ঠাকুরগাঁওয়ের রহিজুলের ভাগ্য বদলেছে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে

অভাব-অনটনের সংসারে খুব বেশি পড়ালেখার সুযোগ পাননি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া ইউনিয়নের রহিজুল ইসলাম। কিন্তু অভাব-অনটনের সংসারে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বেকার হয়ে বসে থাকেননি। বেকারত্ব দূরে নিজেই ছোট্ট পরিসরে শুরু করেন মুরগি ও কবুতরের পালন। একে একে একাধিক খামার গড়ে তোলেন। খামার করার মাধ্যম্যে রহিজুল নিজের যেমন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন তেমনি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তবে তার ভাগ্য বদলে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প। জানা যায়, নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ হয়েছে রহিজুলের। মাত্র ১৪ বছর বয়সে ২০১২ সালে বাবা বশির উদ্দিনকে হারিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয় তাকে। নয় ভাই-বোনের মধ্যে রহিজুল তৃতীয়। তবে অভাব অনটনের মাঝেও হতাশ হয়ে বসে থাকেননি রহিজুল। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সহায়তায় মাধ্যম্যে নিজের ভাগ্য বদলের চেষ্টা করে অনেক পরিশ্রমের পর সফল হয়েছেন। হয়েছেন সফল মুরগি ও কবুতর পালনকারী উদ্যোক্তা হিসেবেও। স্বাবলম্বী রহিজুল ইসলাম বলেন, আমার বয়স যখন ১৪ থেকে ১৫ হবে, তখন বাবাকে হারিয়েছি। পাঁচ বোন ও চার ভাইয়ের মধ্যে আমি তৃতীয়। বড় দুইভাই বিয়ে করে নিজেদের মতো করে সংসার করছেন। তাই আমার পড়ালেখার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। আর বাবা না থাকায় নিজেকেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে।

তিনি বলেন, রোজগার বাড়াতে চিন্তা করলাম কাজের পাশাপাশি মুরগি-কবুতরের খামার করবো। কিন্তু আমি ছোট মানুষ বলে কেউ ঋণ না দেওয়ায় অর্থের অভাবে থেমে যায় সেই চিন্তা। এর পর ২০১৫ সালে পাশের বাড়িতে ‘আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের’ উঠান বৈঠক হচ্ছিলো। সেই বৈঠকে যোগ দিলাম। সেখানে বালিয়া ইউনিয়নের ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহাদাত হোসেন ভাই খামার করতে আমাকে উদ্বুদ্ধ করেন এবং প্রকল্পের আওতায় ঋণ দিয়ে সহযোগিতা করেন। এরপর সেখান থেকে ঋণ নিয়ে আমি ছোট পরিসরে মুরগি পালন শুরু করি ২০১৫ সালে। এভাবে ধীরে ধীরে মুরগির খামার, মুরগির খামার থেকে পুঁজি করে এখন আরেকটি কবুতরের খামার দিয়েছি। এখন দুটো খামারের আয় দিয়ে আল্লাহ রহমতে ভালো আছি। আমার যে কবুতরের খামারটি রয়েছে তাতে বেশিভাগেই বিদেশি কবুতর। যার জোড়া বাজারে বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। মুরগি ও কবুতরের খামার থেকে গড়ে প্রতিমাসে আমার ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। আমি নিজে স্বাবলম্বী তো হয়েছি পাশাপাশি আরো দু’জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছি আমার খামারে। আমার ইচ্ছা নিজের ব্যবসা বড় করার পাশাপাশি এ আরো খামার বড় করে আরো অনেক মানুষের কর্মসংস্থান করবো।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমি টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারিনি। তাই সন্তানদের পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আমার বাড়ি আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপজেলা সমন্বয়কারী আলাউল ইসলাম জানান, আমার বাড়ি আমার খামার ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য। আমরা অসহায় দরিদ্রদের অল্প সুদে ঋণ দিয়ে খামার, সবজি চাষ, হাঁস-মুরগি-গাভী পালনসহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। রহিজুল তো তার কর্মগুণে আমাদের প্রকল্পে সহায়তা নিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেই। পাশাপাশি সে অন্যের কর্মসংস্থানও করেছে। রহিজুলের মতো অনেক বেকার যুবক এ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করেছেন।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের উপজেলা পর্যায়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এর মাধ্যম্যে দেশের লাখ লাখ বেকার তরুণ প্রশিক্ষণ ও লোন নিয়ে নিজেদের বেকারত্ব দূর করছে। আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এর মাধ্যম্যে লোন নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়া ইউনিয়নের রহিজুল ইসলাম নিজে যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন তেমনি নিজের বেকারত্ব ঘুচিয়ে অন্যের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এটা তরুণ বেকারদের জন্য একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঠাকুরগাঁওয়ের বেকার তরুণ যুবকরা রহিজুলের থেকে শিক্ষা নিয়ে খামার করতে পারে আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের সহায়তা নিয়ে বা নিজেকে উদ্যেক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে বিভিন্ন ট্রেডে। দেশের হাজার হাজার বেকার তরুণ আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যম্যে নিজেদের দারিদ্র দূুরীকরণসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করে যাচেছ বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার দারিদ্র বিমোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণের নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে আমার বাড়ি ও আমার খামার প্রকল্প অন্যতম। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান