টেস্টে ২০ বছরেও প্রত্যাশিত সাফল্যের দেখা মেলেনি বাংলাদেশের

দশম দেশ হিসেবে টেস্ট ম্যাচ খেলার মর্যাদা অর্জনের পর ২০ বছরের দীর্ঘ যাত্রা পূর্ণ হলেও, বেশির ভাগ পর্যবেক্ষক একমত হবেন যে এখনও ক্রিকেটের সর্বোচ্চে এ ফরম্যাটে নিজেদের প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি টাইগাররা।

বাংলাদেশ এ দুই দশকে ১১৯ টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে মাত্র ১৪ ম্যাচে বিজয়ী এবং ৮৯ ম্যাচে পরাজিত হয় টাইগাররা। এছাড়া ড্র হয় বাকি ১৬ ম্যাচ।

টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের ১২ দলের মধ্যে কেবল জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই দুইবারের বেশি পরাজিত করেছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তান, ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নবাগত আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখনও কোনো জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ।

এসব পরিসংখ্যান থেকে প্রতীয়মাণ হয় যে টাইগাররা এখনও প্রত্যাশিত সেই সাফল্য পায়নি যা পাঁচ দিনের ক্রিকেট ফরম্যাটে তাদের আরও ভালো নৈপুণ্যকারী দল হওয়ার দিকে এগিয়ে নিতে পারে।

ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২০০০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রান তুলে টেস্ট ফরম্যাটে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার গৌরব অর্জন করা সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, কঠোর পরিশ্রম এবং যোগ্যতার ভিত্তিতেই বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত স্তরে প্রবেশ করার মর্যাদা অর্জন করে এবং সেটি প্রমাণ করার জন্য ওই ম্যাচের আলাদা গুরুত্ব ছিল।

ইএসপিএনক্রিকইনফো প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় আমিনুল বলেন, ‘আমরা একটি অনভিজ্ঞ দল ছিলাম। ২০০০ সালে আমাদের অভিষেক টেস্টের আগে আমরা পাঁচ দিনের কোনো ম্যাচ খেলিনি। সুতরাং এটি আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের মনে কেবল এ চিন্তা ছিল যে আমাদের ভালো খেলতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে যে আমরা টেস্ট মর্যাদা অর্জন করেছি।’

অভিষেক টেস্টে ভালো করার সেই চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ দলের অনন্তকালীন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনও জয় উপহার দেয়ার পরিবর্তে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো খেলার আশা করছে টাইগাররা।

টেস্ট অভিষেকের ২০ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা কয়েকটি টেস্ট ম্যাচে ভালো করেছি, তবে তবুও আমি বলতে চাই যে ধারাবাহিকতার অভাবে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা বছরের পর বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছেন, তবে দল হিসেবে আমরা এখনও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ এ ফরম্যাটে কাঙ্ক্ষিত ধারাবাহিকতা খুঁজে পাইনি।’

টেস্ট ফরম্যাটে ধারাবাহিকতা না পাওয়ার ক্ষেত্রে চলমান সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে বলে নিজের বিশ্বাসের কথা জানান বর্তমানে সংসদ সদস্য নাইমুর রহমান। একই সাথে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা পাঁচটি দলের একটি হয়ে উঠবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নাইমুর আরও বলেন, ‘আমি আশা করি বাংলাদেশ ফরম্যাটের (টেস্ট ক্রিকেট) সেরা পাঁচটি দলের অন্যতম হয়ে উঠবে এবং এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য, আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে। সমস্যাগুলো খুঁজে বের করার পাশাপাশি সমাধানও বের করতে হবে।’

দলের আরেক সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশারও বিশ্বাস করেন যে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছে। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ দলে বেশ কয়েকজন ম্যাচ-উইনার এবং বিশ্বমানের পারফর্মার রয়েছে। তবে ধারাবাহিকতার অভাবেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেখুন, টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম চার বছর আমাদের জন্য একটি শিক্ষার পর্ব ছিল। সেই সময় আমাদের মাঠে লড়াই করতে হয়েছে এবং এটাই ছিল স্বাভাবিক। তবে এর পরে, আমরা শিখেছি কীভাবে খেলাটির দীর্ঘতর ফরম্যাটটি খেলতে হয়।’

‘আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স করা শুরু করেছি। রেকর্ডের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, অনেক বিশ্বমানের পারফরম্যান্স রয়েছে আমাদের, যেমন রয়েছে অনেক বিশ্বমানের ক্রিকেটার,’ বলেন হাবিবুল বাশার।

এ সময় কিছু ম্যাচের উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি।

তবে ২০ বছরেও টেস্টে বাংলাদেশ যে তাদের প্রত্যাশিত সফলতা পায়নি সেটি স্বীকার করে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘যেমন হতে চাই তেমন ধারাবাহিক আমরা নই। দলে কিছু ম্যাচ উইনার থাকলেও আমরা জিততে ব্যর্থ হয়েছি। টেস্টের অসঙ্গতি নিয়ে আমি সত্যিই উদ্বিগ্ন।’

২০ বছরের টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের কিছু মূল পরিসংখ্যান:

ম্যাচ: ১১৯টি

জয়: ১৪টি

পরাজিত: ৮৯টি

ড্র: ১৬টি

সর্বাধিক জয়: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে (৭ ম্যাচ)

সর্বাধিক পরাজয়: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (১৬ ম্যাচ)

কোনো জয় নেই: পাকিস্তান, ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

সর্বাধিক রান: মুশফিকুর রহিম (৪,৪১৩)

সর্বাধিক শতক: তামিম ইকবাল এবং মমিনুল হক (৯টি করে)

সর্বাধিক ব্যক্তিগত সংগ্রহ: মুশফিকুর রহিম (২১৯*)

সর্বাধিক উইকেট: সাকিব আল হাসান (২১০)

সর্বাধিক পাঁচ উইকেট দখল: সাবিক আল হাসান (১৮ বার)

এক ইনিংসে সেরা বোলিং: তাইজুল ইসলাম (৮/৩৯)