজড ব্রিড। বাজারে টমেটো দেখেছেন, গ্রীষ্মকালীন টমেটো। এটা আমাদের দেশেই উদ্ভাবন হয়েছে। আমরাই করেছি। এসব টমেটো ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত টিকতে পারে। প্রায় ১০ দিন কোল্ড স্টোরেজে রাখা যাবে। বহু ফসলের সেলফ লাইফ বাড়ানোর জন্য এখন এ ধরনের ব্রিডে এসেছে। এখন কেউ হয়তো ভাবতেই পারেন যে এতে কিছু মিশিয়ে বাজারে রাখা হচ্ছে। কিন্তু তা না। এসব নিয়ে মানুষের কনফিউশন আছে, মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। এটাতে একটা নেগেটিভ ধারণা হয়। ক্ষতি হয়। শেষ পর্যন্ত ভোক্তারা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হন। এখন কমছে এসব। কেননা, সবাই বুঝতে পারছেন। ভেরি ক্লিয়ার যে এতে ক্ষতি নেই। আসলে এগুলো ব্রিড। সবুজ আপেল, এগুলোও কিন্তু অনেক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে কোনো কিছু ছাড়াই।

বাংলাদেশে এই এগ্রিবিজনেস কোথায় যাচ্ছে
বাংলাদেশকে আমরা বলি এগ্রিকালচার বেইজড দেশ। কিন্তু ওভারঅল ইকোনমিক সিচুয়েশনে এর অবদান জিডিপির মাত্র ১৫.৬ ভাগ। এটা দিনে দিনে আরও কমছে। এখন এর ইমপ্যাক্টটা কী? ইস্যু কী হবে? যদি এমন কৃষি না থাকত, যদি বাইরে থেকে কিনে খেতে হতো, যে পরিমাণ গার্মেন্টস আমরা এক্সপোর্ট করি, তাতে আমরা প্রচণ্ড হাংরি থাকতাম। অবস্থা খুব একটা ভালো হতো না, জিডিপিতে এর প্রভাব পড়ত। এ কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ কৃষিতে জড়িত, এর ওপরই নির্ভর করে তাদের জীবিকা। তারা এটা উৎপাদন করে, ট্রেড করে।

এখন এর ভবিষ্যৎ কোথায়? এখন আমাদের জিডিপি যা-ই হোক না, মধ্যবিত্ত বাড়ছে প্রায় ১ কোটির পরিমাণ। ইউরোপের অনেক দেশের পপুলেশনের সমান। এত বড় একটা মার্কেট ডোমিস্টেকেলি কিন্তু আমাদের তৈরি হয়ে গেছে। যে কারণে দুধের চাহিদা বাড়ছে, ডিমের চাহিদা বাড়ছে, মাংসের চাহিদা বাড়ছে। প্রতিটা এগ্রিকালচার প্রোডাক্টের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে, মানুষ নিচ্ছে। ২০৩০ সালে এই মিডিল ক্লাসের সংখ্যা হবে প্রায় ৪ কোটি। এই ট্রেন্ড যদি থাকে। এখন এই ৪ কোটি মধ্যবিত্তকে যদি উন্নতমানের খাবার খাওয়াতে হয়, তবে আমাদের আরও বেশি প্রোডাক্টস লাগবে। আরও বেশি ইনপুটস দিতে হবে, টেকনোলজি দিতে হবে। ইনপুটস ও টেকনোলজির মার্কেট অনেক বড় হবে। অলরেডি বড় হতে শুরু হরেছে।

অনেক বেশি এগ্রিকালচার ইন্ডাস্ট্রিতে ইনপুট দিতে হবে। অনেক বেশি ফল ও সবজি উৎপাদন করতে হবে, দুধ উৎপাদন করতে হবে, মাংস উৎপাদন করতে হবে। যারা ভ্যালুঅ্যাড করে, তাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো কীভাবে চলবে? যারা এসব প্রোডাক্ট ভ্যালুঅ্যাড করে, তারা আবার এগুলো এক্সপোর্ট করবে, ডমেস্টিক মার্কেটে সমন্বয় করবে। অনেক লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং একটা ইকোনমি এক্টিভিটিস গ্রো হবে। আবার এগুলো রিটেইলিং হবে, টেলি মার্কেট ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে বিক্রি হবে। এগুলো ছোট ছোট দোকানে বিক্রি হবে। ওভারঅল আমরা দেখতে পাচ্ছি, এগ্রিকালচার একটি ভাইব্রেন্ট ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে এটা এগোচ্ছে। এটা সাপোর্ট পাবে এবং আমাদের জিডিপির গ্রোথ আরও বাড়বে।

এগ্রিকালচার ভবিষ্যতে বাংলাদেশের লিডিং প্রডাক্ট হবে
এটা তো পরিষ্কার বোঝা যায় যে আমাদের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলোর ট্রেন্ড কী? সারা পৃথিবীতে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিগুলো কিন্তু মুভ করেছে। এক দেশ থেকে আরেক দেশে চলে গেছে। এর কারণ হচ্ছে এই ইন্ডাস্ট্রিটা ভেরি মাচ রিলেটেড টু লোয়ার কস্ট। যখন আপনার জিডিপির গ্রোথ অনেক বেড়ে যাবে, পারচেজ পাওয়ার যখন বেড়ে যাবে, তখন লেবার কস্টও বেড়ে যাবে। তখন গার্মেন্টস বায়াররা অন্য দেশে খুঁজবে। যারা গরিব দেশ, যেখানে লেবার কস্ট কম, সেখানে চলে যাবে। তখন কিন্তু এগ্রিকালচারের ওপর নির্ভর করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। কারণ হচ্ছে, আমাদের আপোশেও অনেকগুলো দেশে ইকোনমি গ্রোথ হচ্ছে। কৃষিতে তাদের ইন্টারেস্ট কমে যাচ্ছে। ভারত অনেক বড় একটা মার্কেট, নেপাল বড় মার্কেট, মিয়ানমার একটা বড় মার্কেট। ওদিকে সাউথইস্টেও অনেক কান্ট্রি, কিন্তু ইকোনমি ভালো আছে। সবাই কিন্তু এগ্রিকালচারে আউটপুট কম দিচ্ছে। সবাইকে কিন্তু বাইরে থেকে কিনে খেতে হবে এবং এই সুযোগে বাংলাদেশের রিকয়্যারমেন্ট কিন্তু অত্যন্ত ভাইব্রেন্ট হয়ে যাবে। এবং ইন্টারেস্টিং হবে যে আজকে যে আমরা এগ্রিকালচার নিয়ে কথা বলছি, একদিন এটি ম্যাসিভ এগ্রিকালচারাল কান্ট্রি হবে। উদাহরণ হচ্ছে ডেনমার্ক, দেশটা ছোট। অনেক কম এগ্রিকালচার ‘র’ ম্যাটেরিয়াল প্রডিউস হয়। কিন্তু এগ্রিকালচার ভ্যালুঅ্যাড করে তারা অর্থনীতি বৃদ্ধি করেছে। আমি মনে করি, এটা আমাদের করা সম্ভব।

বাংলাদেশের বাজারে এসিআই এগ্রিবিজনেসের অবস্থান
আমারা তো ব্যবসা করি এবং বাংলাদেশের অনেক কোম্পানি ব্যবসা করে। তবে আমাদের এগ্রিকালচার বিজনেসের একটি ক্লিয়ার ভিশন আছে। ভিশনটাকে আমরা বলছি ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ল্ড ফর দ্য ফারমার। কৃষকের সম্পদ বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করছি, আমাদের ক্লিয়ারলি সোশ্যাল একটি অবজেক্টিভ আছে এবং এই সোশ্যাল অবজেক্টিভ থাকার সুবিধা হচ্ছে, যারা আমাদের ডিলার বা যারা আমাদের প্রডাক্ট প্রমোট করে বা আমাদের সাথে যারা কাজ করে, তাদের মাথার মধ্যে থাকে এ দেশের মানুষের জন্য, কৃষকের জন্য আমরা কাজ করি। আমি যা করছি, তা কৃষকের জীবনযাত্রায় একটি ভ্যালু অ্যাডিশন ও তাদের ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে। মোটিভেশনটা সব জায়গাতেই কাজ করছে।

আমরা একটা ভিশন দিয়েছি, আমরা কৃষকের সব ধরনের সমস্যার জন্য কমপ্লিট সল্যুশনের জন্য কাজ করছি। তাদের যা যা দরকার তার সমস্ত বিষয় নিয়ে কাজ করছি। অনেকে ঘরের ওপরে কুমড়োর চাষ করছে, কেউ তার পাশের একটি ক্ষেতে বেগুন বা টমেটো চাষ করছে, আবার কেউ কেউ ঘরের পেছনে একটি গরু বেঁধে রেখেছে। এসব বায়োলজিক্যাল প্রডাক্টেও প্রডাক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য তাদের টেকনোলজি দরকার। তাদের জ্ঞানের পাশাপাশি ওষুধপত্র, সার, বীজ লাগে। এ ছাড়া পশু স্বাস্থ্যের জন্য যা যা প্রয়োজন, এমনকি পশুকে যাতে মশা না কামড়ায়, তার জন্য মশারি পর্যন্ত এসিআই প্রভাইড করছে। কোনো গাভি প্রেগনেন্ট হচ্ছে কি না, সেটা জানার জন্যও আমাদের কাছে যন্ত্র আছে। প্রেগনেন্ট যে হলো, সে বিষয়ে আমাদের কাছে স্ক্যানিং মেশিন পর্যন্ত আছে।

কৃষকের ধান কাটার মেশিনও আমরা দিচ্ছি। ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের যন্ত্রও দিচ্ছি আমরা। সব ধরনের শস্যের জন্য আমরা কৃষকদের বীজ দিচ্ছি। এগুলোর ভালো ফলনের জন্য হরমোন দিচ্ছি। তার মানে হচ্ছে, এ দেশের কৃষকের সার্বিকভাবে যা লাগে, সবকিছুর সলিউশন দিচ্ছি। আর আমাদের কৃষি ডিপার্টমেন্টে প্রায় ৪ হাজার কর্মী আছেন। যাঁরা বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন, অনেকে এগ্রি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, আবার অনেকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার অথবা প্যাথোলজিস্ট অথবা এগ্রোলজিস্ট অথবা বায়োলজিস্ট। তাঁরা সবাই কিন্তু কৃষকের সাথে পাশাপাশি থেকে কাজ করছেন। সুবিধা হচ্ছে এই, তিনি যেমন টেকনোলজি দিচ্ছেন, তার সঙ্গে অ্যাডভাইজ দিচ্ছেন এবং প্রোডাক্টের এরিয়া ডেভেলপ করছেন। আমরা বলতে পারি, বাংলাদেশের কৃষককে এসিআই ওয়ান স্টপ সার্ভিস দিচ্ছে। কোনো কৃষক যদি এসিআই এগ্রিবিজনেসের সাথে যুক্ত হন হবেন, তাঁর সব ধরনের সমস্যার সমাধান এর মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।

ডিম-মাংস-মাছ-দুধ উৎপাদনে এসিআই এগ্রিবিজনেস
এসিআই এগ্রিবিজনেসের সবই আছে। যেমন, দেশের লার্জেস্ট পোল্ট্রি খামার আছে আমাদের। সেখানে আমারা মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করছি, মুরগির খাবার উৎপাদন করছি, আমরা মাছের খাবার দিচ্ছি, গরুর খাবার দিচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাছের খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান করেছি। এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় পোল্ট্রি ফিড কারখানা করেছি। আমরা বাংলাদেশে গরুর খাবার উৎপাদন করার জন্য সবচেয়ে বড় কারখানা করেছি। এসব ক্ষেত্রে ইনপুট যেমন দিচ্ছি, তেমনি আমাদের ৯২ জন ভেটেরিনারি ডাক্তার আছেন, ৪০ জন অ্যাকোয়াকালচারার আছেন। তাঁরা কাছাকাছি থেকে সরাসরি কৃষককে সার্ভিস দিচ্ছেন। আমরা যেসব সার্ভিস বা নলেজ শেয়ার করি, সেগুলো বাংলাদেশের ৯০% কৃষক নিচ্ছেন; আমাদের কোনো না কোনো প্রডাক্ট, এগ্রিকালচার রিলেটেড টেকনোলজি অথবা সল্যুশন তাঁরা ব্যবহার করছেন।

সবচেয়ে বড় সমস্যা, কৃষকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কৃষকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা। আমাদের দেশে অনেক গবেষণাগার আছে বা বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সবাই কিন্তু পরিশ্রম করছেন, অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, সায়েন্টিস্ট কাজ করছেন। প্রতিদিন নিত্যনতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে। কিন্তু এসব টেকনোলজি সরাসরি কৃষকের কাছে যেতে পারছে না, অথবা যাচ্ছে অনেক দেরিতে। যখন যাচ্ছে, অলরেডি তখন ওই সব টেকনোলজি আন্তর্জাতিকভাবে বেরিয়ে গেছে, ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে তখন বাইরে থেকে ইমপোর্ট করা ছাড়া উপায় থাকে না। এখন না হওয়ার কারণ কচ্ছে, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রায় ২৫ হাজার কর্মী আছেন, এঁরা সবাই শিক্ষিত এবং ব্রিলিয়ান্ট ওয়ার্কার।

আমাদের লাইভস্টক সার্ভিসে অনেক কর্মী আছেন। ফিশারিতে অনেক কর্মীর দরকার আছে। এনজিওগুলোতেও ১ লাখ ওয়ার্কার আছেন। প্রাইভেট কোম্পানিতে ১ লাখ ওয়ার্কার কাজ করছেন, ৫০ হাজার ডিলার কাজ করছেন। তারপরও এসব টেকনোলজি অনটাইমে ঠিকমতো যাচ্ছে না। তার কারণ হচ্ছে, আমাদের দেশের কৃষক সরাসরি ডিলারের কাছে চলে আসছেন সমাধানের জন্য। সব ডিলার তো সমাধান দিতে পারবেন না। সব ডিলারই তো শিক্ষিত নন বা অনেকেই ট্রেনিং নেননি। যাঁরা ট্রেনিং নিয়েছেন, তাঁরা ভালো অ্যাডভাইস করছেন। আর যাঁরা ট্রেনিং নেননি, তাঁরা নিজের সুবিধামতো তথ্য ও সেবা কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছেন। সমস্যা হচ্ছে, আমরা একদিকে যেমন কিনে নিয়ে যাচ্ছি, আবার তার রিটার্ন রেজাল্টটা আমারা পাচ্ছি না। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কৃষকের কাছে সরাসরি দ্রুত নতুন নতুন টেকনোলজি পৌঁছে দেওয়া।

এক্ষেত্রে সরকারিভাবে সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগও কিছু আছে। যেমন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ডিপার্টমেন্ট হচ্ছে এগ্রিকালচার এক্সটেনশন ডিমার্টমেন্ট। এখানে আমাদের ব্রিলিয়ান্ট ওয়ার্কার আছেন। তাঁদের কমিউনিকেশন ইক্যুইপমেন্ট যদি দেওয়া যায়, তাঁদের মুভমেন্ট যদি প্রপারলি পেট্রল দেওয়া যায়, তাঁদের যদি ঠিকমতো ট্রেনিং দেওয়া যায় এবং মডার্ন ইক্যুইপমেন্ট দেওয়া যায়, তাহলে এসব টেকনোলজি রাতারাতি কৃষকের হাতে চলে যাবে।

ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকার এখন ইফরমেশন সেন্টার করেছে। আমরা সেটাকে ব্যবহার করতে পারি। দেখুন, যখন আমরা করছি জিনিসটা হচ্ছে, কিন্তু অনেক দেরিতে হচ্ছে। আমি আশা করি এসব জায়গা আমাদের জন্য খুবই ইউজফুল হবে। কৃষককেও এসব জায়গায় এসে সার্ভিস নিতে হবে। কৃষক আসছেন কি না, এটা দেখতে হবে। কোয়ালিটিটিভ সার্ভিস কেমন, সেটাও দেখতে হবে। আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে এসব জায়গায় ইনফরমেশন যাবে এবং কৃষকেরাও মটিভেটেড হবেন, উদ্বুদ্ধ হবেন এসব জায়গা থেকে ইনফরমেশন নিতে। আর এসব জায়গা থেকে ইনফরমেশন নিয়ে যদি তাঁরা বেনিফিটেড হন, তবে একজন কৃষক আরেকজন কৃষকের কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই সার্ভিস নিতে আসবেন। সবই কিন্তু আশার কথা।

তা ছাড়া, সাংবাদিক হয়ে আপনি যে কাজটা করছেন, তা একটা ম্যাসিভ কাজ। আমি বলে থাকি, আমাদের দেশে যেসব সাংবাদিক আছেন, কৃষি রিপোর্ট করেন, তাঁরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। আমি মনে করি, আপনি যে সার্ভিসটার কথা ভেবেছেন, সেই সার্ভিসটা কৃষকের মধ্যে একটি ম্যাসিভ সাড়া দেবে। সরাসরি কৃষকের এক্সেস না থাকলেও কৃষকের ছেলে অথবা তাঁর শিক্ষিত প্রতিবেশীর কাছ থেকে এসব ইনফরমেশন পাবে খুব তাড়াতাড়ি। কৃষক এসব দেখে কিন্তু প্র্যাকটিস করবেন এবং তাঁরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন। আমি মনে করি, মিডিয়ার মাধ্যমে যেকোনো ইনফরমেশন কৃষকের কাছে দ্রুত পৌঁছাবে। কৃষক অনেক লাভবান হবেন। আমরা যে মিশনের কথা বলেছি, সেই মিশনটা এচিভ করা খুব সহজ হবে।

এগ্রিবিজনেসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা
আমি ইউনির্ভাসিটি থেকে বের হয়ে প্রথমে একটি বিদেশি কোম্পানি সিবা-গ্যাইগি, এখন সিনজেনটা, ওখানে ১৪ বছর কাজ করেছি। সেকেন্ড কোম্পানি যেটা, সেখানেও প্রায় দুই বছর কাজ করেছি। আর এসিআইতে আমি প্রায় পাঁচ বছর কাজ করছি। আমি বরাবরই কিন্তু এগ্রিকালচার ব্যবসা করি। যদিও আমি পড়াশোনা করেছি বায়োলজিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড জুয়োলজিতে। তারপর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স নিয়ে পড়েছি। আমার ইন্টারেস্ট হওয়ার পেছনে কারণ হলো, আমি ব্যবসা-বাণিজ্য করব। ব্যবসা-বাণিজ্যের পারপাস ছিল যে সরাসরি মানুষের যেন কাজে লাগে। কিন্তু আমি ভাবলাম, আমার মতো একজন লোক ব্যবসা যদি শুরুই করি এবং আমার যে ক্যাপিটাল সেটা দিয়ে খুব একটা সোসাইটিতে ইমপ্যাক্ট আনা যাবে না। তো আমি এমন একটা বিজনেস করব, যেটার পারপাস থাকবে সোসাইটি। এবং তার জন্য যেটা সুবিধা হবে, যথেষ্ট রিসোর্স তারা আমাকে দিতে পারবে, যেটা আমি করতে চাই। তারপরই আমি এসিআইতে যোগ দিই। এবং আমার যা মিশন আর এসিআইয়ের মিশন প্রায় একই। তারা আমাকে যথেষ্ট রিসোর্স দিয়েছে এবং পুরোপুরিভাবে এগুলোকে সাকসেসফুলি ইমপ্লিমেন্ট করতে পেরেছি বছরের পর বছর।

শুধু আমিই না, চার হাজার সায়েন্টিস্ট বলেন আর টেকনোলজিস্ট বলেন, এঁদেরকে নিয়ে একটা ভালো গ্রুপ বা লিডার তৈরি করেছি। তাঁরা মাঠে-ময়দানে কাজটা করছেন। আসলে এনজয়মেন্টের ব্যাপারটা হচ্ছে সাকসেসের সাথে। যখন মানুষ অ্যাচিভ করে, সে যখন সাকসেসফুল হয়, সে তখন এনজয় করে। যেহেতু এসিআইয়ের গ্রোথ ভেরি হাই। মাত্র ৮-৯ বছর আগে আমরা এগ্রিবিজনেসটা শুরু করেছি। তখন টার্নওভার ছিল মাত্র দেড়শ কোটি টাকা, এখন সেটা কয়েক হাজার কোটি টাকা হয়ে গেছে। এই সবকিছুই কিন্তু আমাকে মোটিভেট করে এবং আশা করছি এটা আরও অনেক বেশি বাড়বে এবং বাড়ার সাথে সাথে কৃষকের অনেক বেশি লাভ হবে।
এগ্রিকালচার স্টুডেন্টদের জন্য পরামর্শ

যাঁরা এগ্রিকালচার সায়েন্স নিয়ে কাজ করছেন, আমি মনে করি, তিনি যে সাবজেক্টটা নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাঁর মাইন্ডে যদি এমন কাজ করে যে আমি আমার জন্যও কাজ করছি এবং মানুষের জন্যও কাজ করছি, তাহলে তাঁর ক্যারিয়ার কিন্তু ফাস্ট গ্রো করবে। সোসাইটির লাভটা হবে তাঁর অ্যাক্টিভিটিস, তাঁর স্কিল এবং তাঁর নলেজের কারণে। তাঁরা শুনবেন, বুঝবেন, তাঁরা লাভবান হবেন এবং প্রোডাক্টিভিটিটা অনেক বেড়ে যাবে। যখন সোসাইটির গ্রোথ হবে, তিনি কিন্তু বেনিফিটেড হবেন, নিজেরও গ্রোথ হবে এবং ক্যারিয়ারটা অনেক অনেক ওপরে চলে যাবে। মূল কথা হচ্ছে, যাঁরা এগ্রিকালচার সায়েন্স নিয়ে পড়ছেন তাঁদের সোসাইটির জন্যও কাজ করার কথা ভাবতে হবে।


আজকের বাজার-এর জন্য শুভকামনা
আজকের বাজার এবি টিভির যেহেতু যাত্রা একটু ভিন্নধর্মী এবং অত্যন্ত ব্রড বেইজড। আমি মনে করি, এবি টিভি ঘটনা অনেক সহজে প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে। আমরা যারা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি, আমরাও এবি টিভির সাথে সম্পৃক্ত হব। আমাদের টার্গেট গ্রুপের টেলিফোন নম্বরগুলো এবি টিভির কাছে সরবরাহ করব। তাতে সুবিধা হবে এই, যেসব বিষয় কমিউনিকেট করতে চায়, অতি অল্প সময়ে আমরা তার পেনিট্রেশন পাব এবং অত্যন্ত কার্যকর একটা সুফল পাওয়া যাবে। আমি এবি টিভির, আজকের বাজার-এর যাত্রা অত্যন্ত সুন্দরভাবে হোক কামনা করি। এবং সর্বতো সহযোগিতার জন্য পুরোপরি আশ্বাস দিচ্ছি।